সংক্ষিপ্ত
কলকাতার বাড়ি থেকে চিরদিনের মতো চলে যাওয়ার আগে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে কেন যেতে চেয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু?
সুভাষচন্দ্র বসু থেকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন নেতাজি। ১৯৪০ সালের শুরুর দিকে আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারতীয় সেনা এবং বার্লিনে ভারতের বিশেষ ব্যুরোতে জার্মান ও ভারতীয় কর্মকর্তারা তাঁকে নেতাজি উপাধি দিয়ে ভূষিত করেন। কিন্তু, ছোটবেলা থেকে তিনি ছিলেন মা প্রভাবতী বসুর প্রিয় ‘সুবি’। সেই প্রিয় সুভাষ বা আপামর ভারতবাসীর শ্রদ্ধেয় নেতাজিকে যখন ১৯৪১ সালের জানুয়ারি মাসে গৃহবন্দি করে রেখেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার, তখনই সকলের চোখে ধুলো দিয়ে চিরদিনের মতো বিদায় নিয়েছিলেন নেতাজি (Netaji Subhash Chandra Bose) । তবে, চলে যাওয়ার আগে তিনি যেতে চেয়েছিলেন মাত্র একটি স্থানে, সেটি হল, দক্ষিণেশ্বরে রানি রাসমণি নির্মিত কালী মন্দির (Dakshineswar Kali Temple) ।
-
নেতাজি-সম্বন্ধীয় গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন মা কালীর অনুরক্ত ভক্ত। সমস্ত জরুরি কাজের আগে তিনি মা কালীর স্মরণ নিতেন। এমনকি, কলকাতার এলগিন রোডে তাঁর বসতবাটির অন্দরে তাঁর নিজের শোওয়ার ঘরেও রয়েছে মা কালীর একটি রুদ্র মূর্তির ছবি । স্বামী বিবেকানন্দের দেখানো পথ অনুসরণ করতেন নেতাজি। দেবী কালী ছিলেন তাঁর মনঃশক্তির উৎস।
-
দক্ষিণেশ্বর মন্দির ছিল নেতাজির খুব প্রিয় স্থান। মাঝে মাঝেই নিজের সঙ্গীসাথীদের নিয়ে তিনি নৌকো করে যেতেন বেলুড় মঠে। যাওয়ার সময়ে নৌকাতে গুনগুন করে শ্যামাসঙ্গীতও গাইতে শোনা যেত তাঁকে। গোয়েন্দা এবং পুলিশ দিয়ে ঘেরা ভবানীপুরের বাড়ি থেকে তিনি যখন একেবারে মহানিষ্ক্রমণের পথে পাড়ি দিলেন, তখন তিনি যেতে চেয়েছিলেন দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরে।
-
একদিন গভীর রাতে নিজের ভাইজি ইলা বসুকে নেতাজি পাঠিয়েছিলেন দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের মা ভবতারিণীর পায়ের ফুল ও চরণামৃত সংগ্রহ করে নিয়ে আসার জন্য। তাঁর সংকল্প ছিল যে, মা ভবতারিণীর আশীর্বাদ না নিয়ে কিছুতেই তিনি দেশ ছেড়ে যাবেন না। এই ঘটনার কয়েকদিন পরই দেশত্যাগ করেন নেতাজি। তিনি যেখানেই যেতেন, সেখানেই তাঁর সঙ্গে থাকত গীতা, জপের মালা এবং মায়ের পায়ের শুকনো জবাফুল। শক্তি সঞ্চয় করার জন্য মা কালীই ছিলেন সকলের প্রিয় দেশনেতার প্রধান ভরসা।