সংক্ষিপ্ত
সোমনাথ কর্মকার সরাসরি ক্যামেরার সামনে কিছু না বললেও তিনি এখন ঝালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান পদের দাবিদার হওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে কংগ্রেসও ঝালদা পৌরসভা পাঁচটি আসন নিয়ে সেখানে বোর্ড গড়ার চেষ্টা করছে।
পুরুলিয়া জেলার (Purulia District) তিনটি পৌরসভার (WB Municipal Election 2022) মধ্যে এই প্রথম ঝালদা পৌরসভায় খাতা খুলল তৃণমূল (TMC)। কিন্তু, পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেও ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে পারেনি ঘাসফুল শিবির। ঝালদা কংগ্রেসের (Congress) গড় বলে পরিচিত। ঝালদা পৌরসভায় (Jhalda Municipality) কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও এবারেও ৫টিআসন ধরে তাদের নিজেদের জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে। তবে ঝালদা পৌরসভায় ঘাসফুল ফুটলেও বোর্ড গড়তে দল থেকে বহিষ্কৃত জয়ী নির্দল প্রার্থী (Independent Candidate) সোমনাথ কর্মকারের উপরই এখন ভরসা শাসক দলের।
ঝালদা পৌরসভার মোট ১২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পায় ৫টি আসন, কংগ্রেস ৫টি ও নির্দল পায় ২টি আসন। ঝালদা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী শিলা চট্টোপাধ্যায়। নির্দল থেকে জয়লাভ করার পরেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি জানান, নির্দল থেকে জয়ী হলেও তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে থেকে কাজ করতে চান। আর তাঁর যোগদানের ফলে তৃণমূলের আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬। কিন্তু, বোর্ড গঠন করতে হলে তৃণমূলের ম্যাজিক ফিগার হতে হবে ৭টি। সেক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী নির্দল প্রার্থী সোমনাথ কর্মকারই এখন ভরসা ঘাসফুল শিবিরের।
আরও পড়ুন- রাজ্য বিজেপি সভাপতির গড়ে গোহারা গেরুয়া শিবির, ভাল ফল বামেদের
এই ওয়ার্ডে জয়ী হওয়ার পর বহিষ্কৃত এই তৃণমূল নেতা বলেন, "আমি তৃণমূলে ছিলাম তৃণমূলেই আছি। দল আমার সাসপেনশন তুলে নিলে তারপর সিদ্ধান্ত নেব।" তবে এখনও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বহিষ্কৃত ওই নেতার সাসপেনশন তুলে নেয়নি। এমনকী, এই বিষয়ে লিখিতভাবেও কিছু জানানো হয়নি। সেক্ষেত্রে সোমনাথ কর্মকার তৃণমূলে আসা বা ঝালদা পৌরসভায় তৃণমূলের বোর্ড তৈরি করা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আরও পড়ুন- জীবনে প্রথম হার পুরুলিয়া পুরসভার বিজেপি প্রার্থীর, বিধায়ককে হারিয়ে চ্যালেঞ্জ জয় তৃণমূলের
এদিকে সোমনাথ কর্মকার সরাসরি ক্যামেরার সামনে কিছু না বললেও তিনি এখন ঝালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান পদের দাবিদার হওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে কংগ্রেসও (Congress) ঝালদা পৌরসভা পাঁচটি আসন নিয়ে সেখানে বোর্ড গড়ার চেষ্টা করছে। ভিতরে ভিতরে সোমনাথ কর্মকারকে সঙ্গে নিয়ে অন্য কোনও জয়ী প্রার্থীর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সেখানে বোর্ড গঠন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, তৃণমূল যখন প্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল সেই তালিকায় নাম ছিল সোমনাথ কর্মকারের। পরে যখন দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ হয় তখন সেই জায়গায় সোমনাথ কর্মকারকে বাদ দিয়ে প্রদীপ কর্মকারকে তৃণমূল প্রার্থী করা হয়। বিক্ষুব্ধ সোমনাথ কর্মকার তখন সূর্য ছাপ প্রতীক নিয়ে নির্দল থেকে দাঁড়ান। সোমনাথ বনাম প্রদীপ সমানে সমানে টক্কর হয়েছে এই পুরসভার নির্বাচনে।
সোমনাথ কর্মকার
এ প্রসঙ্গে পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বাগমুন্ডি বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, "৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সোমনাথ কর্মকার কংগ্রেসেই ছিলেন। পরে তৃণমূলে যান। এখন তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নির্দল থেকে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেছেন। ওঁর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। যেদিন ঝালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন হবে সেদিন দেখতে পাবেন কে চেয়ারম্যান হচ্ছেন। তাই এখন থেকে ঝালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ আছে বলে আমি দেখতে পাচ্ছি না। সোমনাথ কর্মকারকে তৃণমূল কংগ্রেস তো ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছে। তাহলে এখন তাঁকে আবার দলে টানার মানে কী? তার মানে তৃণমূল কংগ্রেসের নীতি বলে কিছুই নেই। এটা মানুষ ভালো চোখে দেখবে না।"
আরও পড়ুন- 'দেদার ছাপ্পা দিয়েও জয় আটকাতে পারেনি তৃণমূল', বীরভূমে জেলে বসে জয়ী সিপিএম প্রার্থী
তবে তৃণমূল কংগ্রেস বা কংগ্রেস যে যাই বলুক। রাজ্য জুড়ে বেশিরভাগ পৌরসভা তৃণমূল দখল করলেও ঝালদা পৌরসভায় এককভাবে তৃণমূলের বোর্ড গঠনে হিরোর ভূমিকায় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সোমনাথ কর্মকার ওরফে রঞ্জন। কারণ সূর্য ছাপ প্রতীক নিয়ে নির্দল থেকে দাঁড়িয়ে ১৯ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছেন শাসকদলের ঘাসফুল প্রতীক চিহ্নে দাঁড়ানো প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রদীপ কর্মকারকে। আর এই জয়ের মধ্যে দিয়েই ওই পুরসভায় বোর্ড গঠনের চাবিকাঠি চলে গিয়েছে সোমনাথ কর্মকারের হাতে। ফলে এখন এই দড়ি টানাটানির মধ্যে কে তৃণমূল না কংগ্রেস কে এই পুরসভায় বোর্ড গঠন করে এখন সেটাই দেখার।