সংক্ষিপ্ত
সম্প্রতি বিজেপি ছেড়ে ঘর ওয়াপসি হয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর রাজীবের এই প্রত্যাবর্তনকে মোটেই ভালোভাবে গ্রহণ করেন নি শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার আরেক বিরূপ মন্তব্য শোনা গেল তার গলায়। আচমকা বিরোধী দলনেতাকে ভাই বলে সম্বোধন করে ক্ষমাপ্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ঠিক কী কারণে এহেন মন্তব্য তাই নিয়েই শুরু জল্পনা।
'রাজনীতি এক বড় বালাই' আর এই ছবি বারবার মিলেছে বঙ্গ রাজনীতির অন্দরে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের (Bengal Election 2021) আগে বিজেপির ঝড়ে মেতেছিলেন বঙ্গ রাজনীতির শাসক দলের একাধিক নেতা নেত্রীরা। তাঁদের সকলের দল ত্যাগের পিছনে যুক্তি ছিল 'তারা দলে থেকে ও কাজ করতে পারছিলেন না।' দলবদলুদের তালিকায় নাম লেখান শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary), রাজীব ব্যানার্জী (Rajib Banerjee), সোনালী গুহর (Sonali Guha) মতো তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা নেত্রীরাও। একসময় যারা ছিলেন তৃণমূল দলের অন্যতম কাঠামো নির্বাচনের আগেই তারাই তৃণমূল ছেড়ে ধরেছিলেন বিজেপির হাত। এই দলবদলুদের 'গদ্দার' তকমাও দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। প্রচার সভা থেকে সাফ গলায় উচ্চ স্বরে বলেছিলেন 'যে সকল গদ্দাররা শুধুমাত্র সুবিধা ভোগের কারণে বিজেপিতে গেছে তাঁদের কোনোভাবেই ক্ষমা করবেন না তৃণমূল নেত্রী।' এরপর বিধানসভা নির্বাচনে ছক্কা হাঁকিয়ে ২০০-এর বেশি আসনে জয়লাভ করে তৃতীয়বার বাংলার মসনদের অধিকারী নির্বাচিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর ঠিক তারপর থেকেই এই দলবদলুদের অধিকাংশই চেষ্টা করতে থাকেন পুনরায় দলে ফেরার। যদিও প্রথমার্ধে এই বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলে নি তৃণমূল পাল্টা পুরোনো সিদ্ধান্তেই অবিচল থেকে জানানো হয় গদ্দারদের ফিরিয়ে নেবে না দল। তবে মাত্র কয়েকমাস কাটতে না কাটতেই মিললো একেবারে উল্টো ছবি। সম্প্রতি কিছুদিন আগেই তৃণমূলে ফায়ার এসেছে সব্যসাচী দত্ত (Sabyasachi Dutta)যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসু (Sujit Basu)। এরপর আবার গত রবিবার ত্রিপুরায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সভা থেকে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন হয়েছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rajib Banerjee)। এরপর থেকেই দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। মঙ্গলবার আর এক বিরূপ মন্তব্য করতে শোনা যায় তাঁকে। হঠাৎই ক্ষমা চেয়ে বসলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) কাছে।
মঙ্গলবার নিজের কেন্দ্রে একটি কালী পুজোর উদ্বোধনে এসেছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। সেখানে মঞ্চে মাইক হাতে গান ধরেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। “আমি সব পারেতেই আছি গাঙের জলে ভাসিয়ে দিয়ে ডিঙা। আমি দুই নদীতেই নাচি, একবার চলে যাব মা বলে, একবার চলে যাব মোদীর কাছে। দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা-যমুনা। মমতাদি এক কোণে মোদীজি আরেক কোণে।' গান থেকে বিষয়টা স্পষ্ট যে সুরের ছন্দে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বিঁধেছেন তৃণমূল (TMC) সাংসদ।
তবে শুধু রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ই (Rajib Banerjee) নন, নিশানা করতে ছাড়েন নি শুভেন্দু অধিকারীকেও (Suvendu Adhikari)। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, 'তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া নেতারা ফিরে আসবেন। শুভেন্দু রাগ করিস না ভাই। অনেক কথা বলে ফেলেছি। কখন কোনওদিন তুইও চলে আসবি, তার তো কোনও ঠিক নেই। যাদের যাদের সম্বন্ধে সমালোচনা করেছিলাম, তাদের সবাইকে বলছি কেউ রাগ করিস না। তখন তোরা তৃণমূলের (TMC) বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলি। তাই বলেছিলাম। আবার কবে কোনদিন চলে এসে আমার চেয়ে তৃণমূলের বেশি কাছের হয়ে যাবি।' এককথায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rajib Banerjee) প্রত্যাবর্তন যে তিনি একেবারেই ভালোভাবে গ্রহণ করেন নি তা আবার স্পষ্ট বোঝালেন তিনি।