সংক্ষিপ্ত

বর্ষার অতি ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। বিশেষ করে ধস ও প্লাবন এই মুহূর্তে গ্রাস করেছে তরাই, পাহাড় এবং ডুয়ার্সকে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রবল প্রভাব পড়েছে মালদহ এবং দুই দিনাজপুরেও। 
 

ক্রমশই জটিল হচ্ছে উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আবহাওয়া দফতরের যা পূর্বাভাস তাতে ১ জুলাই সকালের আগে এই দুর্যোগ কাটার কোনও সম্ভাবনা নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে দার্জিলিং জেলা-সহ কালিম্পং, মিরিক, আলিপুর দুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার। এই সব এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে একাধিক এলাকা প্লাবিত। পাহাড় এবং তরাই অঞ্চলের একাধিক স্থানে ধসও নেমেছে। সেভাবে যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন না হলেও বলা যেতে পারে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। ডুয়ার্সের বহু চা-বাগানে জল ঢুকে গিয়েছে। যার জেরে চা-উৎপাদনেও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। 

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং, দার্জিলিং-এ ২৯ তারিখ থেকে বৃষ্টি আরও বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে পাহাড়ি এলাকায় ধস নামার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মুহূর্তে যা খবর তাতে দার্জিলিং-এর আশপাশে এবং সিকিমে ঢোকার মুখে রাস্তার বেশ কিছুস্থানে ধসও নেমেছে। ফলে দুর্যোগ না কাটলে এই সব রাস্তায় এড়িয়ে চলাই ভালো। এর সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে আসা জলের তীব্র স্রোতে ডুয়ার্স এলাকার নদীগুলিও ভরে গিয়েছে। ফলে, তিস্তা, কালিন্দি, জলঢাকা নদীগুলিতে জল বিস্তৃর্ণ এলাকা ভাসিয়ে দিয়েছে। বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। এর সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি বিশেষ করে মেঘালয় ও অসমে বৃষ্টি হয়েছে। যার জন্য এই দুই রাজ্যের বিস্তৃর্ণ এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। আর এই সব জল নদীর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে প্রবেশ করছে। 

২৯ জুন জলপাইগুড়িতে ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের আরও ২ জেলা কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারেও ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, দুই দিনাজপুরে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে। 

দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা-সহ বাকি সব জেলাতেই গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। তবে, গরমের যে তীব্র দাবদাহটা ছিল তা এখন অনেকটাই চলে গিয়েছে। বর্ষার আগমেন বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, তাপমাত্রা অনেকটাই কমেছে। কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতেও তাপমাত্রার গড় ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এই সব জেলাতে ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের আশপাশে থাকার সম্ভাবনা। বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ থেকে ৮৮ শতাংশ থাকার সম্ভাবনা। যদিও, কলকাতা-সহ জেলার কিছু অংশে বজ্র-বিদ্যুৎ এবং বৃষ্টির কথার সম্ভাবনা জানানো হয়েছে। এই বৃষ্টি একটানা হবে না, বিক্ষিপ্তভাবে হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। 

এদিকে, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে এই মুহূর্তে কোনও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি নেই বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। আবহবিদরা জানিয়েছেন, দুই সাগরের উপরেই প্রচুর মেঘের আনাগোনা রয়েছে। কিন্তু এগুলি সবই বিক্ষিপ্ত আকারের। এদের নিজেদের মধ্যে সংঘবদ্ধতা না থাকায় বড়ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা এই মুহূর্তে নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।