সংক্ষিপ্ত
মুর্শিদাবাদ জেলার অধিকাংশ পুরসভার বেশকিছু ওয়ার্ডে তৃণমূলের একাংশ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে নির্দল হিসেবে পুরভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। এই নির্দল প্রার্থীরা ভোট কেটে কোথাও বিজেপি আবার কোথাও কংগ্রেসকে সুবিধা পাইয়ে দিতে চাইছেন বলে দলীয় প্রার্থীরা অভিযোগ জানাচ্ছেন।
শেষ পর্যন্ত নির্দল প্রার্থীদের (independent candidates) শিক্ষা দিতে কড়া সিদ্ধান্তের পথে হাঁটল মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব (TMC)। নির্দল কাঁটায় যাতে দলীয় প্রার্থীদের কোন ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হতে না হয় তারজন্য আগেভাগেই তৎপরতা গ্রহণ করল শাসক দল। মুর্শিদাবাদ জেলার অধিকাংশ পুরসভার বেশকিছু ওয়ার্ডে তৃণমূলের একাংশ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে নির্দল হিসেবে পুরভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। এই নির্দল প্রার্থীরা ভোট কেটে কোথাও বিজেপি আবার কোথাও কংগ্রেসকে সুবিধা পাইয়ে দিতে চাইছেন বলে দলীয় প্রার্থীরা অভিযোগ জানাচ্ছেন।
তৃণমূলের নেতারা যাঁরা নির্দল প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য নেতৃত্ব। সেইমতো রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এরকমই ১১জন নির্দল প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার আর্জি জানিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দিল। এমনকী দলের একাংশ গোপনে এই নির্দলদের সাহায্য করছেন বলেই অভিযোগ উঠছে। তাঁদেরও রেয়াত করা হবে না বলেও এদিন জানিয়ে দেওয়া হয়। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই হুঁশিয়ারিকে উপেক্ষা করেই মুর্শিদাবাদ জেলার ৭ পুরসভার অনেকেই নির্দল হিসেবে লড়াই করে যাচ্ছেন। এই লড়াইয়ে জেলার বেশকিছু নেতা ইন্ধন জোগাচ্ছেন। প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের প্রকল্পকে সামনে রাখছেন তাঁরা। এর ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
যেমন, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন নির্মল দত্ত। তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ নির্দল হিসেবে লড়াই করছেন পরিমল সরকার। পুরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের যুবনেতার স্ত্রী মৌমিতা সরকার দাস দলীয় প্রার্থী রঞ্জনা সিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। মুর্শিদাবাদের ৭নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন বিপ্লব চক্রবর্তী। যদিও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস যে চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করে তাতে নাম ছিল বিশ্বজিৎ দে-র। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থী হন বিপ্লববাবু। তারপর নির্দল হিসেবে লড়াই করছেন বিশ্বজিৎবাবু।
অপর আরও এক বিক্ষুব্ধ নেতা বিশ্বজিৎ ধর দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়ছেন। ৬নম্বর ওয়ার্ডে সোনালি সিংহরায় নির্দল হিসেবে লড়ছেন। ৯নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সিংহের বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়ছেন গুরুপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ১০নম্বরে আশিয়ানা বেগম ও ১৩ নম্বরে ধদ্ধরী মণ্ডল নির্দলে দাঁড়িয়েছেন। সকলেই তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলার। ১৪নম্বর ওয়ার্ডে মিতা মল্লিকের বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়ছেন ঋতুপর্ণা দাস। বেলডাঙা পুরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রার্থী বিশ্বজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে নির্দলে লড়ছেন মুস্তাক আহমেদ।
বিক্ষুব্ধ নেতারা এভাবে গোঁজ হয়ে দাঁড়ালে পুরভোটে দলের ফল খারাপ হতে পারে। তাই এনিয়ে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য নেতৃত্ব।ইতিমধ্যেই প্রত্যেক নির্দল প্রার্থীর নাম ও তাঁদের যে সমস্ত তৃণমূল নেতা নেত্রীরা সহযোগিতা করছেন, তাঁদের বিস্তারিত বিবরণ রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছে জেলা নেতৃত্ব।
মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, আমরা সমস্ত নির্দল প্রার্থীদের তথ্য রাজ্যকে জানিয়েছি। যাঁরা তৃণমূলের প্রতীকের বিরোধিতা করবেন, তাঁদের দলে কোনও জায়গা নেই। রাজ্য নেতৃত্ব খুব শীঘ্রই তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে, তা জানিয়ে দেবে। যাঁরা নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে দল"।