সংক্ষিপ্ত

  • দিনভর  ফোন করলেও পাওয়া যায়নি শান্তা সরকারকে
  • অবশেষে শনিবার বিকেলে তিনি ফোন ধরেন 
  • তাঁর জবাব রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো 
  • তাঁর আচরণে যেন সবকিছুই স্বাভাবিক থাকার দাবি  
     

কাটমানি বিতর্কে ভাইস-চেয়ারপার্সনের পদ চলে গিয়েছে। এই মর্মে শুক্রবার বিজ্ঞপ্তিও ইস্যু করা হয়েছে। পুনর্গঠন করা হয়ে গিয়েছে সোনারপুর রাজপুর পুরসভার পৌরপ্রধান পারিষদ। কিন্তু, তাঁর কাছে নাকি নেই কোনও খবর। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি দেবজ্যোতি চক্রবর্তীর সঙ্গে টেলিফোনিক কথোপকথনে এমনই দাবি করলেন সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার ভাইস-চেয়ারপার্সন পদ থেকে অপসারিত শান্তা সরকার। 

ভাইস-চেয়ারপার্সন থেকে শান্তা সরকার-কে শুধু আপাতত সরিয়েই দেওয়া হয়নি। সাময়িকভাবে নতুন কোনও ভাইস-চেয়ারম্যানও নিয়োগ করা হয়নি। ভাইস-চেয়ারপার্সন পদে থাকাকালীন শান্তা সরকার যে দফতরগুলি দেখভাল করতেন, সেই দফতরগুলি আপাতত চেয়ারম্যান ডক্টর পল্লব দাস নিজে দেখভাল করবেন বলে ঠিক হয়েছে। নতুন কোনও ভাইস-চেয়ারম্যান নিয়োগ না করে আপাতত পদটিকে নিস্ক্রিয় করে রাখা হচ্ছে বলেই পুরসভার সূত্রে খবর। 

শান্তা সরকার-কে যে দুর্নীতির দায়ে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে কানাঘুষো খবর ছিল। এই সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়ে যায় শুক্রবার। কলকাতা থেকে সোনারপুর-রাজপুর পুরসভায় সবুজ সঙ্কেত পৌঁছতেই তৈরি করে নেওয়া হয় পৌরপ্রধান পারিষদ পুনর্গঠনের বিষয়টি। আশ্চর্যের বিষয় এতকিছু হল অথচ শান্তা সরকার কিছু জানলেন তা কেমন করে! 

এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হাতে শুক্রবার সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার পৌরপ্রধান পারিষদের পুনর্গঠনের চিঠির প্রতিলিপি পৌঁছতেই শান্তা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, তিনি ফোন ধরেননি। শনিবার বিকেলেই শান্তা সরকার নিজেই ফোন করেন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি দেবজ্যোতি চক্রবর্তীর মোবাইল নম্বরে। তাঁর অপসারণ নিয়ে প্রশ্ন করতেই শান্তা জানান, এই বিষয়ে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই। এমনকী তিনি কোনও লিখিতও পাননি। তাই যখন তিনি লিখিত পাবেন তখন নিজেই ফোন করে তাঁর অপসারণ নিয়ে মুখ খুলবেন। এই বলেই ফোন কেটে দেন শান্তা সরকার। 

কখনও কখনও অপ্রিয় সত্য তেতো লাগে। শান্তা সরকারের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে তিনি যে ভাইস-চেয়ারপার্সন পদে আসিন ছিলেন সেটা-তে কোনও নিয়োগমূলক পদ নয়। এই পদে আসিন হতে যে দলের পুরবোর্ড সেই দলের একটা সম্মতি লাগে। এরপর পুরপারিষদের বৈঠকে নাম প্রস্তাব হয়। সেই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে পুরপারিষদের সম্মতি নিয়ে পদে আসিন হতে হয়। এর জন্য একটি রেজিস্ট্রারে সই করতে হয়। সুতরাং, অপসারিত হওয়ার পরও শান্তা সরকার কোন লিখিত চিঠির অপেক্ষায় রয়েছেন তা বোঝা যায়নি। এমনকী, তিনি কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেওয়ায় প্রশ্ন করার সুযোগও পাননি এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি। 

