সংক্ষিপ্ত
ফের মধ্যযুগীয় বর্বরতার স্বীকার আদিবাসী দুটি পরিবার। ডাইনি অপবাদ দিয়ে একঘরে করে রাখার নিদান গ্রামের মোড়লদের। প্রশাসনের দ্বারস্থ নির্যাতিত পরিবার।
একবিংশ শতকের বুকে দাঁড়িয়েও যে আজ বাংলার বুকে জাঁকিয়ে বসে রয়েছে কুসংস্কারের বীজ তার প্রমাণ ফের মিলল। ডিজিট্যাল দুনিয়ায় দাঁড়িয়েও মধ্যযুগীয় বর্বতার বাঁকুড়ার(Bankura) শিকার দুটি আদিবাসী(adivasi) পরিবার। সূত্রের খবর, ডাইনি অপবাদ(Witch slander) দিয়ে মোটা টাকার জরিমানাও ধার্য্য করা হয়েছে তাদের উপর। জরিমানা না দিতে পারায় গ্রামের মোড়লদের নিদানে গ্রাম থেকে একঘরে করে রাখা হয়েছে দুটি পরিবারকে। শুধু তাই নয় ওই দুটি বাড়ি থেকে লুটপাট করা হয়েছে ছাগল, মুরগি, হাঁস ও অনান্য জিনিসপত্র, অভিযোগ এমনটাই।
বাঁকুড়ার সদর থানার প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রাম কেন্দবনী। এই গ্রামের একেবারেই শেষে প্রান্তে দুটি পাশাপাশি দুটি আদিবাসী পরিবার যারা গ্রামের মোড়লদের নিদানে গ্রামের থেকে একেবারে একঘরে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। একঘরে হয়ে রয়েছে কালিপদ সরেনের পরিবার ও তাঁর কাকাতো বোনের পরিবার। নির্যাতিত পরিবার সুত্রে জানা গেছে মাস ছয়েক আগে কালীপদ সোরেনের স্ত্রী বালিকা সোরেন মনসা পুজো করার স্বপ্নাদেশ পান। সেই সমস তিনি কিছু অংসগল্ন আচরণ করেন বলেও স্থানীয় সূত্রে খবর। তবে প্রাথমিক ভাবে গ্রামের লোকজন তাঁকে পুজো করতে নিষেধ করলেও কথা শোনেননি তারা। অভিযোগ এরপরই কালীপদ সোরেনের স্ত্রী বালিকা সোরেনকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে একঘরে করার নিদান দেন গ্রামবাসীদের একাংশ। নিদান দেওয়া হয় কালীপদর পরিবারের সাথে কেউ কথা বললে ধার্য্য করা হবে জরিমানা।
আরও পড়ুন- সরকারের পক্ষে থাকলে মিলবে বিজ্ঞাপন, মমতার মন্তব্যে বিতর্কের গন্ধ
এদিকে গ্রামের মোড়লদের সেই নিদান সত্বেও কালীপদর পরিবারের সাথে গোপনে যোগাযোগ রেখেছিলেন পাশেই বসবাস করা কাকাতো দুই বোন সরস্বতী সোরেন ও শুকুরমনি সোরেন। সম্প্রতি সেই যোগাযোগের কথা জানতে পারার পরই বর্বরতার খাঁড়া নেমে আসে ওই দুই বোনের পরিবারেও। অভিযোগ গ্রামের মোড়লদের একাংশ প্রথমে দুই বোনের পরিবারকে একঘরে করার পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করে। জরিমানার টাকা দিতে দেরী হওয়ায় সেই অঙ্ক গিয়ে পৌঁছায় পচিশ হাজারে। সেই টাকা দিতে না পারায় সম্প্রতি দুই বোনের সংসারে পালিত বেশ কয়েকটি ছাগল, শুকর ও মুরগী সহ আসবাব লুঠ করা হয় বলে অভিযোগ। বর্তমানে অত্যাচারের পরিমাণ বাড়ায় বাঁকুড়া সদর থানার দ্বারস্থ হয়েছে দুটি পরিবারই। গ্রামের মোড়লদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে লিখিত অভিযোগও। হয় সরস্বতী ও শুকুরমনির পরিবার। এখন বিচারের আশায় দুটি নির্যাতিত পরিবার।
যদিও ফতোয়া দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে গ্রামের মোড়লরা। একঘরে করা, জরিমানা করা বা মুরগী ছাগল লুঠপাটের অভিযোগও অস্বীকার করা হয়েছে। এদিকে অমানবিক এই খবর সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা জেলায়। এমনকী এই ধরণের খাপ পঞ্চায়েত বন্ধ নিয়েও নতুন করে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের বিডিও। আর তাতেই সুবিচারের আশায় দিন গুনছেন নির্যাতিত দুই পরিবার।