সংক্ষিপ্ত

শুক্রবার সকাল থেকেও দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে ধরপাকড় চলে আন্দোলনকারীদের। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সমাজের নানা স্তর থেকে। এবার প্রশাসনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হল বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। 
 

৮৪ ঘন্টার অনশনকে উৎখাত করা হল মাত্র ১৫ মিনিটে। টেনে হিঁচড়ে বলপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হল অনশনরত চাকরীপ্রার্থীদের। টানা হিঁচড়ার জেরে আন্দোলনকারীদের অনেকেই অসুস্থ হয় পড়েন, অজ্ঞান হয়ে যান বেশ কয়েকজন। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে 'করুণাহীনতার' সাক্ষী থাকল করুণাময়ী। ঘটনাকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় করুণাময়ী চত্ত্বর। শুক্রবার সকাল থেকেও দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে ধরপাকড় চলে আন্দোলনকারীদের। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সমাজের নানা স্তর থেকে। এবার প্রশাসনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হল বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। 

সরাসরি নিয়োগের দাবিতে গত সোমবার থেকেই  পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সামনে বিক্ষোভ করেন ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ ট্রেনিং প্রাপ্ত চাকরি প্রার্থীরা। মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশনে বসেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আচমকাই আন্দোলনকারীদের তুলে দেয় পুলিশ। চলে ধড়পাকড়ও। পুলিশের এই ন্যক্কারজনক আচরণের প্রতিবাদে আজ সারা বাংলা প্রতিবাদ দিবস পালন করল বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। শিক্ষা আন্দোলনের উপর এহেন আক্রমনের প্রতিবাদে শুক্রবার দিনভর  বিক্ষোভ মিছিল সভা অনুষ্ঠিত হল পূর্ব মেদিনীপুরের মেচাদা, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা, হাওড়ার বাগনান, বীরভূমের রামপুরহাট, মুর্শিদাবাদের ডোমকল-সহ একাধিক জেলায়। 

মেচেদার একটি সভায় দাঁড়িয়ে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা অভিযোগ জানান, "সরকারের নিয়োগের কোনো সদিচ্ছা নেই।  নিয়োগের নামে খেলা হচ্ছে। পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে প্রশমিত করার কৌশল চলছে। " অবিলম্বে ২০১৪ এবং ২০১৭ টেট উত্তীর্ণদের সকলের একত্রে নিয়োগের ভ্যাকান্সি প্রকাশ ও মেধা তালিকার ভিত্তিতে দুর্নীতিমুক্তভাবে নিয়োগের দাবিও তুললেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক। "২০২০ তে মুখ্যমন্ত্রী সাড়ে ১৬ হাজার নিয়োগের ঘোষণা করে বলেছিলেন ধাপে ধাপে সকল টেট উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেওয়া হবে কিন্তু আজ অব্দি তা সম্পূর্ণ হয়নি। তারপর  শিক্ষামন্ত্রী গত বিধানসভার অধিবেশনে জানিয়েছেন প্রাথমিকে ১ লক্ষ ৯০ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য। তবে মাত্র ১১ হাজারের জন্য বিজ্ঞাপন কেন ?" সংযোজন আনন্দ হাণ্ডার।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে আবারও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখায় ২০১৪ সালে টেট উত্তীর্ণদের একাংশ। আন্দোলনকারীদের সমর্থনে এগিয়ে আসে বাম ছাত্র-যুবরাও। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে বলপূর্বক আন্দোলনরত চাকরীপ্রার্থীদের টেনে হিঁচড়ে জোড় করে তোলার প্রতিবাদে সল্টলেক সিটি সেন্টার থেকে বিকাশ ভবন পর্যন্ত মিছিলের ডাক দেয় এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই নেতা-কর্মীরা। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, এসএফআই-এর সর্বভারতীয় সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি প্রতীক উর রহমান। কিন্তু মাঝপথেই পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয় মিছিল। বিধাননগরের কাছে রাস্তার মাঝেই অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের সঙ্গে কার্যত ধস্তাধস্তি বেঁধে যায় মীনাক্ষীদের। একের পর এক আন্দোলনকারীকে টেনে হিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তোলে পুলিশ। 

পুলিশি ধরপাকড়ের জেরে ফের একবার নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাফ নামানো হয়। মোতায়ন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনীও। কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে বিকাশ ভবন চত্ত্বর। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ গোটা এলাকা। 

আরও পড়ুন-
২০১৪ বনাম ২০১৭, টেট চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে পালটা আন্দোলনে নামলেন টেট চাকরিপ্রার্থীরাই
ভারতের সীমানায় ‘বিচিত্র’ পরিস্থিতি, মোকাবিলা করতেই ‘অগ্নিপথ’ স্কিম চালু করেছে কেন্দ্রের মোদী সরকার?

‘রানিকে খান খান করে ছাড়ব’, শাসকদলকে কড়া হুঁশিয়ারি সুকান্ত মজুমদারের, প্রয়োজনে অস্ত্র তুলে নেওয়ার বার্তাও