সংক্ষিপ্ত

বঙ্গ বিজেপির (Bengal BJP)-র যুব মোর্চার নয়া কমিটি বেছে নিলেন সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder)। নয়া কমিটিতে রাজনীতির বাইরের পেশার লোকের ছড়াছড়ি।
 

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে, দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) উত্তরসূরি হুসাবে আনা হয়েছিল উদ্ভিদবিদ্যার (Botany) অধ্যাপক সুকান্ত মজুমদারকে (Sukanta Majumder)। দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, 'আমাকে অনেকে পছন্দ করেন না। শিক্ষিত লোক চাইছিলেন। তাই শিক্ষিত লোক দিলাম।' এবার সেই শিক্ষিত লোকের হাত ধরে, বিজেপি-র যুব মোর্চায় স্থান পেলেন রাজনীতির চেনা মুখের বাইরে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের এক ঝাঁক পেশাদাররা। আসলে, বিধানসভা ভোটের ধাক্কার পর, রাজনীতির বাইরের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যক্তিত্বদের রাজনীতির অঙ্গনে আনার এক নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে গেরুয়া শিবির। 

বিজেপি-তে বরাবরই সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে, সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের। তবে, নয়া রাজ্য সভাপতির হাত ধরে সেই চিরাচরিত ধারণায় আসছে বদল। তার প্রথম ছাপ দেখা গেল তাঁর তৈরি নয়া যুব কমিটিতে। দিলীপ ঘোষের আমলে, যুব মোর্চার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ (Soumitra Khan) এবং সহ-সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা (Shankudev Panda)। দুজনেই তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) থেকে আসা, মূলত রাজনীতিবিদ। আরও যাঁরা ছিলেন কমিটিতে তাঁদের সকলেরই প্রথম পরিচয়, রাজনীতিবিদ। 

সুকান্ত মজুমদারের তৈরি যুব মোর্চায় সভাপতির পদ পেয়েছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইন্দ্রনীল খাঁ (Indranil Khan)। অন্যতম সহ-সভাপতি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের (Presidency University) ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গৌরব লামা (Gaurab Lama)। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র গৌরব দিল্লির জেএনইউ-তে (JNU) পড়ার সময়ে এবিভিপি-র (ABVP) সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। আরেক সহ-সভাপতি হয়েছেন আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tiwari)। এছাড়াও, বঙ্গ বিজেপির নয়া যুব কমিটিতে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, আইনজীবীদের ঠাসাঠাসি। 

নতুন যুব মোর্চার কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন আরও দুই চিকিৎসক - অপূর্ব দত্ত এবং সৌরভ সিং, চার জন ইঞ্জিনিয়ার - অভিষেক সেনগুপ্ত, সৌরভ চক্রবর্তী, সৌনাভ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উপমন্যু ভট্টাচার্য, আরও চার জন আইনজীবী - অর্ক ভট্টাচার্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কানাই দত্ত ও সৌরভ মণ্ডল এবং বেসরকারি কলেজের এক অধ্যাপক - অভ্র সেন। সবথেকে বড় কথা কমিটিতে স্থান পাওয়া এই সকলেরই বয়স ৩৫-এর নীচে, এমনটাই দাবি বিজেপির। সব মিলিয়ে বঙ্গ বিজেপির যুব মোর্চার এমন শিক্ষিত কমিটি এর আগে কখনও দেখা যায়নি। 

আসলে, এর পিছনে অনেকটাই রয়েছে গত বিধানসভা ভোটের শিক্ষা। নির্বাচনের ব্যর্থতার মূল্যায়নে দেখা গিয়েছে, দিলীপ ঘোষ গ্রামাঞ্চলে অনেক সাফল্য এনে দিলেও, কলকাতা বা অন্যান্য শহরাঞ্চলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ভাল নয়। বাংলার শহুরে মানুষ বিজেপিকে গ্রহণ কেন করছে না? দেখা গিয়েছে, নেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে প্রশ্ন উঠেছে। বিশিষ্টজনদের সম্পর্কে দিলীপ ঘোষের তীর্যক মন্তব্যও একেবারেই ভালভাবে নেয়নি শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা। তাই, দলের ভাবমূর্তি বদলের প্রয়াস শুরু হয়েছে। তার প্রথম ধাপ ছিল সুকান্ত মজুমদারকে দিলীপ ঘোষের উত্তরসূরী বাছাই। এবার যুব মোর্চার নয়া কমিটিও সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।

সুকান্ত মজুমদার অবশ্য বলেছেন, রাজনীতির সমৃদ্ধির জন্যই সব ক্ষেত্রের মানুষের যোগদান দরকার। প্রত্যেক মানুষেরই নিজ নিজ ক্ষেত্রের বিষয়ে ভাল অভিজ্ঞতা থাকে। তাকে, সাধারণ মানুষের কাজে লাগানোর জন্যই বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতিদের নেতৃত্বে নিয়ে আসছে বিজেপি।