সংক্ষিপ্ত
- প্রয়াত প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
- পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহাকুমার আনাড়া রেলওয়ে কলোনিতে জন্ম
- তাঁর ছবিতে একাধিকবার ফিরে এসেছে পুরুলিয়া
- তাঁর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গেই শোকোস্তব্ধ আনাড়া রেল কলোনি
প্রয়াত প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহাকুমার আনাড়া রেলওয়ে কলোনিতে জন্ম হয়েছিল তাঁর। সেখানেই বড় হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে ঘিরে একাধিক স্মৃতি রয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের মনে। আর তাই আজ তাঁর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গেই শোকোস্তব্ধ আনাড়া রেল কলোনি।
১৯৪৪ সালে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহাকুমার আনাড়া রেলওয়ে কলোনিতে জন্ম বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর। বাবা ডঃ তারাশংকর দাশগুপ্ত রেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারের কাজে যুক্ত ছিলেন। আনাড়া ওল্ড রেল কলোনি হাসপাতাল সংলগ্ন কোয়ার্টারে জন্ম হয়েছিল বুদ্ধদেববাবুর। তবে রেলের সেই কোয়ার্টারের অবস্থা এখন বেহাল। দেখাশোনার অভাবে ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে সেটি।
২০১৭ সালে পুরুলিয়ায় সিনেমার শুটিংয়ের কাজে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেববাবু। সেই সময় নিজের জন্ম ভিটে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে একটি টেলিফিল্মের শুটিংও করেন। কোয়ার্টারে যিনি তাঁদের বাড়িতে রান্না করতেন শুটিংয়ের সময় তাঁর বাড়িতেই উঠেছিলেন পরিচালক। ছোটোবেলায় যাঁকে কাকিমা বলে ডাকতেন তাঁর হাতে উপহার স্বরূপ একটি শাড়ি তুলে দিয়েছিলেন তিনি। আর কাকিমার মুখে ছেলেবেলার গল্প শুনতে শুনতে ডুব দিয়েছিলেন স্মৃতির পাতায়। আজ বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব স্মৃতি ভেসে উঠছিল যশোদা দেওঘরিয়ার চোখের সামনে। সেই ছোট্ট ছেলেটার মৃত্যুর খবর পাবেন এটা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না তিনি।
এরপর কাজের সূত্রে কলকাতায় বদলি হয়ে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেববাবুর বাবা। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। তখন বাবার হাত ধরে আনাড়া রেলওয়ে কলোনি ছাড়েন তিনি। তবে পুরুলিয়ায় শুধু ছেলেবেলা কাটানওই নয়। সেখানে অনেকগুলো সিনেমার শুটিং করেছিলেন তিনি। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি সিনেমা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সিনেমায় জায়গা পেয়েছেন পুরুলিয়ার কলাকুশলীরাও। পুরুলিয়ার বিশিষ্ট নাট্যকার এবং বিভিন্ন বাংলা সিনেমার অভিনেতা সুদিন অধিকারী 'ও' সিনেমায় একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০১৪ সালে এই সিনেমাটি পুরুলিয়াতে শুটিং হয়েছিল। এছাড়াও বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের বেশ কয়েকটি টেলিফিল্মেও অভিনয় করেছেন সুদিন অধিকারী। তিনি বলেন, "সত্যজিৎ রায়ের পর পুরুলিয়া জেলাকে আলাদাভাবে চিনিয়েছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। তাঁর তুলনা হয় না। তাঁর কাছে সিনেমায় অভিনয় ছাড়াও অনেক খুঁটিনাটি কাজ শিখেছি।"
এছড়া বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন পুরুলিয়ার অপর অভিনেতা তথা সাংবাদিক অনুপ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "উত্তরা, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান, ত্রয়োদশী এবং বাঘ বাহাদুর ছবিতে অভিনয় করেছি। সিনেমার স্পট হিসেবে পুরুলিয়াকে পছন্দ করার জন্য অন্যতম অবদান রয়েছে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের। ওঁর সিনেমার পরেই পুরুলিয়া টলিউড থেকে বলিউডে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। আজকে আমার কাছে সত্যি বেদনার দিন।" বরাবরই বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাঁর বেশিরভাগ ছবির শুটিং স্পট হিসেবে বেছে নিয়েছেন পুরুলিয়াকেই। আজ তাই পুরুলিয়ার সদর শহর থেকে আনাড়া-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তেই শোকের ছায়া।