সংক্ষিপ্ত
গত বছর নিট পরীক্ষায় সফল হয়ে ওই মেধাবী ছাত্র বর্তমানে আর আহমেদ মেডিক্যাল কলেজে ডেন্টাল নিয়ে পড়াশোনা করছে। কিন্তু, তাতে বাবা মায়ের ইচ্ছে পূরণ হচ্ছিল না। তাই আরও পরিশ্রম করার জন্য উঠে পড়ে লাগে সে।
এবার দিনবদলের পালা। সামান্য মজুরের ছেলের (Laborer Son) গলায় ঝুলবে কিনা স্টেথোস্কোপ (stethoscope)! এমন কথা যাঁরা স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না তাঁদের সেই ভাবনাকেই বদলে দিতে এগিয়ে এসেছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) মানিকচক এলাকার দিনমজুর পরিবারের সন্তান তুষার আলি। মেধা আর কঠোর অধ্যাবসায় দিয়ে যে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব তা রীতিমতো প্রমাণ করে দেখাচ্ছে তুষার। আর এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক (MLA) মহম্মদ আলি (Muhammad Ali)।
তুষার ও তার পরিবারকে আশ্বস্ত করে বিধায়ক বলেন, "আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করে ওই ছেলে একবার নয়, দু'বার নিট পরীক্ষায় (NEET Exam) সফল হয়েছে। এদের কাছ থেকেই প্রত্যন্ত এলাকার দুঃস্থ ছেলে মেয়ে শিক্ষা নিয়ে লড়াই করবে। খুলে দেবে সাফল্যের দরজা। ফলে এলাকার মানুষের কাছে আবেদন ওই ছাত্রের পড়াশোনার (Education) ক্ষেত্রে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।" এখনও সরকারি কোনওরকম সাহায্য পাননি মানিকচক গ্রামের দিন আনা দিন খাওয়া মহিউদ্দিন শেখ। মেলেনি বাংলা আবাস যোজনার (Awas Yojana) বাড়িও। কিন্তু, ৩ ছেলেকে স্কুল পাঠাতে কোনওরকম কৃপণতা করেননি তিনি। আর সেই পরিবারের বড় ছেলে তুষার আলি এবার তাক লাগিয়ে দিল সকলকে।
আরও পড়ুন- সালকিয়ার হোমে শিশুদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ, গ্রেফতার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়রের পুত্রবধূ
গত বছর নিট পরীক্ষায় সফল হয়ে ওই মেধাবী ছাত্র বর্তমানে আর আহমেদ মেডিক্যাল কলেজে ডেন্টাল নিয়ে পড়াশোনা করছে। কিন্তু, তাতে বাবা মায়ের ইচ্ছে পূরণ হচ্ছিল না। তাই আরও পরিশ্রম করার জন্য উঠে পড়ে লাগে সে। আরও উন্নতি করার জন্য কঠোর পরিশ্রম শুরু করে। অবশেষে এল বড় সাফল্য। গতবারের ফলাফলকে পিছনে ফেলে এবার দ্বিতীয়বারের জন্য নিট পরীক্ষা দেয় তুষার। তারপরেই বাজিমাত। ৬১২ পেয়ে বাবা মায়ের ইচ্ছে পূরণ করে দেখাল এবার সে। ছেলের গর্বে গর্বিত তুহিনা বিবি। তিনি বলেন, “তুষার শুধু আমার নয় গ্রামের সকলের গর্ব। চেয়ে চিনতে ছেলেকে পড়িয়েছি। ও ডেন্টালে ভর্তি হলে মন ভরেনি। তাই ফের ওকে চেষ্টা করতে বলি। এবার সফলতার সঙ্গে আরও ভালো ব়্যাঙ্ক করেছে। তাতে আমরা ভীষণ খুশি।"
আরও পড়ুন- 'গোয়া ছেড়ে নিজের রাজ্যের দিকে দেখুন', খেজুরিতে ধর্ষণের ঘটনায় মমতাকে কটাক্ষ অগ্নিমিত্রার
এদিকে এই হতভাগ্য দিনমজুর পরিবারের বড় ছেলের পাশাপাশি অন্য দুই ছেলেকে নিয়েও স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন ওই দম্পতি। বিধায়ক মহম্মদ আলি আজ তুষারের বাড়িতে যান। কিন্তু, তুষারের বাড়ি দেখে রীতিমতো রেগে যান তিনি। এরপর তাদের যাতে অবিলম্বে আবাস যোজনার বাড়ি দেওয়া হয় সেই ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় বিডিওর কাছে আবেদন করেন তিনি। বিধায়কের এই ভূমিকায় খুশি তুষারের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি প্রতিবেশীরাও।
আরও পড়ুন- হাত বেঁধে নিয়ে কলকাতার রাস্তা দিয়ে ছুটছিল বাইক, পুলিশ ধরতেই কান্না ২ কিশোরীর
আর যাকে নিয়ে এত কথা সেই ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো ফোটানো তুষারের বক্তব্য, “আমার প্রতিবেশীরা আমাকে নানাভাবে সাহায্য করে থাকেন। আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আগামী দিনে শুধু একজন ভালো চিকিৎসকই নয়, মানুষ হিসেবেও যেন এগিয়ে যেতে পারি সেই প্রার্থনাই করি।" এদিকে তুষারের এমন সাফল্য নিয়ে গ্রামবাসী নিয়ামত শেখ, আকবর আলি সকলেই বলেন,"তুষার বরাবরই জেদী। শুরু থেকেই ওর জীবনের লক্ষ্য ছিল এমন কিছু করব যাতে সকলে যেন তার ইচ্ছাশক্তিকে মনে রাখে। সে করেও দেখাল।" তবে এখন দেখার কত তাড়াতাড়ি মেধাবী ছাত্র পরিবারের খানিকটা হলেও সুদিন ফিরে সরকারের সাহায্যে।