জানা গিয়েছে, পুরনো পৌরপ্রধান পারিষদ যে ভেঙে দেওয়া হয়েছে তার চিঠি পারিষদ সদস্যের হাতে শুক্রবার সকালেই পৌঁছে গিয়েছিল। কারণ, এই চিঠিটি ছিল ,সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার পৌরপ্রধান পারিষদের পুনর্গঠনের এবং এতে কোন কোন সদস্য আছেন তাদের নামের উল্লেখ ছিল এখানে। সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার চেয়ারম্যানের সই করা এই চিঠি যথেষ্ট বুঝে নেওয়া পক্ষে যে শান্তা সরকারের স্থান আপাতত পৌরপ্রধান পারিষদে নেই। যদি স্থান থাকত তাহলে তাঁর নাম চেয়ারম্যানের পরেই থাকা উচিত। শান্তা সরকার এই সত্যটা যত তাড়াতাড়ি বুঝে যান ততই ভাল বলে মনে করছেন দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের একটা অংশ। 
 
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন কাটমানি নেওয়া নেতা-নেত্রীদের দলে তিনি রাখবেন না। এই নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই এখন জেলায় জেলায় কাটমানি নেওয়া নেতা-নেত্রীদের নাম সামনে আসছে। এমনকী কাটমানি নিয়ে নবান্নে টোলফ্রি নম্বরও খোলা হয়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানাতে পারেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাটমানি ইস্যুতে এতটাই কড়া অবস্থান নিয়েছেন যে তাতে এখন ত্রাহি রব পড়েছে। শান্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এতটাই প্রবল যে তাঁকে পুরসভার কোনও দায়িত্বে রাখা হয়নি। তাঁর কাছে ছিল বিল্ডিং প্ল্যানিং, পিএনসিপি, সাধারণ প্রশাসন ও মিউটেশনের মতো দফতর। এগুলি সবই তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পৌরপ্রধান পারিষদ-এর পুনর্গঠনের পর যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে পৌরপ্রধান ডক্টর পল্লব দাসের নাম সবার উপরে রয়েছে। এরপরে রয়েছে নজরুল আলি মণ্ডল, বিভাস মুখোপাধ্যায়, রঞ্জিত মণ্ডল, অমিতাভ চৌধুরী, কার্তিক বিশ্বাস। 

ভাইস-চেয়ারপার্সন শান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরেই পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে বহুবার বহু মানুষ অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। অভিযোগ, মিউটেশন, ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে নানা কাজে কাটমানি নিতেন শান্তা সরকার। তাঁর নেতৃত্বে সোনারপুর-রাজপুর পুরসভায় একটি চক্রও তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ। শান্তা সরকারকে সামনে রেখে এই কাটমানির পুরো চক্রটাই চলে সঞ্জীব সরকার ওরফে পিঙ্কু-র আঙুলিতে বলেও অভিযোগ। সঞ্জীব সরকারের বোন হলেন শান্তা। সঞ্জীবের স্ত্রী আবার কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভাইঝি। যার জেরে খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে এই ভাই-বোন জুটির দুর্নীতি নিয়ে অনেকেই সরব হয়েও বিশেষ কিছু করতে পারেননি। কারণ, শোভন চট্টোপাধ্যায় তখন ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। 

অভিযোগ, যে কোনও ধরনের ট্রেড লাইসেন্স করতে বা মিউটেশন করাতে বড় অঙ্কের অর্থ দিতে হত। কেউ এলাকায় কোনও ছোট কারখানা খুলতে চাইলেও অন্তত ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হত বলেও অভিযোগ। কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্যে গরিবদের জন্য যে আবাস যোজনা রয়েছে তাতেও শান্তা দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ। 

সম্প্রতি শান্তার দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার পুরপিতা ডক্টর পল্লব দাস। তাঁকে বাড়িতে ঢুকে স্ত্রী ও মেয়ের সামনে শান্তার দাদা সঞ্জীব সরকার ও তাঁর দলবল হেনস্থা করে বলেও অভিযোগ। এমনকী পৌরপ্রধানকে থুঁতুর ছিঁটেও দেওয়া হয়। এই ঘটনায় এতটাই অপমানিত বোধ করেছিলেন ডক্টর পল্লব দাস যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সোনারপুর-রাজপুর পুরসভায় পা রাখেননি।