সংক্ষিপ্ত
মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) কীর্তিপুরের গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছাল মণিপুরে অতর্কিত সন্ত্রাসবাদী হামলায় (Manipur Terror Ambush) নিহত শহিদ জওয়ান শ্যামল দাসের (Martyr Shyamal Das) দেহ। সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ জানালেন গ্রামবাসীরা।
মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) কীর্তিপুরের হাওয়া তখন ভারি। আকাশপথে সদ্য উড়ে এসেছে গ্লামের ছেলেটার কফিন-বন্দি দেহ। আর দেহ গ্রামে পৌঁছনোর খবর পেতেই একে একে ভিড় বাড়তে লাগল শাসকদলের ছোট, মেজ নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রী-বিধায়কদের। শহিদকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর বেদনাঘন পরিবেশে, রাজনৈতিক লাভের গুড়ের গন্ধে নেতাদের আগমনে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করলেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের প্রশ্ন, এতদিন ছিলেন কোথায়, শহিদ হওয়ার পর কেন আসছেন?
গত শনিবার মণিপুরের চূরাচাঁদপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে, অতর্কিত সন্ত্রাসবাদী হামলায় (Manipur Terror Ambush) নিহত হয়েছিল ৪৬ অসম রাইফেলসের (Assam Rifels) কমান্ডিং অফিসার, কর্নেল বিপ্লব ত্রিপাঠীর (Colonel Viplav Tripathy) কনভয়ে। এই হামলায় ওই কমান্ডিং অফিসার-সহ ছ'জন জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন। নিহত হন কর্নেলের স্ত্রী এবং পুত্রও। কর্নেল বিপ্লব ত্রিপাঠির গাড়ির চালক ছিলেন মুর্শিদাবাদের কীর্তিপুর গ্রামের ছেলে, ভারতীয় সেনা (Indian Army) জওয়ান শ্যামল দাস। রক্ষা পাননি তিনিও।
আরও পড়ুন - Murshidabad Jawan-মায়ানমার সীমান্তে জঙ্গি হানা, বীর সন্তান হারাল মুর্শিদাবাদ
আরও পড়ুন - Manipur terror attack: মেয়ের জন্মদিনেই মেয়ের সঙ্গে শেষ কথা, কফিনবন্দি হয়ে ফিরছে শ্যামল
মঙ্গলবার মণিপুর থেকে আকাশপথে উড়ে আসে তাঁর নিথর দেহ। শহিদ শ্যামল দাসের (Martyr Shyamal Das) কফিন-বন্দি দেহ গ্রামে আসতেই উপস্থিত হন অগনিত মানুষ। গ্রামের ছেলেটাকে একবার শেষদেখা দেখবে বলে মানুষের ঢল নামে রাস্তার দুই ধারে। গ্রামের যুবকরাই মিছিল করে তাঁর দেহ নিয়ে যান তাঁর বাড়ি পর্যন্ত। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা দাস, মেয়ে দিয়া দাস, বাবা ধীরেন দাস ও মা মাধবী দাস। শহিদের দেহ বাড়িতে পৌঁছতেই কান্নার রোল ওঠে। কফিনটাই জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন হতভাগ্য পরিবারের সদস্যরা।
বাড়ির সামনেই তাঁকে তোপধ্বনির মাধ্যমে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে। প্রথা মেনে গান স্যালুটের জন্য উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার কে সবরী রাজকুমার (K Sabari Rajkumar), জেলা শাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী (SHRI SHARAD KUMAR DWIVEDI) ও সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা। কিন্তু তাঁদের পাশাপাশি ভিড় জমাতে শুরু করেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) বিভিন্ন স্তরের নেতারা। আসেন রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের প্রতিমন্ত্রী আখরুজাম্মান (Akhruzzaman) এবং খড়গ্রামের বিধায়ক আশিষ মার্জিতও (Ashis Marjit)।
গ্রামবাসীরা কিন্তু, তাঁদের এই উপস্থিতি মোটেই ভাল চোথখে দেখেননি। নেতাদের সামনেই তাঁরা বলেন, 'বছরের অন্যান্য সময়ে এই জওয়ানের পরিবারের পাশে শাসক দলের নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের কারোর দেখা পাওয়া যায়নি অথচ শহীদ হয়ে যাওয়ার পরই তাঁরা এখানে এসে হাজির হচ্ছেন। শুধুমাত্র রাজনৈতিক লাভ পাওয়ার জন্য'। মন্ত্রী শহিদ পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেও, গ্রামের মানুষ তাতে আস্থা রাখতে পারছেন না। তাঁদের দাবি রাজ্য সরকারকে এই শহিদ পরিবারকে সাহায্য করতে হবে।
শহিদ শ্যামল দাসের বাবা ধীরেন দাসও সরকারি সাহায্য এবং ন্যায়বিচার চেয়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছেন সন্তানকে হারিয়ে এখন তাঁর এবং তাঁর পরিবারের এটাই একমাত্র চাহিদা। এই কাপুরুষোচিত জঙ্গি হামলার পিছনে থাকা দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পেলে, তাঁর ছেলের আত্মাও শান্তি পাবে বলে মনে করছেন তিনি। সেই সঙ্গে মনে বল পাবে, দেশের অন্যান্য জওয়ান ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও, এমনটাই বলছেন ধীরেন দাস। তবে, কারা এই হামলা চালিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। ইতিমধ্যেই মণিপুরে সেনা কনভয়ে হামলার দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় দুই জঙ্গি সংগঠন - পিপপলস লিবারেশন আর্মি (Peoples Liberation Front) বা এলএ এবং নাগা পিপলস ফ্রন্ট (Naga Peoples Front)।