নিরাপত্তার আড়ালে কি সত্যিই সুরক্ষা? জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের নতুন মোড়
- FB
- TW
- Linkdin
আজ আমাদের আন্দোলন ৩৯ দিন পেরিয়েছে। আমাদের আন্দোলন আর পাঁচদফা দাবির জন্য দীর্ঘ সময়ে বহু অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূতভাবে ব্যবহারের চেষ্টা, বিচার নয় চেয়ার চাওয়ার মিথ্যে অভিযোগ, ইমেল, অডিওক্লিপ দিয়ে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা ও আমাদের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হয়েছে বারবার।
গতকাল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের সুদীর্ঘ আলোচনায় পাঁচদফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তার আংশিক কয়েকটি পূরণও হয়েছে। আমরা খুব স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছি অভয়ার ন্যায়বিচারের পথে যে বাধাগুলি ক্রমাগত এসেছে এবং যার জন্য ন্যায় বিচার আসতে এতটা দেরী হচ্ছে।
ঠিক সেই কারণেই আমরা CP, DCP North, DCP Central, PS(H), DHS, DME, এই ছয়জনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি রেখেছিলাম। আমাদের আন্দোলনের চাপে নতিস্বীকার করে কলকাতার নগরপাল, DC north, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তাকে রাজ্য প্রশাসন তাদের পদ থেকে সরাতে বাধ্য হয়েছেন, এটিকে আংশিক হলেও আমাদের আন্দোলনের জয় হিসেবেই আমরা দেখছি।
কিন্তু প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির অপসারণের প্রসঙ্গে কোনও সিদ্ধান্ত এই মিটিংয়ে নেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে সদর্থক মৌখিক আশ্বাস দিলেও এ সম্মন্ধে কোনও পদক্ষেপ আমরা এখনো দেখতে পাইনি।
সুরক্ষা বিষয়ে রাজ্যের সমস্ত পদক্ষেপ আজকে সুপ্রিমকোর্টেও ভর্ৎসিত হয়েছে। রাজ্যসরকারের “অপরাজিতা আইন”-এর আড়ালে যে নারীবিদ্বেষ ও মধ্যযুগীয় মানসিকতা লুকিয়ে রয়েছে তা আজ সুপ্রিমকোর্টের সামনে সুস্পষ্ট হয়েছে।
রাতে ডিউটি না দিয়ে, দিনে বারো ঘণ্টার কম ডিউটি দিয়ে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে যে মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয় তা রাজ্যের কৌঁসুলি কপিল সিব্বলও বলতে বাধ্য হয়েছেন এবং এই বিধান দু’টি সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন।
রাজ্যের সুরক্ষা সম্মন্ধে দ্বিতীয় পদক্ষেপ, অর্থাৎ সাতদিনের ট্রেনিংয়ে সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ করা নিয়েও আমাদের প্রবল আপত্তি রয়েছে এবং সুপ্রিমকোর্টেও ঠিকা কর্মচারী দিয়ে জোরাতালি দেওয়া এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা যে একেবারেই উপযুক্ত নয় তা স্পষ্ট হয়েছে এবং যেই ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা শুনিয়ে হাসপাতালে নিরাপত্তার যুক্তি খাড়া কড়া হচ্ছে তারও কোন খতিয়ান রাজ্য দিতে পারেনি।
আমরা আমাদের ৪ নম্বর দাবিতে আগেই বলেছিলাম, রোগীস্বার্থ তথা স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত না করা গেলে শুধুমাত্র নিরাপত্তা বাড়িয়ে হাসপাতালগুলিতে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমরা সেই জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় রেফারাল ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা, যথাযথ সংখ্যাতে নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী-জিডিএ নিয়োগ, চুক্তিভিত্তিক কর্মীনিয়োগ বন্ধ করে স্থায়ী কর্মীনিয়োগ,সমস্ত সিঙ্গল প্রিক ব্যবস্থা চালু করা, পেশেন্ট কাউন্সিলিং এর সময় প্রফেশনাল কাউন্সিলর নিয়োগ করা সহ একগুচ্ছ দাবী করেছিলাম।
হাসপাতালগুলিতে বেড নিয়ে দুর্নীতি , জীবনদায়ী ওষুধ পাওয়ার সমস্যা, সাধারণ মানুষকে নিত্যদিন এগুলির সম্মুখীন হতে হয়। আমরা সুরাহা চাই এই সমস্ত সমস্যার। নিরাপত্তা সহ এই সমস্ত দাবীগুলিকে সমস্ত সরকারি হাসপাতাল/মেডিকাল কলেজগুলিতে লাগু করার জন্য আমরা কলেজ ভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠনেরও দাবী জানিয়েছিলাম মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
অথচ এই বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে শুধুমাত্র একটি রাজ্যস্তরের টাস্ক ফোর্স গঠনের আশ্বাস আমরা পেয়েছি। কী করে এই দাবীগুলি পূরণ হবে, কী ভাবে টাস্ক ফোর্স মেডিকাল কলেজ/হাসপাতালগুলির স্তরে প্রয়োজনীয় রদবদল ঘটাবে, তা এখনো আমাদের কাছে অস্পষ্ট৷
আমরা চাই, অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজ্য ভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করার নোটিশ জারী করা হোক, এবং তার তত্ত্বাবধানে প্রতিটি মেডিকাল কলেজ/হাসপাতাল স্তরে কলেজ ভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করা হোক জুনিয়র ডাক্তারদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব সহ৷
আমাদের ৫ নাম্বার দাবীতে আমরা উল্লেখ করেছিলাম কলেজে কলেজে ভয়ের রাজনীতি বন্ধ করে ছাত্রছাত্রী ইউনিয়ন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং মেডিকাল কলেজ/হাসপাতালের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক বডিগুলিতে নির্বাচিত ছাত্রছাত্রী ও জুনিয়র ডাক্তারদের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের অবস্থান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মৌখিক ভাবে রোগীকল্যাণ সমিতিগুলিকে ভেঙ্গে দেওয়ার ঘোষণা করলেও বাস্তবত কোনো লিখিত নোটিশ আমরা পাইনি, কীভাবে নতুন করে এই সমিতিগুলোকে গঠন করা হবে, তাও আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়নি।
আমরা প্রতিটি মেডিকাল কলেজের রেসিডেন্ট ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনগুলোর আইনী স্বীকৃতিও এখনো পাইনি। আমরা দ্রুত এই দাবীগুলো পূরণের দাবী জানাচ্ছি। আমরা চাইছি দ্রুত রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের উপরোল্লিখিত দাবীগুলিকে পূরণ করুক। আমরা কাজে ফিরতে চাই, আমরা চাই এই অচলাবস্থা দ্রুত কাটুক।