সংক্ষিপ্ত

প্রদীপ নিজে সব জায়গা আলোকিত করলেও তার নিচেই থেকে যায় অন্ধকার। আর এই বিষয়টিই একেবারে প্রযোজ্য কুমোরদের ক্ষেত্রেও। কুমোরদের তৈরি হাজার হাজার প্রদীপের আলোয় দীপাবলির রাতে শহর জুড়ে জ্বলন্ত শিখায় মনোরম হয়ে উঠবে গৃহস্থের অঙ্গন।

প্রদীপ (Light) নিজে সব জায়গা আলোকিত করলেও তার নিচেই থেকে যায় অন্ধকার (Dark)। আর এই বিষয়টিই একেবারে প্রযোজ্য কুমোরদের (Potter) ক্ষেত্রেও। কুমোরদের তৈরি হাজার হাজার প্রদীপের আলোয় দীপাবলির (Diwali) রাতে শহর জুড়ে জ্বলন্ত শিখায় মনোরম হয়ে উঠবে গৃহস্থের অঙ্গন। কিন্তু, যাঁদের তৈরি প্রদীপের আলোকিত হবে শহর (City), তাঁরাই রয়েছে ঘোর অন্ধকারে। চিনা টুনির (Miniature Light) দাপটে উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও দারিদ্রতা তাঁদের নিত্যসঙ্গী। ঠিক মতো খাওয়াও জোটে না পরিবারগুলির। তবুও উপায়ন্ত না দেখে আজও চাকা ঘুরিয়ে মাটির প্রদীপ বানিয়ে চলেছেন নীতিশ পণ্ডিত, সীতারাম পণ্ডিতরা।

আরও পড়ুন- সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূল্যায়ন কি আদৌও করতে পেরেছে ভারত

বীরভূমের রামপুরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুন্দিপুর যাওয়ার রাস্তার দু-ধারে শ্রীফলায় বসবাস করেন বেশ কয়েকটি পরিবার। সকলেই পেশায় মৃৎশিল্পী। কালীপুজো (Kali Puja) এলেই এক সময় এই পরিবার গুলির নাওয়া খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু, এখন সেই ব্যস্ততা হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। বৈদ্যুতিন আলোর ঝলকানি আর মোমবাতির দাপটের ফলে তাঁদের রুজিতে টান পড়েছে। ফলে ধীরে ধীরে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রজন্ম। হতাশায় পূর্ব পুরুষের পেশা ছেড়েছেন অনেকেই। অথচ একযুগ আগেও পেশা ছাড়ার চিন্তাভাবনা ছিল না তাঁদের। সে সময় মৃৎশিল্পীদের বাড়িতে ব্যস্ততা ছিল দিবারাত্রি। শিল্পীদের নিপুন দক্ষতায় ছাঁচে মাটির তাল ফেলে তৈরি হত হরেক কিসিমের প্রদীপ। এক একটার আকৃতি একেক রকমের। তারপর কাঁচা রঙে একটু ডুবিয়ে গনগনে আঁচে শুকিয়ে সুন্দর করে ঝুরিতে সাজিয়ে পৌঁছে দেওয়া হত দোকান কিংবা বাড়িতে। কিন্তু, কয়েক বছর ধরে প্রদীপের চাহিদা কমে গিয়েছে বলে জানান নীতিশ পণ্ডিত। তিনি বলেন, “মোমবাতি, টুনি বাল্ব ও রাইস ল্যাম্পের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির প্রদীপের চাহিদা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাটির প্রদীপের দাম কমলেও মানুষ মাটির প্রদীপের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন”। 

আরও পড়ুন- জন্মবার্ষিকীতে 'লৌহ পুরুষ'-কে শ্রদ্ধা রাষ্ট্রপতি-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

আরও পড়ুন- জিকা ভাইরাসে কাবু ভারতীয় বায়ুসেনা, সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সাধারণের মধ্যেও

শ্রীফলা গ্রামের ওই মৃৎশিল্পীদের ব্যবসা অর্ধশতাব্দী প্রাচীন। সে সময় কয়েকটি পরিবার বিহারের ভাগলপুর থেকে এসে লাভের আশায় রামপুরহাটের শ্রীফলা গ্রামে ব্যবসা শুরু করেছিল। খাস জমির মধ্যে ছিটেবেড়ার ঘর তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বছরের অন্য সময় তাঁরা মিষ্টির হাঁড়ি, দইয়ের ভাঁড়, চায়ের কাপ তৈরি করে কোনও রকমে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু, কালীপুজোর একমাস খাওয়া নাওয়া ভুলে প্রদীপ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। সেসময় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দোকানদাররা চাহিদা মতো অর্ডার দিয়ে যেতেন। পুজোর কয়েকদিন আগে থেকেই তা বাজারজাত হয়ে যেত। মৃৎশিল্পী সীতারাম পণ্ডিত বলেন, “এবার এখনও তেমন অর্ডার আসেনি। অথচ একটা সময় ছিল যখন ৩০ হাজারেরও বেশি প্রদীপ বিক্রি করা হয়েছে। একদিকে যখন মাটির প্রদীপের চাহিদা ও দাম দিন দিন কমছে, ঠিক তখনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রদীপ তৈরির কাঁচা মালের দাম। বৈধরা গ্রাম থেকে মাটি আনতে একসময় দিতে হতো ১৫০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে দেড় থেকে দু’হাজার টাকা। বেড়েছে জ্বালানির দামও। এই মন্দাবাজারে নয় সদস্য নিয়ে বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।” তবে মৃৎশিল্পীদের একটাই আশার আলো দীপাবলির প্রদীপ হয়তো একদিন তাঁদের ঘরকেও আলোকিত করবে। সেই আশাতেই আজও প্রদীপ বানিয়ে চলেছেন নীতিশ, সীতারাম পণ্ডিতরা।

YouTube video player