সংক্ষিপ্ত

  • দু' দিন ধরে রাজ্য জুড়ে তাণ্ডব
  • বিক্ষোভের নামে বেলাগাম বিশৃঙ্খলা
  • প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জনমানসে
  • সংখ্য়ালঘু তোষণ করতে গিয়েই পরিস্থিতি হাতের বাইরে, উঠছে প্রশ্ন

লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের পর সাংবাদিক বৈঠকে ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খেতে হয়।' সংখ্যালঘু ভোটাররা যে তাঁকে 'দুধ' দেন, সেদিন রাখঢাক না করেই তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু সেই গরুর লাথি যে সবসময় খুব একটা হজম করা যায় না, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদের নামে গত দু' দিন ধরে চলা রাজ্য জুড়ে তাণ্ডব তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পরিস্থিতি এতটাই হাতের বাইরে  চলে গিয়েছে যে সংখ্যালঘুরাই বিজেপি-র থেকে টাকা নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে প্রকাশ্যেই অভিযোগ করতে হচ্ছে দলের সংখ্যালঘু মুখ এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। 

এনআরসি নিয়ে এ রাজ্যে বিজেপি-র খেলা তাস যে খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি, সাম্প্রতিক তিনটি উপনির্বাচনে ফলই হয়তো তার প্রমাণ। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই নাগরকিত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদ আরও তীব্র করতে চেয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পরিস্থিতি যে এ ভাবে হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবে, তা হয়তো ভাবেননি তিনি। অ- বিজেপি অনেক রাজ্যই নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় হয়তো সেখানে কম পরিমাণে সংখ্যালঘুদের বাস। কিন্তু নয়া আইনের প্রতিবাদে গত চব্বিশ ঘণ্টায় এ রাজ্যে যা ঘটে চলেছে, তাতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। দুর্ভাগ্যজনক হলেও আবারও এই বিশৃঙ্খলার মুখ হয়ে উঠেছেন এ রাজ্যের সংখ্যালঘুরা। যারা বারবারই পশ্চিমবঙ্গে ভোটের অঙ্করে ঘুঁটি হয়ে থেকে  গিয়েছেন। আর যেখানে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন দুধ দেওয়া গরুর লাথি খেতে হবে, সেখানে প্রতিবাদের নামে এমন বিশৃঙ্খলা তৈরি হলেও পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে, আমজনতা সেই আশা করবে কী করে? ফলে, শুধুই সংখ্যালঘুদের দোষারোপ নাকি প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে পাওয়া প্রশয়ের বার্তাই এই তাণ্ডবের জন্য দায়ী, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। 

এই দুধ দেওয়া গরুর লাথি খেতে গিয়ে যে সংখ্যাগুরু ভোটব্যাঙ্কে ধস নামতে পারে, এবার আর তা বুঝতে দেরি করেননি তৃণমূলনেত্রী। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতার নামে যেভাবে সংখ্যালঘুদের একাংশ ট্রেনে, বাসে হামলা চালিয়ে গোটা রাজ্যকে প্রায় স্তব্ধ করে দিচ্ছেন, তাতে সংখ্যালঘু বিরোধী হাওয়া তুলতে বিজেপি-র আরও সুবিধে হবে। আগামী বছর পুরভোট, তার পর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ রাজ্যে আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে মেরুকরণের রাজনীতি। আর তা হলে নিঃসন্দেহে অমিত শাহদের মুখের হাসি চওড়া হবে। 

আরও পড়ুন- আগুনে ভষ্মীভূত চারটি ট্রেন, প্রতিবাদের নামে বিনা বাধায় তাণ্ডব মুর্শিদাবাদে, দেখুন ভিডিও

আরও পড়ুন- বিজেপি-র টাকায় বাংলায় তাণ্ডব সংখ্যালঘুদের, চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ফিরহাদের, দেখুন ভিডিও

নাগরিকত্ব বিল সত্যিই সংবিধান বিরোধী কি না, গত দু' দিন পশ্চিমবঙ্গে বেলাগাম বিশৃঙ্খলায় সেই প্রশ্নটাই যেন পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে।  গত দু' দিন ধরে লাগামছাড়া বিশৃঙ্খলতার নেপথ্যে কোন রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে, সবুজ না গেরুয়া, নাকি অন্য কোনও রং, আমজনতা তা জানতে পারবে না। সবটাই তাঁদের দুই দুইয়ে চার করে নিতে হবে। কিন্তু দুধ দেওয়া গরুর লাথি যে এবার রাজ্যের শাসক দলকেই বেকায়দায় ফেলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের সংখ্যালঘু মুখ এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে মাঠে নামাতে বাধ্য হলেন তৃণমূলনেত্রী। কলকাতার মেয়রকে বলতে হল, সংখ্যালঘুদের একাংশই বিজেপি-র থেকে টাকা নিয়ে এই বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এমন চললে হিন্দুদের মনেও যে সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে বিদ্বেষ তৈরি হবে, রাখঢাক না করে তা স্বীকার করে নিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। প্রথমে যাকে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, হাতের বাইরে চলে গিয়ে সেই বিক্ষোভই যে বিজেপি-র সুবিধে করে দিচ্ছে, তাও মেনে নিলেন তৃণমূল নেতা। প্রশ্ন উঠতেই পারে, মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী এতদিন যে সংখ্য়ালঘুরা এত 'দুধ' দিলেন, তাঁদের একাংশই এখন বিজেপি-র থেকে টাকা নিয়ে এই বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন কেন? তাহলে সংখ্যালঘুদের মন বুঝতেই ভুল হয়েছিল তাঁর?

আপাতত যা পরিস্থিতি, শক্ত হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা ছাড়া উপায় নেই মুখ্যমন্ত্রীর। তা বুঝতে পেরেই বিক্ষোভকারীদের প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারসাম্যের রাজনীতি করে তিনি কীভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন, তার উপরই নির্ভর করছে দু' দিন ধরে চলা তাণ্ডবে লাগাম টানা যাবে, নাকি দুধ দেওয়া গরুর লাথি আরও বেশি করে খেতে হবে।