সংক্ষিপ্ত
কোনও কনভয় ছিল না এদিন মমতার সঙ্গে। দেরি যাতে না হয়, তার জন্য নিজের গাড়ির অপেক্ষা করেননি মমতা। উঠে পড়েন এক পুলিশ কর্মীর মোটরবাইকে। ফের একবার মানবিক মুখ মুখ্যমন্ত্রীর দেখল গোটা রাজ্য তথা দেশ।
এই ছবি রাজ্যের মানুষকে আর অবাক করে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সাধারণ একটা হেলমেট পরে বাইকে সওয়ার। নিরাপত্তাহীন অবস্থায় ছুটছেন এক চিত্র সাংবাদিকের অসুস্থতার খবর নিতে। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারবার এই ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আর এই ছবিই তাঁকে বানিয়েছে জননেত্রী। মানুষের মাঝে আজও স্বছন্দে মিশে যেতে কোথাও অসুবিধা হয় না তাঁর। মমতার একসময়ের মেন্টর ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় খোদ একবার বলেছিলেন মমতার একটা আলাদা ক্যারিশমা আছে। মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি নিজের দিকে টেনে নিতে পারে ও।
কংগ্রেসের চাণক্যের কথাটা মিথ্যে ছিল না। আজও কার্যত তৃণমূল দলকে একা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মমতা। বৃহস্পতিবার এক অনবদ্য ছবির সাক্ষী ছিল শহর। দিল্লিতে কুস্তিগীরদের ওপর অত্যাচারের ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিল ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তীব্র গরমে সেই অনুষ্ঠান কভার করতে আসা এক বৈদ্যুতিক সংবাদমাধ্যমের চিত্র সাংবাদিক আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ ওই সাংবাদিককে পুলিশের গাড়ি করে হাসপাতালে পাঠান। নিজেও বেরিয়ে পড়েন তাঁর শারীরিক সুস্থতা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে।
তবে কোনও কনভয় ছিল না এদিন মমতার সঙ্গে। দেরি যাতে না হয়, তার জন্য নিজের গাড়ির অপেক্ষা করেননি মমতা। উঠে পড়েন এক পুলিশ কর্মীর মোটরবাইকে। ফের একবার মানবিক মুখ মুখ্যমন্ত্রীর দেখল গোটা রাজ্য তথা দেশ। তবে এই ছবি যে নতুন নয়, তা সবাই জানেন কমবেশি। কারণ, এর আগেও পেট্রল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে স্কুটারে চেপে নবান্নে পৌঁছেছিলেন মমতা। অবশ্য সেটা ছিল পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি।
৩৪ বছরে বামশাসনের ভিত ওপড়ানোর ডাক দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের নীতি বা বিশ্বাসযোগ্যতার চেয়ে বাম-বিদ্বেষই সেবারের ভোটে মূল চালিকা শক্তি ছিল। ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বামেদের চলা পথ অনুসরণ করেছেন, কখনও বা অতিবাম রাজনীতি করেছেন। তবে মানুষের পাশ থেকে সরে গিয়েছেন বলে মনে পড়ে না দুঁদে রাজনীতিবিদদেরও। দুর্নীতি ইস্যু প্রায় কোণঠাসা তৃণমূল আজও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে সেই নীল পাড় সাদা শাড়ি আর হাওয়াই চপ্পলের হাত ধরে। যার শুরু হয়েছিল বামেদের ৩৪ বছরের দুর্ভেদ্য গড় ভেঙে রাজ্যকে নতুন স্বপ্ন দেখানোর রাস্তা দিয়ে। কার্যত নন্দীগ্রামে কৃষকদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে মমতা হয়ে ওঠেন রাজ্যের জনপ্রিয় নেত্রী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন পশ্চিমবঙ্গে একটা সময় ছিল যে লোকে ভাবতো বামফ্রন্টকে কেউ হটাতে পারবে না। কিন্তু তাদের মোকাবিলা করার নেতৃত্ব এবং সাহস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখাতে পেরেছিলেন। আর ভূমি অধিগ্রহণের ইস্যুটিতে তিনি সাধারণ মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বামফ্রন্টের চাইতে বেশি আসন পায় তৃণমূল।
আর তার দু'বছর পর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সাথে জোট বেঁধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল রাজ্যে ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতাসীন থাকা বামফ্রন্টকে হারায়। মমতা হন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এরপর থেকে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় রয়েছেন। ভিত নড়েছে, গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে প্রচুর জল। তবে তৃণমূলের জয়যাত্রার ভিতের খুঁটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টলানো যায়নি। কারণ তাঁর শিকড় ছড়িয়ে মানুষের ভিতরে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যাঁকে বলেছেন প্রকৃত জননেত্রী।