সংক্ষিপ্ত

তথ্যপ্রমাণ দেখে বিস্ময় প্রকাশের পাশাপাশি বিচারক প্রশ্ন তোলেন, এমন এক উচ্চ পদাধিকারী সরকারি সংস্থার বদলে স্ট্যাম্প পেপারে সই করে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে এত বিরাট অঙ্কের টাকা ঋণ নেবেন কেন? আইনজীবী তার উত্তরে বলেন সেই সময় টাকার জরুরি প্রয়োজন থাকায় ও-ভাবে ঋণ নেওয়া হয়। যাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল, তাঁর নামও আদালতে জানানো হয়েছে।

কোনও বিশেষ ব্যক্তির থেকে ঋণ কেন নেবেন একজন সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিক। এই প্রশ্নের আপাতত কোনও জবাব পাচ্ছে না আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত। ইস্টার্ন কোল ফিল্ডস লিমিটেড বা ইসিএলের মতো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার স্তরের কোনও প্রাক্তন কর্তার যদি ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তিনি সরকারি সংস্থা থেকেই তা নিতে পারেন। সেটা না করে তিনি অহেতুক রেভিনিউ স্ট্যাম্প দেওয়া কাগজে সই করে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নিলেন কেন? প্রশ্ন তুললেন সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী।

উল্লেখ্য, কয়লা পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত প্রাক্তন ইসিএল আধিকারিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তারা নগদ ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছিল বলে দাবি করেছে সিবিআই। তাঁর আইনজীবী দুলাল ভট্টাচার্য সোমবার আদালতে জানান, এক নিকটাত্মীয়ের বিয়ের জন্য বন্ধু ও পরিচিতদের কাছ থেকে ওই টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সুভাষবাবু। ওই ২০ লক্ষের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তাঁর মক্কেল। এই বিষয়ে আদালতে তথ্যপ্রমাণও পেশ করেন আইনজীবী। 

তবে স্বাভাবিকভাবেই আইনজীবীর দেওয়া তথ্যপ্রমাণ খুশি করতে পারেনি সিবিআই আদালতের বিচারককে। তথ্যপ্রমাণ দেখে বিস্ময় প্রকাশের পাশাপাশি বিচারক প্রশ্ন তোলেন, এমন এক উচ্চ পদাধিকারী সরকারি সংস্থার বদলে স্ট্যাম্প পেপারে সই করে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে এত বিরাট অঙ্কের টাকা ঋণ নেবেন কেন? আইনজীবী তার উত্তরে বলেন সেই সময় টাকার জরুরি প্রয়োজন থাকায় ও-ভাবে ঋণ নেওয়া হয়। যাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল, তাঁর নামও আদালতে জানানো হয়েছে।

কয়লা পাচার মামলায় সিবিআই-কে জেলে গিয়ে অভিযুক্তদের জেরা করার অনুমতিও দিয়েছেন তিনি। অভিযুক্ত সুভাষ মুখোপাধ্যায় সহ ইসিএলের আট জন প্রাক্তন ও বর্তমান কর্তা ও কর্মীকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পয়লা অগস্ট অভিযুক্তদের ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিবিআই আদালতে জানিয়েছে, গত ৩১ মার্চ সুভাষবাবুর অবসরের কয়েক দিন আগে ইসিএল-কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ৫৬ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার জানান, কয়লা পাচারে প্রধান অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে ‘লালা’র সঙ্গে টাকা লেনদেন করেছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে ওই ইসিএল কর্তা দফায় দফায় প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। সিবিআই তাঁর বাড়ি থেকে ২০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। 

অভিযুক্তদের আইনজীবী আশিস মুখোপাধ্যায়, আশিস কুমার, অঙ্কিতা সেনগুপ্ত, উদয়চাঁদ মুখোপাধ্যায়, পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়েরা জানান, পাঁচ দিন ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে রেখে নতুন কোনও তথ্য পায়নি সিবিআই। নতুন কিছু বাজেয়াপ্তও করা হয়নি। জামিন পেলে অভিযুক্তেরা নিরুদ্দেশ হযে যেতে পারেন বলে সিবিআই যে-আশঙ্কা করছে, তা অমূলক। কারণ, দেড় বছর ধরে অভিযুক্তেরা সিবিআইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়ার পাশাপাশি সব রকম সহযোগিতা করেছেন।

সুভাষ মুখোপাধ্যায় ছাড়াও অভিযুক্ত সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিৎ মল্লিক, তন্ময় দাস, সুভাষচন্দ্র মৈত্র, মুকেশ কুমার, রিঙ্কু বেহার ও দেবাশিস মুখোপাধ্যায়কে সোমবার আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্তদের যাতে কোনও ভাবেই জামিন দেওয়া না-হয়, সেই জন্য সিবিআইয়ের তরফে আগেই লিখিত আর্জি জানানো হয়েছিল।