সংক্ষিপ্ত
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ও তৃণমূল কংগ্রেসের অস্বস্তি কমছে না। নিয়োগ দুর্নীতি মামলা থেকে কয়লা কেলেঙ্কারি-একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে সমানে তাদের একের পর এক নেতাকে সমন পাঠাচ্ছে ইডি। এবার নিশানায় সায়নী।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সমন গেল সায়নী ঘোষের কাছে। ইডি সূত্রে খবর ২৭ জুন সন্ধ্যায় এই সমন পাঠানো হয়েছে। ৩০ জুন অর্থাৎ শুক্রবার সায়নী ঘোষকে ইডি-র দফতরে হাজিরা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এর আগে চোরাগোপ্তাভাবে সায়নী ঘোষের নাম সামনে এসেছিল। কিন্তু, প্রকাশ্যে সায়নী এমন কোনও দুর্নীতিতে তাঁর জড়িত থকার কথা অস্বীকার করেছিলেন। আর পরিষ্কারভাবে অভিযোগকারীদের অভিযোগ প্রমাণ করতে চ্যালেঞ্জও জানিয়েছিলেন সায়নী।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন তৃণমূল কংগ্রেসের এক যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। এই কুন্তল ঘোষকে জেরা করেই বিভিন্ন প্রভাবশালীর নামের হদিশ পেয়েছে ইডি। এই জেরাতেই পাওয়া অন্যান্য প্রভাবশালী নামের মধ্যে সায়নী ঘোষের নাম ছিল বলেও বারবার ইডি জানিয়েছিল।
এখন পর্যন্ত যা খবর তাতে শুক্রবার সকাল ১১টায় সল্টলেকে ইডির দফতরে সায়নী ঘোষকে জেরা করা হবে। প্রাথমিক টেট দুর্নীতি নিয়ে এই সওয়াল-জবাব হবে বলে ইডি সূত্রে খবর। শুধু যে কুন্তল ঘোষের মুখেই সায়নীর নাম পাওয়া গিয়েছে এমনটা নয়, প্রাথমিক টেট দুর্নীতি মামলায় আরও যারা গ্রেফতার হয়েছেন এবং যে সব বিভিন্ন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে তাতেও নাম উঠেছে সায়নী ঘোষের। ইডি-র দাবি, এখন পর্যন্ত যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে সায়নী ঘোষের সঙ্গে এই দুর্নীতি মামলায় এক ভালোরকম আর্থিক লেনদেনের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। এমনকী, সায়নীর সঙ্গে অভিযুক্তর বেশকিছু বৈঠকের তথ্যও সামনে আসছে।
একাধিক জেরা এবং তথ্য তালাশে ইডি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সায়নীর ভালোরকম সংযোগ পেয়েছে বলেই দাবি করা হচ্ছে। কেন এতবার সায়নীর নাম উঠছে, কেনই বা অনৈতিক আর্থিক লেনদেনে তাঁর নাম জড়াচ্ছে? এমনই সব বিষয় নিয়ে সায়নী ঘোষকে জেরা করতে চাইছে ইডি। আর সেই কারণেই শুক্রবার ইডি-র দফতরে যদি সত্যি সত্যি সায়নী হাজিরা দেন তাহলে তাঁর বয়ান একদিকে যেমন রেকর্ড করা হবে, তেমনি যে সব অনৈতিক আর্থিক লেনদেনে সরাসরি তাঁর যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে তা নিয়েও তৃণমূল যুবনেত্রীর কাছে জবাব চাইবে ইডি।
শুক্রবার তিনি ইডি-র দফতরে হাডিরা দেবেন কি না তা নিয়ে সায়নী ঘোষের তরফে এখনও কোনও বয়ান বা বিবৃতি দেওয়া হয়নি। সায়নী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এর আগেও তাঁর সাফাই দিয়েছেন জবসমক্ষে। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন অভিযোগকারীদের। সায়নী ঘোষের একটি নতুন ফ্ল্যাট কেনায় তৃণমূল কংগ্রেসের বহিষ্কৃত নেতা কুন্তল ঘোষের আর্থিক বিনিয়োগের অভিযোগও সামনে এসেছিল। এই অভিযোগকে নসাৎ করেছিলেন সায়নী।
প্রায় এক দশক আগে বাংলা চলচ্চিত্রে একজন উচ্চাকাঙ্খি অভিনেত্রী হিসাবে যাত্রা শুরু করেছিলেন সায়নী। প্রথম দিকে কিছু নামী প্রোডাকশনের ব্যানারে অভিনয় করলেও সেভাবে কল্কে পাননি। কলেজে পড়ার সময় থেকেই বামপন্থী রাজনীতির একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু, শিবলিঙ্গে কন্ডোম পড়ানোর ছবি টুইট করে বিজেপি এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তিনি। এরপরই রাতারাতি প্রচারের আলোয় চলে এসেছিলেন সায়নী। সেই সময় তাঁর গরম গরম মেজাজে কথা বলার ভঙ্গিমা তাঁকে ফের রাজনীতির বির্তকের মঞ্চে জায়গা করে দেয়। আর আচমকাই তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে শুধু যোগ দেওয়া নয় ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে গিয়েছিলেন। নির্বাচনে হার হলেও তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে আরও বেশি করে জড়িয়ে পড়েন এবং তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে তাঁর উত্থান ছিল মিব়্যাকলের মতো। রাতারাতি বহু টাফ-প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের যুব শাখার প্রধান নির্বাচিত হন। এখন দেখার সায়নীর রাজনৈতিক কেরিয়ারের এই বৃহস্পতির তুঙ্গ দশায় ইডি-র সমন আদৌ তাঁকে কোনও অস্বস্তিতে ফেলতে পারে কি না!