সংক্ষিপ্ত

সরকারই কর্মীদের কাছে গেলে বলা হচ্ছে ‘পুলিশের কাছে যান’। পুলিশের কাছে গেলে বলা হচ্ছে, ‘রেল পুলিশের কাছে যান’। রেল পুলিশের কাছে গেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে লোকাল থানায়। আত্মীয়ের মৃতদেহ চিনতে পেরেও তা উদ্ধার করতে গিয়ে ব্যাপক হয়রানির শিকার। 

ওড়িশার বালেশ্বরে করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর কেটে গেছে প্রায় আড়াই দিন। এই সময়সীমার মধ্যে আহত এবং নিহতদের জন্য প্রভূত সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র এবং রাজ্য, উভয় সরকারই। ওড়িশার নবীন পটনায়কের সরকারের তরফেও দেওয়া হয়েছে বহু সাহায্যের আশ্বাস। কিন্তু, এতও সরকারি ঘোষণার পর বাস্তবিক ছবিটা আসলে কীরকম? সেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথাই জানালেন বাংলার যুবক সুমিত সিংহ।

করমন্ডল এক্সপ্রেসে কাজ করতেন, এমন একজন রেলকর্মীর আত্মীয় হন সুমিত। শুক্রবার সন্ধে ৭টার সময় যখন দুর্ঘটনার খবর আসে, তখন সেই খবর পাওয়ার পর অন্য আরেক রেলকর্মীকে ফোন করে নিজের আত্মীয়ের খবর নেন তিনি। ওই দ্বিতীয় রেলকর্মী সুমিতকে জানান যে, তাঁর আত্মীয় ঠিকই আছেন, কোনও বড় চোট লাগেনি। শুধু হাঁটু এবং কোমরে চোট লেগেছে। এই কথা শুনে সুমিত শুক্রবার রাতেই বাবুঘাট থেকে ওড়িশা যাওয়ার শেষ বাস ধরে রওনা হয়ে যান। যাওয়ার পথেই তাঁর মোবাইলে বার্তা আসে যে, তাঁর আত্মীয় আর বেঁচে নেই।

এই ভয়ঙ্কর খবরের পরেও অপেক্ষা করছিল আসল হয়রানির ছবি। সুমিত সিংহ জানিয়েছেন, বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার জায়গায় পৌঁছনোর পর তিনি দেখতে পান যে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মৃতদেহ। যে যেমন করে পড়ে আছে, তাকে তোলার মতো কোনও লোক নেই। হাসপাতালে হাঁটাচলা করার জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে মৃতদেহের স্তূপ। তিনি নিজের আত্মীয়কে খুঁজতে গিয়ে দেখতে পান যে তাঁর আত্মীয়ের মৃতদেহ আইসিইউ-র বাইরে ফেলে রাখা হয়েছে। তিনি যখন হাসপাতালের মানুষদের কাছে নিজের আত্মীয়দের দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ জানাচ্ছিলেন, তখন প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা করে কেউ তাঁর কথা শোনেনইনি বলে জানিয়েছেন সুমিত।

ওড়িশা সরকারের কর্মীদের কাছে গেলে বলা হচ্ছে ‘পুলিশের কাছে যান’। পুলিশের কাছে গেলে বলা হচ্ছে, ‘রেল পুলিশের কাছে যান’। রেল পুলিশের কাছে গেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে লোকাল থানায়। এভাবেই আত্মীয়ের মৃতদেহ দাবি করে দরজায় দরজায় কার্যত হেনস্থার শিকার হয়েছেন মৃত রেলকর্মীর আত্মীয়। দুর্ঘটনায় মৃত কোনও ব্যক্তির পরিবারের কাছে কোনও সরকারি কর্মী যাননি বলে জানিয়েছেন সুমিত। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে ময়নাতদন্তের কোনও রিপোর্টও তাঁকে দেওয়া হয়নি, শুধু একটা সাদা কাগজে বালেশ্বর GRPF-এর তরফ থেকে লিখে দেওয়া হয়েছে, এই মৃতদেহ আপনার এবং আপনি তা নিয়ে যান। সরকারের তরফ থেকেও কোনও সাহায্য পাননি বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের যুবক। ওড়িশার বালেশ্বর থেকে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স বুক করে নিজের আত্মীয়ের মৃতদেহ কলকাতায় নিয়ে আসতে হয়েছে সুমিতকে। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে বেরিয়ে এসেছে করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর মৃত মানুষের পরিবারের সদস্যদের হয়রানির আসল ছবি।

আরও পড়ুন-

Amit Shah: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে কুস্তিগিরদের বৈঠক, যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে আইনের ওপরেই ভরসা
অতি শীঘ্রই দারুণ সৌভাগ্য পেতে চলেছে ৬টি রাশি, বুধ গ্রহ থেকে তৈরি হচ্ছে গজকেশরী রাজ যোগ

পরিবারের ‘প্রধান’ পুরুষরা নন, হয়ে উঠছেন মহিলারাই: ভারতের সাম্প্রতিক সমীক্ষা ঘুচিয়ে দিচ্ছে লিঙ্গভেদ