সংক্ষিপ্ত

রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে মৃত শিশুকে ফেরত আনতে গেলে মেলেনি সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ৮ হাজার টাকা দাবি করায়, শেষমেশ জামাকাপড় ভর্তি ব্যাগে সন্তানকে ভরে বাড়ির পথে রওনা হন বাবা।

একের পর এক অমানবিক ঘটনা। টাকার অভাবে যোগাড় হল না অ্যাম্বুলেন্স। বাধ্য হয়েই মৃত সন্তান ব্যাগে নিয়ে ফিরলেন বাবা। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরে। সূত্রের খবর, অসুস্থ সন্তানকে বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা। খাদ্যনালীতে সংক্রমণের কারণে শনিবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় ৪ মাসের শিশুর।

অভিযোগ, রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে মৃত শিশুকে ফেরত আনতে গেলে মেলেনি সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ৮ হাজার টাকা দাবি করায়, শেষমেশ জামাকাপড় ভর্তি ব্যাগে সন্তানকে ভরে বাড়ির পথে রওনা হন বাবা। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের এই মর্মান্তিক ঘটনা সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ফের একবার লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গেল বাংলার।

বাবা বাসে বাড়ি ফিরলেন মৃত সন্তানকে ব্যাগে ভরে। কতটা শোকে পাথর হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারেন, সে নিয়ে ধারণাও হয়ত করতে পারবে না কেউ, কিন্তু এমনই ঘটনা ঘটে গেল তথাকথিত সুশীল বাংলায়। হাতের ব্যাগে ধরে আছেন মৃত ছেলের দেহ। শিলিগুড়ি থেকে বাসে কালিয়াগঞ্জে ফেরার পর শেষপর্যন্ত স্থানীয় বিজেপি কাউন্সিলরের সহায়তায় অ্যাম্বুল্যান্সে ঠাঁই পায় শিশু-সহ ব্যাগটি।

অসহাস বাবা পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। কাজ করেন কেরলে। তিনি বলেন "১০২ নম্বরে ফোন করেও কোনও লাভ হয়নি। ওখান থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, ওরা মরদেহ নিয়ে যাবে না। নিয়ে যেতে হলে ৮ হাজার টাকা লাগবে! তখন আমার কাছে সত্যিই টাকা ছিল না। ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। হাজার দু’য়েক টাকা মতো পড়ে ছিল পকেটে। আমি ওদের বললাম যে, পনেরোশো টাকার পৌঁছে দিন। ওরা পরিষ্কার বলে দিল, ‘না, হবে না।’’

উল্লেখ্য, এই ঘটনা সামনে আসতেই ট্যুইটে 'এগিয়ে বাংলা' মডেলকে খোঁচা দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক লেখেন, দুর্ভাগ্যবশত এটাই 'এগিয়ে বাংলা'র প্রকৃত রূপ! ঘটনার পিছনে কার গাফিলতি, তদন্ত করে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

২০ এপ্রিল, অ্যাম্বুল্যান্সের টাকার সংস্থান না করতে পেরে ট্রেনে করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই মৃত্যু হয় বর্ধমানের বাসিন্দা মেনকা কোড়ার। তার প্রায় সাড়ে ৩ মাস আগে, বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় কাঁধে করে মায়ের মৃতদেহ কাঁধে করে নিয়ে ফিরতে হয় জলপাইগুড়ির বাসিন্দাকে। পরপর এই ঘটনায় এবার অন্তত একটু হলেও নড়েচড়ে বসা উচিত রাজ্য প্রশাসনের।