সংক্ষিপ্ত
- পেশার কারণে তাঁকে বাইরে ব্যস্ত থাকতে হয়
- কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন বাবা
- ফাঁকা বাড়িতে একা থাকতে থাকতে অবসাদে ভুগছেন মা
- তাঁর জন্য সঙ্গীর খোঁজে ফেসবুকে পোস্ট দিলেন চন্দননগরের এক যুবক
যুগ বদলেছে, বদলেছে মানসিকতাও। নিঃসঙ্গ মায়ের জন্য 'সঙ্গী'র খোঁজ করছেন ছেলেই। এবার মায়ের ছবি-সহ ফেসবুকে পোস্ট দিলেন এক বাঙালি যুবক। ফেসবুকে পোস্ট তিনি লিখেছেন, 'জানি হয়তো কেউ খিল্লি করবেন, কারোও মনে হবে আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না। আমি চাই, আমার মা নতুন জীবন পাক। আমি চাই আমার মা একজন ভালো বন্ধু ও ভালো সঙ্গী পান।' আগ্রহীদের ইনবক্সে অথবা তাঁর মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছেন ওই যুবক।
সন্তানদের ভালোভাবে বড় করতে তুলতে চেষ্টার কোনও কসুর করেন না বাবা-মায়ের। এমনকী স্রেফ সন্তানের মুখ চেয়েই নিজেদের শখ, ভালোলাগাকেও বিসর্জন দেন তাঁরা। সেই সন্তান একদিন বড় হয়, কর্মজগতে ব্যস্ততা বাড়ে। তখন আর বাবা-মায়ের দিকে তাকানোর সময় থাকে না তাঁর। অনেকেই আবার কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে, এমনকী, বিদেশেও চলে যেতে হয়। তখন সময় কাটানো দূর তো, কখন কখনও বাবা-মায়ের অভাব-অভিযোগ মেটানোর বা ইচ্ছেপূরণ করারও ফুরসত থাকে না। ছেলে-মেয়ে বড় হওয়ার পর নিঃসঙ্গতা গ্রাস করে অনেকে দম্পতিকেই। একাকীত্ব কুড়ে কুড়ে খায় অনেকেই। এমনকী, মানসিক অবসাদের শিকার হওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। স্বামী বা স্ত্রী সঙ্গে থাকলে, তবুও সমস্যার কিছুটা সুরাহা হয়। কিন্তু, বাবা কিংবা মা, কেউ যদি সঙ্গীহীন হন, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবহেলা কিংবা খেয়াল রাখতে না পারাকে মেনে নিতে পারেনি অনেকেই। এমনই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন চন্দননগরের গৌরব অধিকারী। মায়ের জন্য সঙ্গীর খোঁজে ছবি-সহ ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
ফেসবুকে পোস্টে গৌরব লিখেছেন,' আমার মায়ের নাম দোলা অধিকারী, বয়স ৪৫। আমার বাবা প্রয়াত হন ২০১৪ সালে। মা সেই থেকে একা। আমি কর্মসূত্রে বেশিরভাগ সময়ই বাইরে ব্যস্ত থাকি। আমার দিন যাপনে আগের মতো মাকে সময় দিতে পারি না। তার উপর আমার পায়ের তলায় বল বেয়ারিং...মাঝে মাঝেই বাজার সেরে যেখানে পাই বন্ধুদের জুটিয়ে আজ মালদহ, কাল লাল মণির হাট পরশু কালনা পরের দিন বীরভূম উড়ে বেড়াই...তাই আমি আমার মা এর জন্য জীবনে চলার পথে নতুন সঙ্গী চাই। ফাঁকা বাড়িতে একা থেকে মা ডিপ্রেসড হয়ে পড়েন।' অবসর সময়ে বই পড়তে ও গান শুনতে ভালোবাসেন দোলা। বস্তুত, বাড়িতে হাজার দশেক বই-ই যে তাঁর মায়ের দিনযাপনের একমাত্র সঙ্গী, সেকথা জানিয়েছে গৌরব। তিনি লিখেছেন,
'কিন্তু আমার মনে হয়, একজন সঙ্গীর পরিপূরক বই বা গান বা স্ট্র্যান্ড এ হাঁটতে যাওয়া হতে পারে না.. আমার মা এর জন্য আমি এই পোস্ট করছি..একা একা কষ্ট পেয়ে কাছিম হয়ে থাকার চেয়ে জীবনটা ভালোভাবে বাঁচা দরকার বলেই আমি মনে করি.. আমি যত দিন যাবে আরও ব্যস্ত হয়ে পড়ব.. আমারও সংসার হবে.. কিন্তু মা..???' টাকা পয়সা বা সম্পত্তি প্রতি লোভ নেই। যিনি পাত্র হবে, তাঁকে স্বনির্ভর ও তাঁর মাকে ভালো রাখতে হবে। গৌরবের চাহিদা এটুকুই।
আকাশবাণীতে চাকরি করেন গৌরর অধিকারী। নিজের জন্মদিনেই মায়ের জন্য সঙ্গীর খোঁজ করতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তিনি। গৌরবের আবেদন, 'আমার জন্মদিনে অনেক অনেক শুভকামনা পেয়েছি। সারা বছর কলম তুলি আপনাদের ই জন্য..আশা করি আপনারা আমার পাশে থাকবেন..'
দিন কয়েক আগে মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন এক তরুণী। তাঁর পোস্ট রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন নেটিজেনরা। গৌরব অধিকারীদের পোস্টও প্রশংসা কুড়োচ্ছে নেটদুনিয়ায়।