সংক্ষিপ্ত

'বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বাবু ভাজা বাদাম...'। এই গানটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। এমনকী সারা বিশ্বে কয়েক মিলিয়ন মানুষ দেখে ফেলেছেন।

নিজেদের সামগ্রী বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পথ বেছে নেন অনেকেই। কেউ বাঁধেন গান, কেউ আবার কবিতার বলে তাঁর সামগ্রী বিক্রি করার জন্য আশপাশের মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। গ্রামগুলিতে আজও এই ধরনের ফেরিওয়ালাকে দেখতে পাওয়া যায়। এখন সময় বদলেছে। তবে এই সব বিক্রেতা-‌শিল্পীর কদর কমেনি। অচেনা গ্রামের অপরিচিত ব্যক্তি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) দৌলতে। গ্রামের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন বীরভূমের ভুবন বাদ্যকরের (Bhuban Badyakar) গান রীতিমতো ভাইরাল (Viral)। 

'বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বাবু ভাজা বাদাম...'। এই গানটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। এমনকী সারা বিশ্বে কয়েক মিলিয়ন মানুষ দেখে ফেলেছেন। কিন্তু, যে মানুষটি এই গান করেছেন তিনি পেশায় একজন বাদাম বিক্রেতা। তাঁর নাম ভুবন বাদ্যকর। বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের কুড়ালজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। পেটের টানে কাঁচা বাদামের বস্তা পিছনে চাপিয়ে ঘুরে বেড়ান এই গ্রাম থেকে সেই গ্রামে। সেটা বাংলা হোক বা ঝাড়খণ্ড। আগে সাইকেলে করে ঘুরলেও এখন পুরনো একটা মোটর সাইকেল কিনে তাতে চেপেই বাদাম বিক্রি করতে বের হন তিনি। গ্রামের পথে কাঁচা বাদাম বিক্রি করতে গিয়েই গান বেঁধেছেন তিনি। 

বাদাম বিক্রির পাশাপাশি তিনি মানুষকে মনোরঞ্জন করার জন্য গানও করেন। আর বাদামওয়ালার গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছুটে আসেন অনেকেই। শুধু গান শোনা নয়, গানের পাশাপাশি তাঁর কাছে বাদামও কেনেন অনেকেই। তবে শুধু টাকা দিয়ে নয়, পুরনো সিটি গোল্ডের চেন, চুড়ি, হাতের বালা, মোবাইল ভাঙা, হাঁসের পালক, মাথার চুল ইত্যাদির বিনিময়েও বাদাম কেনা যায় তাঁর কাছ থেকে। আর এই সরঞ্জামের নাম দিয়েই একটি গান বেঁধে ফেলেছেন তিনি। যা এখন শোনা যাচ্ছে সবার মুখে মুখে। 

সম্প্রতি বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকরের গাওয়া এই গান সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই অনেকেই ছুটে যাচ্ছেন তাঁর বাড়িতে। এক কথায় রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাওয়ার মত বিষয়। কিন্তু, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলেও বাস্তবের মাটিতে তাঁর আর্থিক অবস্থার এতটুকুও উন্নতি হয়নি। থাকেন মাটির বাড়িতে। তাও আবার ত্রিপল দেওয়া। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে। 

"

ভুবন বলেন, "আমি প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে গান করতে করতে বাদাম বিক্রি করি। এই বাদাম বিক্রি করে আমার প্রতিদিন ২০০-২৫০ টাকা আয় হয়। বিগত ১০ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করছি। বাদাম বিক্রি করতে যাওয়ার সময় একটি গ্রামে এই গান করেছিলাম। সেই সময় একটি ছেলে সেই গান ক্যামেরাবন্দী করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু, আমি সেই ছেলেকে চিনি না। শুনে খুব ভালো লাগছে যে আমার গাওয়া গান সারা বিশ্বে কয়েক মিলিয়ন মানুষ দেখে ফেলেছেন। যদি আমাকে কেউ সুযোগ দেন তাহলে আরো কিছু ভালো গান শোনাব। যদিও আমি কোনওদিন গান শিখিনি।"

গ্রামের এক বাসিন্দা মিঠু খান বলেন, "ভুবন বাদ্যকর একজন বাদাম বিক্রেতা। তিনি বাদাম বিক্রি করতে যাওয়ার সময় একটি গান বেঁধেছিলেন। আমাদের খুব ভালো লাগছে যে আমাদের ছোট্ট গ্রামে এমন এক প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে।" ওয়াহিদ রাজা খান জানান, "পুরো বিশ্বে ভুবন বাদ্যকরের গান ছড়িয়ে যাচ্ছে। মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেটে তাঁর গান শুনছেন। এতে আমরা গর্বিত।"