সংক্ষিপ্ত

রাজীবের জীবনে সাফল্য কেবল এই একবারই যে এসেছে এমনটাও নয়। বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে একাধিক সাফল্য ছিনিয়ে নিয়েছে মুর্শিদাবাদের এই ক্যারাটে কোচ। 

বিশ্বের দরবারে ফের একবার সেরার আসন পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দেখাচ্ছে বাঙালি। মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) এঁদো গ্রাম তোরতিপুরের বাসিন্দা বছর আটত্রিশের (38 Years Old) রাজিব হোসেন আনসারী বাংলা (Bengal) থেকে সেরা ক্যারাটে কোচের(best karate coach) খেতাব পেলেন। স্বপ্ন নগরী মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া অপারেন্ট ফার্মেসি ফেডারেশন ও অপারেন্ট ইনকরপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত  'ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড' এসেছে তাঁর ঝুলিতে। মুর্শিদাবাদে রাজীবের গ্রাম জুড়ে তাকে ঘিরে মানুষের উৎসাহ এখন তুঙ্গে। 

গ্রামের দুঃস্থ তাঁতী পরিবারের সন্তান রাজীবের লড়াইটা মোটেই খুব একটা সুখকর নয় বলেই জানান তিনি। বলেন," এটা ঠিকই এত বড় একটা অনুষ্ঠানে বাংলার হয়ে ক্যারাটে কোচ ক্যাটাগরিতে সেরার পুরস্কার পাওয়ায় খুবই গর্বের। পাশাপাশি এইটাও চিন্তা রয়েছে মাথায়,আগামী দিনে  আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা রয়েছে, সেখানে যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় কিভাবে তা সম্পন্ন করব সে ভাবনাও প্রতিমুহূর্তে কুরে কুরে খাচ্ছে"। তবে রাজীবের জীবনে সাফল্য কেবল এই একবারই যে এসেছে এমনটাও নয়। বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে একাধিক সাফল্য ছিনিয়ে নিয়েছে মুর্শিদাবাদের এই ক্যারাটে কোচ। 

শুরুটা হয়েছিল স্কুলজীবন থেকেই টিভিতে অ্যাকশন হিরো অক্ষয় কুমার আর ব্রুসলির নানান কলাকৌশল দেখেই অনুপ্রেরণা পান বলে রাজীব জানান। একদিকে ক্যারাটের প্রতি ভালবাসা আর অন্যদিকে সংসারের অভাব, শেষ পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি এলাকার এই ক্যারাটে কোচ রাজিব হোসেনের পক্ষে। কখনো বাড়ির বাইরে এলাকায় গ্রামের ফাঁকা মাঠে কিংবা পুকুরের ধারে দাঁড়িয়ে আপন-মনে প্রাকটিস চালিয়ে গিয়েছে রাজিব। আর এই ভাবেই একদিন বহরমপুরের টাউন ক্লাবের প্রখ্যাত ক্যারাটে কোচ অজয় রায়চৌধুরীর সান্নিধ্যে আসেন তিনি। 

তারপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমশ সময়ের সাথে সাথে একের পর এক সাফল্যের শিরোপা পেতে থাকেন এই ক্যারাটে কোচ। দুবার বেঙ্গল ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন ও এর মধ্যেই ২০১৪ সালে ‘ব্ল্যাক বেল্ট’ পান তিনি। এর পরই, সটান ২০১৬ এফএসকেএ ওয়ার্ল্ড কাপ ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে ৩০ দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে ব্রোঞ্জ মেডেল পান। পরের বছর ২০১৭ রেকর্ড গড়ে মাত্র ১ মিনিটে ৫৫৪ পাঞ্চ মেরে ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডসে নাম ওঠে রাজিবের। 

এখানেই শেষ নয়, ২০১৯ সালে মুম্বইয়ে ২৪তম এশিয়ান আন্তর্জাতিক ক্যারাটে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে রাজীব ৬০-৬৫ কিলোগ্রাম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে রুপোর পদক পান তিনি। সেখানে ভারত ছাড়াও ইরান, ইংল্যান্ড, আর্মেনিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, কেনিয়া-সহ বিশ্বের ১০টি দেশের প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে। 

আন্তর্জাতিক স্তরে এই অনুষ্ঠানে ভারত ছাড়াও মরিশাস, বাংলাদেশ, আমেরিকা, নেপাল,সাউথ আফ্রিকার মতন বিভিন্ন দেশের তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত থাকেন। আর তাদের মাঝে দাঁড়িয়েই বাঙালি যুবক মুর্শিদাবাদের রাজিব হোসেন পুরস্কৃত হয়েছেন।  ছেলের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন," আমার ছেলে কেবল মুর্শিদাবাদ নয় বাংলা তথা দেশের গর্ব। আগামী দিনেও আরো এগিয়ে যাক, এই কামনাই করি"।