সংক্ষিপ্ত

চলে গেলেন শঙ্খ ঘোষ

বাংলা ভাষা-সাাহিত্যের ক্ষতি হল তো বটেই

কিন্তু কতটা ক্ষতি হল

বোঝার মতো মনের প্রসারতা আছে কি

'আমারই হাতে এত দিয়েছ সম্ভার
জীর্ণ ক’রে ওকে কোথায় নেবে ?
ধ্বংস করে দাও আমাকে ঈশ্বর
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।'

সময়টা ১৯৭৬ সাল। দেশ জুড়ে চলছে অস্থিরতা, জরুরী অবস্থা। আর সেই সময় প্রকাশিত হয়েছিল কয়লার মতো সত্য এক কাব্যগ্রন্থ, 'বাবরের প্রার্থনা'। সময়ের এক আশ্চর্য দলিল। তারও আগে বাংলার পাঠক পেয়েছিল,

'যদি তাই লাগে তবে ফিরে এসো! চতুরতা, যাও!
কীবা আসে যায়

লোকে বলবে মূর্খ বড়ো, লোকে বলবে সামাজিক নয়'

তারপর থেকে সমানে কলম চলেছে কবির। বুধবার, ২১  এপ্রিল, বাংলায় কাব্যজগতে একরাশ শূন্যতা তৈরি করে চলে গেলেন শঙ্খ ঘোষ। বলা যেতে পারে তাঁর প্রয়ানের সঙ্গে সঙ্গে অবসান হল বাংলা আধুনিক কবিতার একটা যুগের, যা তৈরি হয়েছিল, সুনীল-শক্তি-উৎপল-বিনয়-শঙ্খ'এর হাত ধরে।

শঙ্খ ঘোষের কবিতায় প্রথম থেকেই একটা দ্বিমুখী যাত্রা লক্ষ্য করা গিয়েছে। একদিকে তাঁর কবিতা ছিল তাঁর প্রতিবাদের হাতিয়ার। সামাজিক রাজনৈতিক যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার হাতিয়ার। তেমনই শঙ্খ ঘোষের কবিতায় পাওয়া যেত এক অতলান্ত আত্ম-সন্ধান। আর এই দুইয়ের মিশেলে বলা যেতে পারে ৬ দশক ধরে বুঁদ  করে রেখেছিলেন বাঙলা কাব্য জগতকে। অনুপ্রাণিত করেছেন বহু মানুষকে। বাংলা সাহিত্য পেয়েছে, 'মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে', 'ধুম লেগেছে হৃৎকমলে', 'লাইনেই ছিলাম বাবা', 'মাটিখোঁড়া পুরোনো করোটি', 'শুনি নীরব চিৎকার'-এর মতো একের পর এক অমূল্য রত্ন।     

শঙ্খ, অবশ্য কবির ডাকনাম, তাঁর আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। বাবা মনীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং মা অমলা ঘোষ। ১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় জন্ম হয়েছিল শঙ্খ ঘোষের। স্কুলের পড়াশোনা করেছিলেন পাবনায়। তারপর চলে এসেছিলেন কলকাতায়। বাংলা সাহিত্য নিয়ে প্রথমে প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে স্নাতক, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজ জীবন থেকেই লেখালেখি করতেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে,  'দিনগুলি রাতগুলি'। বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতাও করেছেন তিনি।

শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে বাংলা সাহিত্যের, বাংলা ভাষার, বাংলা সমাজের যে ক্ষতি হল, তা হলাই বাহুল্য। কিন্তু, কতটা ক্ষতি হল? গত বছরও একটি পত্রিকার শারদীয়া সংখ্য়ায় তিনি লিখেছিলেন, 'তোমার দুঃখের পাশে বসে আছি'। এই গভীরতাকে ছুঁতে গেলে মনের যে প্রসারতা দরকার, বর্তমান সময়ে তার বড্ড অভাব। তাই হয়তো কী হারালাম, তা বুঝতে হয়তো লেগে যাবে অনেকটা সময়।