সংক্ষিপ্ত
- হুগলির পোলবার বাসিন্দা আলিম মণ্ডল
- পেশায় স্কুলশিক্ষকের অর্কিড সংগ্রহের শখ
- সংগ্রহে প্রায় এক হাজার অর্কিড
- গ্রামবাসীদের নিরুৎসাহে হতাশ শিক্ষক
উত্তম দত্ত, হুগলি: ডেন্ড্রোবিয়াম, ক্যাটেলিয়া, রেংকো, ভ্যান্ডা, ফ্যালানোসিস। কী, নামগুলো অচেনা মনে হচ্ছে? সাধারণ লোকের কাছে অচেনাই, তবে যাঁরা এ নিয়ে চর্চা করেন তাঁদের কাছে এই নামগুলি কিছুটা চেনা হতেই পারে। আসলে এগুলি বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড। আর এই সমস্ত অর্কিড যদি একসঙ্গে দেখতে চান তাহলে আপনাকে একবার আসতেই হবে আলিম মণ্ডলের বাড়িতে।
হুগলি জেলার পোলবা থানা এলাকার বালিটানা গ্রাম। এই গ্রামেই একটি বিশাল বাড়িতে থাকেন স্কুল শিক্ষক আলিম মণ্ডল। তাঁর বড় শখ অর্কিড সংগ্রহ করার। আর সেই শখেই গোটা বাড়িটিকে যেন অর্কিড হাউজ বানিয়ে ফেলেছেন তিনি! প্রায় ষোল থেকে সতেরো রকম প্রজাতির অর্কিড রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। সবমিলিয়ে বাড়িতে রয়েছে প্রায় এক হাজার অর্কিড গাছ। শখ পূরণ করতে কোনও কার্পণ্যও করেন না এই স্কুল শিক্ষক।
বাড়ির ভিতরে প্রায় পাঁচ কাঠা জায়গা জুড়ে কংক্রিটের উঠোনে জুড়ে শুধুই অর্কিডের চাষ। গোলাপি, কমলা, হলুদ, বেগুনি, লাল- এমন আরও কত রংয়ের ফুল, যা দেখলে চোখ ভরে যায়। সেই জন্যই বেশ কিছু অর্কিডপ্রেমী বিভিন্ন সময় তাঁর বাড়িতে ছুটে যান। শুধু টব নয়, কোথাও সেগুন কাঠ, কোথাও নারকেল ছোবড়া আবার কোথাও সরু পাইপও ব্যবহৃত হয়েছে এই অর্কিড চাষের জন্য। আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে বড়ো গাছের গুঁড়ি জড়িয়ে অর্কিড উঠেছে।
অর্কিড চাষের প্রায় সমস্ত উপকরণই বাড়িতে ঠাসা। হঠাৎ অর্কিডের শখ জাগল কেন? প্রশ্ন করকতেই ৫৯ বছরের বয়সি স্কুল শিক্ষক জানান, বছর দু'য়েক আগে এক বন্ধু তাঁকে একটি অর্কিড উপহার দিয়েছিলেন। তাঁর ওই অর্কিডটি ভাল লেগে যায়। এর পরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাড়ির বিশাল উঠোনে অর্কিড চাষ করবেন। সেই শুরু। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তিনি অর্কিডের চারা সংগ্রহ করতে শুরু করেন।
সুদূর থাইল্যান্ড থেকেও অনলাইনে তিনি অর্কিড কেনেন। এছাড়া কেরালা থেকেও প্রচুর অর্কিড তাঁর সংগ্রহে আসে। সারা দেশের অসংখ্য অর্কিড প্রেমীদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমে ক্রমে তাঁর আলাপ হয়। এখন তাঁর বাড়ি হয়ে উঠেছে অর্কিড হাউজ। তবে আলিম স্যরের দুঃখ, তাঁর গ্রামের কারও এই অর্কিডের বিষয়ে কোনও আগ্রহ নেই। সবচেয়ে বড় হতাশা, তিনি স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েও তাঁর কোনও ছাত্রছাত্রীদের মনে এই অর্কিডের সম্পর্কে কোনও আগ্রহ জাগাতে পারেননি। দেশ বিদেশ থেকে কত মানুষ তাঁর এই বাগান দেখতে আসেন, কিন্তু নিজের গ্রামের লোকজন এ বিষয়ে এক্কেবারে উদাসীন। অর্কিডের বাগানে বসে এই হতাশাই গ্রাস করে মাস্টারমশাই।