সংক্ষিপ্ত
কাশ্মীর-কলকাতা ছেড়ে কেন উত্তর দিনাজপুর, শিক্ষক নিয়োগের ইস্যুতে হিজবুল মুজাহিদিনের হুমকি সিডি আদৌ কি সত্যি। দেশ তথা রাজ্যের ইতিহাসে এমন লঘু ইস্যুতে জঙ্গি গোষ্ঠীর মেরে ফেলার হুমকি আসেনি, তাই যাচাই করতে ইতিমধ্যেই তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
শনিবার জঙ্গি গোষ্ঠীর নামে পাঠানো হুমকি সিডি নিয়ে উত্তাল রাজ্য। উঠেছে একের পর এক প্রশ্ন। এদিন সাতসকালে জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদিনের নাম করে হুমকি দেওয়া একটি সিডি পড়ে থাকতে দেখা যায় উত্তর দিনাজপুর প্রেস ক্লাবে। যেখানে শিক্ষক নিয়োগের ইস্যুতে হিংসাত্মক দাবি জানিয়ে রাজ্যের খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কেই চ্যালেঞ্জ ছোড়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ঘটনার খবর পেয়ে তদন্ত শুরু করে করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদিনের নাম করে পাঠানো হুমকি সিডিটি প্লাষ্টিক কাগজে মোড়া ছিল। তাতে লেখা ছিল,'এটি পাওয়া মাত্রই সব চ্যানেলে দেখাতে হবে। নইলে হিংসার স্বীকার হবে।' সিডিটি চালিয়ে দেখা যায় তৌসিব আলি নামে এক ব্যক্তি বক্তব্য রাখছেন। যেখানে ওই জঙ্গি সংগঠনের তরফে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের তালিকায় তাঁর ৬ জন আত্মীয় রয়েছেন। যারা চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবছে। অবিলম্বে এদের নিয়োগ না করা হলে, রাজ্যের ১৩ হাজার চাকরী প্রার্থীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তবে শুধু চাকরি প্রার্থীকেই নয়, কমিশনের আধিকারিক সহ একাধিক নেতাকেও খুনের হুমকি দিয়েছে ওই জঙ্গি সংগঠন। আর দুর্গাপুজোর আগেই সেই হত্যালীলা চালানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এখানেই শেষ নয়, এই বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছেন তিনি। উল্লেখ্য, এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি এশিয়ানেট নিউজ বাংলা।
কিন্তু এই হুমকি সিডি ঘিরে উঠে এসেছে অসংখ্য প্রশ্ন। প্রথমত হিজবুল মুজাহিদিনের নামের ওই জঙ্গী সংগঠনের নাম বারবার কাশ্মীর ইস্যু নিয়েই শিরোনামে আসে। যে কাশ্মীরের উপর নজর সবার, সেই আন্তর্জাতিক ইস্যু ছেড়ে আচমকা কেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগের মতো লঘু ইস্যুতে মাথা চাড়া দিল এই জঙ্গি সংগঠনের। যা নিতান্ত বাংলার বিতর্কিত বিষয়। দেশ-সীমানার গন্ডী পেরিয়ে নয়। এমনকি রাজ্যের রাজধানী কলকাতাও নয়, উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলাকেই বা কেন বেছে নিল এই জঙ্গী সংগঠন। এখানেই প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে, তাহলে কি আদৌ কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী সিডিটা পাঠিয়েছে, নাকি কেউ নিছকই উদ্দেশ্য প্রণিত জঙ্গি গোষ্ঠীর নামে চালিয়ে প্রেস ক্লাবে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাহলে অবধারিতভাবে পরের প্রশ্নটা উঠে আসে, জঙ্গি গোষ্ঠী না হয়ে কোনও সাধারণ কেউ এটা করে থাকে, তাঁরই বা উদ্দেশ্য কী। নিছকই গুজব রটানো নাকি এর ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে কোনও রাজনৈতিক শিকড়।
আরও পড়ুন, 'কর্ম করো-ফলের ব্যাপারে ভেবো না', রাজ্যপালের দিল্লি সফর ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে
দেশ তথা রাজ্যের ইতিহাসে এমন লঘু ইস্যুতে জঙ্গি গোষ্ঠীর মেরে ফেলার হুমকি আসেনি। তাই এঘটনা কতটা সত্য, তা যাচাই করতে ইতিমধ্যেই তদন্তে নেমেছে পুলিশ। একদিকে ভোটের আগে শিক্ষক নিয়োগ যেমন একুশের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় বিতর্কিত ইস্যু ছিল। সেই ভীমরুলে চাকেই ঢিল মারল এই জঙ্গী গোষ্ঠী। এবং যেখানে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করেও হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাই রাজনৈতিক মহলের অনুমান সত্যি হোক কিংবা ভুয়ো, এই ঘটনায় জল অনেকদূর অবধি গড়াবে।