সংক্ষিপ্ত
ডোমজুড়ে হারের পর থেকেই বিজেপিতে মোহভঙ্গ হয়েছিল। তখন থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তনের কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে রবিবার সত্যি হতে চলেছে সেই জল্পনা।
জল্পনাটা শুরু হয়েছিল অনেকদিন আগেই। ডোমজুড়ে (Domjur) হারের পর থেকেই বিজেপিতে (BJP) ‘মোহভঙ্গ’ হয়েছিল। সেই তখন থেকেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rajib Banerjee) তৃণমূলে (TMC) প্রত্যাবর্তন নিয়ে কানাঘুষো অনেক কথা শোনা যাচ্ছিল। এমনকী, বিভিন্ন সময় তৃণমূল নেতাদের বাড়িতেও তাঁকে যেতে দেখা গিয়েছিল। অবশেষে সেই সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রবিবার তৃণমূলে ফিরলেন তিনি। ত্রিপুরায় (Tripura) গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) জনসভা থেকে তৃণমূলে যোগ দিলেন তিনি। যোগ দেওয়ার পর মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিষেককে আলিঙ্গনও করেন। এরপর তিনি বলেন, "স্বীকার করছি ভুল করেছিলাম। আমি অনুতপ্ত।"
একুশের বিধানসভা ভোটের (Assembly Election) মাসদুয়েক আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজীব। মমতার (Mamata Banerjee) ছবি হাতে নিয়ে চোখের জলে তৃণমূল ছেড়েছিলেন তিনি। তারপর তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। পাল্টা তাঁকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। নির্বাচনের প্রচার সভা থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের অন্য নেতারা। 'গদ্দার' তকমাও জুটেছিল রাজীবের ভাগ্যে। এরপর বিজেপির টিকিটে ডোমজুড় কেন্দ্র থেকে লড়াই করেছিলেন তিনি। কিন্তু, ফলপ্রকাশের পর রীতিমতো হতাশ হন। নিজের কেন্দ্রতেও তিনি জিততে পারেননি।
আরও পড়ুন- 'খুঁটি পুজোটা হয়েছে', ত্রিপুরার সভায় বিপ্লবদেবের সরকারকে 'বিসর্জনের' হুঁশিয়ারি অভিষেকের
ডোমজুড় আসন ছিল রাজীবের ঘরের মতোই। হাতের তালুর মতোই ওই আসন ছিল তাঁর নখদর্পণে। কিন্তু, বিজেপির টিকিটে সেখানে হারতে হয়েছিল তাঁকে। তারপর থেকেই বিজেপিতে তাঁর মোহভঙ্গ হতে শুরু করে। বিজেপির অবস্থানের বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এমনকী, রাজ্য সরকারের 'পাশে' থাকার বার্তাও দিয়েছিলেন। বাংলায় যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে সুর চড়িয়েছিল বিজেপি, ঠিক তখনই ফেসবুক পোস্টে রাজীব লিখেছিলেন, 'সমালোচনা তো অনেক হল। মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি, আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালোভাবে নেবেন না। আমাদের সকলের উচিত, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কোভিড ও ইয়াস - এই দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে থাকা।' পাশাপাশি মমতার প্রশংসাও করতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। অবশেষে সব জল্পনাকে সত্যি করে রবিবার ত্রিপুরায় অভিষেকের সভায় তৃণমূলে যোগ দিলেন তিনি।
আরও পড়ুন- কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই, কোথাও আবার রবিবার বলে ফাঁকা ট্রেন
যোগ দিয়েই ওই মঞ্চে বক্তব্য রাখেন রাজীব। তিনি বলেন, "জেদের বশে, রাগের বশে ভুল করেছিলাম। সেদিনও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আধঘণ্টা বুঝিয়েছিলেন। সেদিন অভিষেকের কথা শুনলে আজ আরও ভালো কাজ করতে পারতাম।" এরপর বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। বলেন, "বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বাংলার উন্নয়ন শুধু বিজেপি করতে পারে। আর যেন কেউ বিজেপির কথায় প্রভাবিত না হয়। বিজেপিতে যোগ দিয়ে বলতাম ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা। কিন্তু, ত্রিপুরা থেকেই বন্ধুরা বলেছিলেন এখানে সিঙ্গল ইঞ্জিন সরকারও চলছে না। তুমি বোধহয় ভুল করে ফেলেছো।"
আরও পড়ুন- রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য কম, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মৃতের সংখ্যা
এরপর তিনি আরও বলেন, "ত্রিপুরায় কোনও গণতন্ত্র নেই। বিজেপিতে গিয়ে দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্যসাথীর সমালোচনা করেছিলাম। আমি ভুল করেছিলাম, স্বীকার করছি। বিজেপি না করলেই এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। ত্রিপুরায় কোনও গণতন্ত্র নেই। অনেক আশা করে মানুষ ত্রিপুরায় পরিবর্তন এনেছিল। কিন্তু এখন মানুষ বলছেন অবাধ নির্বাচন হলেই পাল্টে দেবেন। বিজেপিকে বিশ্বাস করে আর ভুল করবেন না। আমার মতোই আপনাদের বিশ্বাসও ভেঙে ফেলবে বিজেপি।" ২২ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন রাজীব। চার্টার্ড ফ্লাইটে দিল্লি নিয়ে গিয়ে অমিত শাহের বাসভবনে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলে যোগদান করিয়েছিল বিজেপি। অবশেষে ৯ মাস পর তৃণমূলে ফিরলেন তিনি।