সংক্ষিপ্ত

বাজার সরানোর নামে তৃণমূল নেতার উপস্থিতিতে তাণ্ডব

বীরভূমের কীর্ণাহারের ঘটনা

দরিদ্র ব্যবসায়ীদের ছাউনি ভেঙে, মিশিয়ে দেওয়া হল মাটিতে

সেইসঙ্গে পুলিশের সামনেই চলল দেদার সবজি ও ফল লুঠপাট

 

আশিস মণ্ডল: সবজি বাজার সরানোর নামে, শুক্রবার তৃণমূল নেতার উপস্থিতিতে কার্যত তাণ্ডব চলল বীরভূমের কীর্ণাহারে। ঝুড়ি নিয়ে ফুটপাতে বসে থাকা, দরীদ্র সবজি ও ফল ব্যবসায়ীদের ত্রিপলের ছাউনি ভেঙে, মিশিয়ে দেওয়া হল মাটিতে। পুলিশের সামনেই চলল দেদার লুঠপাট। যার জেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষগুলো। সেই তাণ্ডব ও লুঠতরাজের ছবি তুলতে গিয়ে নিগ্রহের শিকার হন চিত্র-সাংবাদিকরাও। তৃণমূল আশ্রীত দুষ্কৃতীরা এক চিত্র-সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই বীরভূমের কীর্ণাহারে আমদপুর-কাটোয়া রাস্তার ধারে, নিকাশিনালার উপর অস্থায়ী সবজি বাজার বসে। মূলত গ্রামগঞ্জের দরিদ্র মানুষ প্রতিদিনই ওই স্থানে দু-তিন ঘণ্টার জন্য অস্থায়ীভাবে বাজার বসায়, সেভাবেই তাদের সংসার চলে। শুক্রবার সকালে এই অস্থায়ী বাজার সরানো নিয়েই রীতিমতো ধুন্ধুমার বাধে। তৃণমূল কংগ্রেসের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান তথা তৃণমূল নেতা শিবরাম চট্টোপাধ্যায়ের 'গুন্ডাবাহিনী' সেই বাজার ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, তৃণমূল আশ্রীত দুষ্কৃতীরা ওই প্রচুর সবজি ও ফল-ও লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন দরীদ্র ব্যবসায়ীরা। কান্নায় ভেঙে পড়া ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চোখের সামনেই তাদের অস্থায়ী ছাউনি একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের সামনেই চলে এই চরম অরাজকতা।

ঘটনার প্রতিবাদে ওই ব্যবসায়ীরা ঘণ্টাখানেকের জন্য আমদপুর-কাটোয়া রাস্তা অবরোধও করেন। পরে পুলিশ-এর উদ্যোগে সেই অবরোধ উঠে যায়। তাদের অভিযোগ পঞ্চায়েত প্রধান গুন্ডাবাহিনী নিয়ে এসে তাদের সব লুঠ  করে নিয়ে গিয়েছে। এমনকী বহু সবজি ও ফল রাস্তায় ফেলে পায়ে পিষে নষ্টও করা হয়েছে। সামান্য সবজি বিক্রি করেই তারা সংসারের খরচ মেটান। পুলিশের সামনেই সব লুঠ হয়ে যাওয়ার পর তাদের বেঁচে থাকাই এখন প্রশ্নের মুখে। কীকরে মুখে তোলার ভাতটুকু জোগার করবেন, তাই ভেবে পাচ্ছেন না ওই অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, পঞ্চায়েত প্রধান শিবরাম চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, রাস্তাটিকে যানজট-মুক্ত করার জন্য ওই ব্যবসায়ীদের আগেই সুপার মার্কেটে উঠে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। মাইকে করে এই বিষয়ে প্রচারও করা হয়েছিল। কিন্তু, তারা সেই কথা কানে তোলেনি। সেই কারণেই এদিন পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই বাজার তুলে দিতে যাওয়া হয়েছিল। তবে তাদের কেউ লুঠপাট চালায়নি বলেই দাবি করেছেন তিনি। তাঁর সাফাই, বাজার তোলার সময় কিছু দুষ্কৃতী তাঁদের লোকেদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। তারাই লুঠপাট চালিয়েছে।

বিজেপি নেতা তারকেশ্বর সাহার দাবি, তাঁদের কর্মীর দোকানই বেছে বেছে ভাঙচুর করা হয়েছে। খুচরো সবজি ব্যবসায়ীদের জিনিসপত্র লুঠ করা হয়েছে। রাজ্যে অরাজকতা চলছে।