সংক্ষিপ্ত
মানুষ ‘মৃত’ বলে তাঁর অতীতের যেকোনও খারাপ কাজের কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই অলিখিত রীতিটিকেই ভেঙে ফেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবীর ঘোষের সম্পর্কে কিছু কথা লিখলেন বিখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
প্রয়াত হয়েছেন যুক্তিবাদী লেখক প্রবীর ঘোষ। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ তাঁর পাঠকরা। কিন্তু, কীর্তিমান মানুষের প্রয়াণের সাথে সাথে কি তাঁর চরিত্রের সমস্ত দিকগুলিও নিঃশেষ হয়ে যায়? মানুষ ‘মৃত’ বলে তাঁর অতীতের যেকোনও খারাপ কাজের কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই অলিখিত রীতিটিকেই ভেঙে ফেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবীর ঘোষের সম্পর্কে কিছু কথা লিখলেন বিখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
ফেসবুকে তসলিমা লিখেছেন, ‘প্রবীর ঘোষ মারা গেছেন। যে কারও মৃত্যুতেই আমি দু:খ পাই, প্রবীর ঘোষের মৃত্যুতেও পেয়েছি। তবে কারও মৃত্যু হলেই গুণগান গাইতে বসার লোক আমি নই। তাঁর 'অলৌকিক নয়, লৌকিক' পড়ে এককালে মুগ্ধ হয়েছি। না, তাঁর বই পড়ে আমি নাস্তিক হইনি, বই পড়ার বহু আগে থেকেই আমি নাস্তিক। আমি আসলে কখনও নাস্তিক হইনি, নাস্তিক আমি জন্ম থেকেই ছিলাম। প্রবীর ঘোষ বই ভালো লিখেছেন, যুক্তিবাদি আন্দোলন ভালো করেছেন, কিন্তু মানুষ হিসেবে অত্যন্ত নির্মম, নিষ্ঠুর, মিথ্যুক, হিংসুক, এবং প্রতারক প্রকৃতির ছিলেন। ভয়ংকর নারীবিদ্বেষী ছিলেন। স্ত্রীকে শুনেছি নির্যাতন করতেন। আমার নারীবাদী বই নির্বাচিত কলামের বিরুদ্ধে জঘন্য ভাষায় নিন্দে করেছেন। তিনি মহাভারতে বিশ্বাস না করলেও মহাভারতের ' ন স্ত্রী স্বাতন্ত্রমর্হতি' অর্থাৎ স্বাধীনতায় নারীর কোনও অধিকার নেই শ্লোকটিতে বেশ বিশ্বাস করতেন। আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লেখা আমার লজ্জা বইটির বিরুদ্ধেও তো বেশ কলম ধরেছিলেন।
অনেকে মনে করে একজন লোকের একটি দিক ভালো হলেই তাঁর বাকি সব কুৎসিত দিক ভুলে গিয়ে তাকে নমো নমো করতে হবে। হুমায়ুন আজাদ নামে বাংলাদেশের এক নাস্তিক পুরুষলেখককে নিয়েও পুরুষনাস্তিকদের মধ্যে উত্তেজনা প্রচন্ড। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিটি প্রথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন যে লোকটি, তাঁকে ভালোবেসে পুরুষতান্ত্রিক নাস্তিকেরা নাম দিয়েছে 'প্রথাবিরোধী'। প্রবীর ঘোষকে কিন্তু কলকাতার হুমায়ুন আজাদ বলে অনায়াসে ডাকা যায়।
প্রবীর ঘোষ একবার মঞ্চে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, বিষাক্ত সাপে কাটলে ওঝারা বিষ নামাতে পারে বলে দাবি করে বটে, তবে তারা বিষ নামাতে পারে না। এর প্রমাণ দেখাতে গিয়ে একটি সুস্থ কুকুরকে মঞ্চে তুলে তাকে বিষাক্ত সাপের কামড় খাওয়ালেন, এবং সাফল্যের হাসি হেসে দর্শকদের দেখালেন ওঝার চেষ্টা সত্ত্বেও কী করে বিষক্রিয়ায় কুকুরটির মৃত্যু হলো (কমেন্টে তাঁর কুকুর হত্যার ভিডিও দেখুন)। মানবিকতার এক বিন্দুও যাদের মধ্যে অবশিষ্ট আছে, তারাও সেদিন প্রবীর ঘোষের নিষ্ঠুরতা দেখে কেঁপে উঠেছে। কী অবলীলায় ঘোষবাবু একটি নিরীহ প্রাণীকে জনসম্মুখে হত্যা করলেন। অমানবিকতা, অনুদারতা, অসহিষ্ণুতার অন্ধকারে যাঁরা ডুবে আছেন, তাঁরা শুধু ভগবান বা ঈশ্বর বা আল্লাহকে মানেন না বলে তাঁরা আলোকিত লোক, তাঁরা মুক্তচিন্তক বা মহান, এমন ভাবাটা নিতান্তই বালখিল্যতা।
যে লেখকেরা লেখেন একরকম, জীবন যাপন করেন আরেকরকম, পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা করতে যাঁদের বাধে না, মানবতার কথা বলবেন কিন্তু জীবনে তার চর্চা করবেন না, তাঁদের আমি যা কিছুই করি, শ্রদ্ধা করতে পারি না।’
আরও পড়ুন-
PM Modi News: নমস্কার জানিয়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বন্দে ভারত’-এর উদ্বোধনে হাততালি দিলেন না রাজ্যের মন্ত্রী
ভারতের জাতীয় পতাকাকে কাপড়ের ন্যাকড়ার মতো ব্যবহার, ঝাঁসির কিশোরের ভিডিও দেখে সারা দেশ জুড়ে ক্ষোভ
Kurmi Protest: কুড়মিদের আন্দোলনের জেরে বিপাকে হাজার হাজার যাত্রী, বাতিল করা হল ৭২টি ট্রেন