সংক্ষিপ্ত
দুদিন আগেই হাওড়া থেকেও দুজন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারাও ছিল যথেষ্ট শিক্ষিত। তাহলে এই জঙ্গি সংগঠনগুলি শিক্ষিত যুবক-যুবতীদেরই টার্গেট করছে? সেটা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।
বছর তিনেক আগে বসিরহাটের বাদুড়িয়া থানার রঘুনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মলেয়াপুর গ্রামের নিজের বাড়ি থেকে জঙ্গি যোগ সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছিল তানিয়া পারভিন নামক এক কলেজ ছাত্রীকে। তার সঙ্গে জঙ্গিযোগের প্রমাণ মেলায় বর্তমানে সে এখন জেলবন্দি। তার গ্রামে এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বললে জানা যাচ্ছে, বরাবরই পড়াশোনায় ভালো ছিল তানিয়া পারভিন। স্কুলে পড়াকালীনই একদিকে যেমন সে র্যাঙ্ক করতো অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো নাম্বার পেয়ে সে ভর্তি হয়ে যায় কলকাতার একটি নামকরা সরকারি কলেজে। তারপরেই তার সঙ্গে জঙ্গি যোগ সন্দেহ হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দুদিন আগেই হাওড়া থেকেও দুজন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারাও ছিল যথেষ্ট শিক্ষিত। তাহলে এই জঙ্গি সংগঠনগুলি শিক্ষিত যুবক-যুবতীদেরই টার্গেট করছে? কিসের লোভে বা কোন মগজ ধোলাইয়ে শিক্ষিত যুবক-যুবতিরা তারা এই সংগঠনের দিকে এগোচ্ছে। সেটা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। বিশেষ করে বসিরহাটের মতো একটা সীমান্ত লাগোয়া এলাকা যেখানে স্বরূপনগর থেকে শুরু করে হাকিমপুর, কৈজুড়ী, হাসনাবাদ ও হিঙ্গলগঞ্জ সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে সীমান্ত। শিক্ষিত হয়ে তারা এই জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে কতটা সুরক্ষিত থাকতে পারবেন প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই।
তানিয়ার ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তার বাবা-মা কিছুই বলতে চাইলেন না। বাড়ি থেকে বের হতেও চাইলেন না। যদিও গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন তার বাবা একজন রাজমিস্ত্রি ও মা স্বাস্থ্য দপ্তরের কাজ করতো। কিন্তু মেয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে লোকলজ্জার ভয়ে ছেড়ে দিয়েছে সেই কাজ। গ্রামবাসীরা এও দাবী করেন মেয়ে গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ায় তার বাবা-মার সংসার চালাতে এখন যথেষ্টই কষ্ট হচ্ছে। একদিকে লোক লজ্জা অন্যদিকে বার্ধক্য জনিত কারণ দুইয়ের মিশেলে তাদের এখন অসহায় অবস্থা। গ্রামবাসীরা চাইছেন দ্রুত তানিয়া পারভিন মুক্ত হয়ে যাক।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই সমস্ত শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা যদি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে সেটা সমাজ তো বটেই দেশের পক্ষেও যথেষ্ট ক্ষতিকর। এবং সেই শিকড়েই কিন্তু খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে গোয়েন্দারা। এরকম আরো কত যুবক যুবতী এইরকম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন সেটাও কিন্তু ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে। বাদুড়িয়া বুধবার ভোরবেলা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের একটি দল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তানিযাকে নিয়ে যায় । পরে বাদুড়িয়া থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
বৃহস্পতিবার তাকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হয়। পুলিশ ১৪ দিনের হেফাজতে নেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গি যোগে অভিযুক্ত তানিয়া পারভিন নামে ওই ছাত্রী ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। বাংলা ইংরেজি ও আরবী ভাষায় সমান দক্ষ। আরবিতে স্নাতোকত্তর করতে কলকাতায় মেসে থেকে পড়ছিলেন। বরাবরই পর্দানসীন, নমনীয়, শান্ত ও ভদ্রস্বভাবের। তানিয়ার মা নুরনাহার বিবি একজন স্বাস্থ্য কর্মী। বাবা আল-আমিন মন্ডল পেশায় রাজমিস্ত্রি। তানিয়ার ভাই শামীম মন্ডল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য জয়েন্ট-এর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তানিয়ার পরিবার এর আগে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর গোপালনগর এর বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবা আল আমিন মন্ডল ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত গোপালনগরের স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। ২০০৩ সালের পর তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাদুড়িয়ার মলেয়াপুর গ্রামে চলে আসেন। ২০০৭ সাল থেকে মলেয়াপুর গ্রামে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। এলাকায় তাঁরা সজ্জন হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে রাজমিস্ত্রি কাজের সঙ্গে যুক্ত। তানিয়ার জঙ্গি যোগ সূত্রকে গ্রামবাসীরা কেউ বিশ্বাস করতে পারছেনা। এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছে তানিয়ার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনেরাও। তবে, ফোনে এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমে কাছে মুখ খুলতে চাইছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীর দাবি, তাকে পরিকল্পনা করে ফাঁসানো হয়েছে।