সংক্ষিপ্ত

স্বাভাবিকভাবেই হিজবুল মুজাহিদিনের নাম করে পাঠানো ভিডিও বার্তা নিয়ে নানা অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে।ভিডিও-র পিছনে আদৌ হিজবুল জঙ্গি সংগঠন আছে কি না তা কোনওভাবেই বলার মতো সময় আসেনি বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। 
 

স্বাভাবিকভাবেই হিজবুল মুজাহিদিনের নাম করে পাঠানো ভিডিও বার্তা নিয়ে নানা অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে সামনে আসছে বেশকিছু প্রশ্ন- ১। হিজবুল মুজাহিদিনের আদৌ কোনও বেঙ্গল এরিয়া কম্যান্ডান্ট রয়েছে কি না? ২। বাংলার বুকে সত্যি কি কোনও সক্রিয় সংগঠন রয়েছে হিজবুল মুজাহিদিনের? ৩। হিজবুল মুজাহিদিন সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোনও রাষ্ট্র বা প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে নৃশংসতার প্রমাণ রাখে । ৪। গুটিকতক মানুষের জন্য তাও আবার শিক্ষকের চাকরির জন্য হিজবুল মুজাহিদিন শাসানি দেবে, এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়।  

আরও পড়ুন, 'কাশ্মীর' নয়, এই প্রথম 'শিক্ষক নিয়োগ' ইস্যু, হিজবুল মুজাহিদিনের হুমকি সিডি আদৌ কতটা সত্যি

যে হুমকি ভিডিও হিজবুল মুজাহিদিনের কম্যান্ডারের নাম করে সামনে  আনা হয়েছে তাতে বক্তার পিছনে যে ছবিগুলো রয়েছে তা হাতে আঁকা এবং কার্টুনের মতো দেখতে। ছবিগুলো দেখে ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে যে সামান্য আঁকতে শেখা কেউ এগুলো এঁকেছে। এমনকী, ভিডিও-তে যে ব্যক্তি হত্যালীলা চালানোর হুমকি দিচ্ছে, তার ডানপাশে একটি কালো রঙের কাপড় দেওয়ালে লাগানো রয়েছে, সেই কাপড় এমনভাবে পেরেক দিয়ে মারা রয়েছে যে বোঝাই যাচ্ছে বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে তা করা হয়েছে। হিজবুলের যে কিছু ভিডিও মাঝে মাঝে গোয়েন্দা বা সংবাদমাধ্যমের কাছে পৌঁছয় তাতে ব্যাকগ্রাউন্ডে এমন কোনও কার্টুন মার্কা ছবি বা পরিপাটি করে কেটে লাগানো ছোট্ট কালো কাপড়  দেখা যায়নি। ফলে ভিডিও সিডি-র মধ্যে যে ব্যক্তিকে রীতমতো গলা গম্ভীর করে ও কাঁপিয়ে হুমকি দিতে দেখা গিয়েছে তাতে যে ভাবে সে হিন্দি উচ্চারণ করছে তাতে বাংলার টানও যথেষ্ট রয়েছে। 

আরও পড়ুন, JMB প্রধান ঘুরতে আসে ধৃতের বারাসাতের বাড়িতেই, রাহুলের উত্তর শুনে অবাক গোয়েন্দারা

এবার আসা যাক হত্যালীলার ব্রেকআপের হুমকি-তে। এখানেও রীতিমতো প্রশ্ন থাকতে বাধ্য। হিজবুল তাদের জেহাদের পথ ছেড়ে দিয়ে এখন কোন সালে রাজ্যে কত শিক্ষক নিয়োগের সংখ্যা পেন্ডিং পরে রয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করবে! তাও আবার পশ্চিমবঙ্গে! যেখানকার মুখ্যমন্ত্রীকে সমস্ত ধর্মের মানুষ অত্যন্ত কাছের বলে মানেন। এমনকী, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ সবসময় করে চলেছে। ভিডিও-তে হুমকি দেওয়া ব্যক্তি এমনভাবে শাসানি দিচ্ছে যেন বাংলা মুসলিমদের কাছে বসবাসের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। একটা পেশাদার জঙ্গি সংগঠন, যাদের নাম নিরাপত্তা পরিষদের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় রয়েছে, যাদের নামে বিভিন্ন রাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, সেখানে এমন এক জঙ্গি সংগঠন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মাথা চাপড়াবে! এমন ঘটনা অযৌক্তিক বলে মানা ছাড়া কোনও উপায় নেই। 

আরও পড়ুন, 'কর্ম করো-ফলের ব্যাপারে ভেবো না', রাজ্যপালের দিল্লি সফর ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে

এমনকী ভিডিও-তে যে ব্যক্তি নিজেকে জঙ্গি সংগঠনের এরিয়া কম্যান্ডার বলে দাবি করছে, সে আবার ধরে ধরে সংখ্যা বলছে শিক্ষক নিয়োগে কোনও ধরনের স্কুল বিভাগে কত প্রার্থীর নাম তালিকায় থাকলেও চাকরি এখনও হয়নি। এমন আশ্চর্যজনকভাবে পুঙ্খনাপুঙ্খ বলে তথ্য দেওয়াটা কার্যত অবাক করছে সকলকে। 

যে ভাবে কয়েক মাসের মধ্যে ১৩ হাজারেও বেশি  চাকুরি প্রার্থীকে মেরে ফেলা এবং তার সঙ্গে মন্ত্রী থেকে শুরু নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত থাকা কমিশনের কর্তা ব্যক্তিদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে তাতেও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এত সংখ্যক মানুষকে সত্যি সত্যি কেউ মেরে ফেলতে চাইলে তাহলে যুদ্ধ ঘোষণা করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। সামান্য এক ব্যক্তি আচমকা এতবড় যুদ্ধ লড়বেন কীভাবে! তাতেও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। 

আরও পড়ুন, মুকুল ইস্যু নিয়ে প্রথম শুনানি শেষ, ভরসা না পেয়েই কি আদালতে যাওয়ার ইঙ্গিত শুভেন্দুর

শনিবার সকালে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে হুমকি ভরা ভিডিও যে সেরা আলোচনার বিষয়বস্তু তাতে কোনও সন্দেহ নেই। গোটা বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেরা করা হচ্ছে এলাকার আশপাশের মানুষকে। ভিডিও-র পিছনে আদৌ হিজবুল জঙ্গি সংগঠন আছে কি না তা কোনওভাবেই বলার মতো সময় আসেনি বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। 

অনেকের আবার দাবি, দিন কয়েক আগে কলকাতা শহরের আশপাশ থেকে জিএমবি জঙ্গিদের ধরা হয়েছে। সেই ঘটনার ফায়দা তুলে কেউ ভুয়ো হিজবুল জঙ্গি সেজে এমন ভিডিও বানিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সে ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য কি? তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। ইয়ার্কি না সত্যি সত্যি মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ না দীর্ঘদিন ধরে কাজ না পওয়ার জ্বালা! গোটা ঘটনায় এখন তদন্ত চলছে। অবশ্য এখনও পর্যন্ত  হিজবুলের পক্ষ থেকে এই ভিডিও তাদের বলে দাবি করা হয়নি।