সংক্ষিপ্ত
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদ জেলাতে পর্যটনে জোর দিতে একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার প্রকল্পের শিলান্যাসও করেন।
উত্তরবঙ্গে (North Bengal) প্রশাসনিক বৈঠক শেষ করে বুধবার বিকেলে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) উদ্দেশ্যে আকাশ পথে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে হেলিকপ্টার থেকে অবতরণ করে সদর শহর বহরমপুরের রবীন্দ্র সদনে প্রশাসনিক আধিকারিক সহ জনপ্রতিনিধি বিধায়ক, সাংসদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে একাধিক বিষয়ের মধ্যে পর্যটন, বিড়ি শ্রমিক, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
সেক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদ জেলাতে পর্যটনে জোর দিতে একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার প্রকল্পের শিলান্যাসও করেন, গ্রামীণ সড়ক যোজনার অধীনে ১৩টি রাস্তার উদ্বোধন করেন। বেশ কয়েকটি সেতু শিল্যানাস হয়। ভগবানগোলা, সাগরদিঘী নওদায় কয়েকটি রাস্তার, ১১টি কমিউনিটি বাথরুমের শিলান্যাস। বহরমপুর পৌরসভার ১১টি পৌর স্বাস্থ্য কেন্দ্র গঠনের সূচনা হয় এদিন।
গোরাবাজার ও খাগড়াতে বৈদ্যুতিক চুল্লি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে সেই দুটি সংস্কারের জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। শুধু তাই নয় জেলার আর্থ সামাজিক পরিকাঠামোর উন্নয়নের উপর জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষত বিড়ি শ্রমিকদের বিষয়ে এদিন গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
বিড়ি শিল্পের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে মুর্শিদাবাদের অর্থনীতির অবস্থা। বহু মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে পরোক্ষ কিংবা প্রত্যেক্ষ ভাবে যুক্ত। কিন্তু কেন্দ্রের নতুন নীতি ও তামাকজাত বিষয়ে একগুচ্ছ নিয়মের জন্য ধুঁকছে বিড়ি শিল্প। সঙ্গে দীর্ঘ লকডাউনে পশ্চিমবঙ্গে এই শিল্পের হাল খারাপ। মুর্শিদাবাদে বুধবারের প্রশাসনিক বৈঠকে সেই বিষয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অবগত করেছেন সেখানকার বিধায়ক ও সাংসদরা। যাতে রীতিমত উদ্বিগ্ন হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই বিষয়ে তিনি সাংসদ আবু তাহেরকে নির্দেশ দেন, ‘ডেরেককে সঙ্গে নিয়ে সংসদে বিষয়টা তুলতে হবে। জাতীয় স্তরে আন্দোলন করতে হবে। তোমরাও খলিলুর ও জাকিরকে নিয়ে আন্দোলন কর"। এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন মুর্শিদাবাদে একটি আলাদা হাসপাতাল তৈরি করা হবে শ্রমিকদের জন্য। মুর্শিদাবাদে একটি হাসপাতাল থাকলেও সেখানে চিকিৎসা ভালো হয় না, তাই বিড়ি শ্রমিকদের জন্য একটি আলাদা হাসপাতাল গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যেহেতু বিড়ি শ্রমিকদের বেশিরভাগই গরীব ও দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসেন, তাই তাদের আর্থিক দিকের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিভাগে যেমন রেলের কর্মচারী কিংবা সেনাবাহিনীতে থাকলে আলাদা হাসপাতাল গড়া হয়। তেমনই শ্রমিকদের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইএসআই হাসপাতাল গড়া হয়। তেমনই পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবারের জন্য বিড়ি শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে আলাদা হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুর্শিদাবাদের প্রশাসনিক বৈঠকে সেই বিষয়ে ঘোষণা করেছেন মমতা। স্বাস্থ্য দফতরের অর্থনাকুল্যে গড়া হবে এই হাসপাতাল। মূলত ইএসআই-এর ধাঁচেই হবে এই হাসপাতাল। ১ টাকার বিনিময়ে প্রেস ক্লাবকে জমি দেওয়ার নির্দেশ দেন মমতা। পাশাপাশি এদিন আবেগ তাড়িত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন," এমন কিছু নেতা আছে নিজে গেলে ৫০০ গাড়ি নিয়ে যায়, রাস্তা বন্ধ করে দেয়। আমি সেটা করিনা, আমি চাই আমিও যাব মানুষও যাবে, জানালেন মমতা। কেন্দ্র কোনও কথা শোনে না, দেখুন না গঙ্গা ভাঙন রোধ করতে পারল কী? আমি বললেই হবে না। রাজ্যের মাধ্যমে কীভাবে বন্দর করা যায় ছোট ছোট ভাগীরথীর ওপরে তা দেখুন"।
তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন,"অহংকার করবেন না মানুষকে নিয়ে এগিয়ে চলুন, মানুষের পাশে থাকুন"। যদিও এদিনের বৈঠকে মুর্শিদাবাদের গেরুয়া শিবিরের বিরোধী দুই বিধায়ক বহরমপুরের সুব্রত মৈত্র ও মুর্শিদাবাদের গৌরী শংকর ঘোষ আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গৌরীশংকর বলেন, এই বৈঠককে মুখ্যমন্ত্রী দলের বৈঠকে পরিণত করেছেন সেই জন্য বিরোধী কোনো কণ্ঠস্বরের মতামত রাখতে তিনি চাননি। এটা অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসকের নমুনা"।