সংক্ষিপ্ত

দেবী দুর্গার হাতেও এই অস্ত্রটি দেখা যায়। অধিকাংশ শক্তি মূর্তির হাতেই প্রধান অস্ত্র হিসেবে থাকে খড়গ। এই অস্ত্রের সঙ্গে শক্তির যোগ যে নিবিড়, একথা বলাই বাহুল্য।

মা কালী হলেন শক্তির প্রতীক। সেই শক্তির প্রতীক হল তাঁর হাতের খড়গ। কালীর মূর্তির মতো ভক্তিভরে পুজো করা হয় তাঁর খড়গটিকেও। যেসব মন্দিরে বলিপ্রথা প্রচলিত রয়েছে, সেখানে আলাদা করে খড়গ পূজার নিয়ম রয়েছে। তাই অনেকেই মনে করেন, দেবীমূর্তির বিসর্জনের পর খড়গ বাড়িতে তুলে রেখে দেওয়া অত্যন্ত শুভ।

কিন্তু সত্যিই কি এমনটা করা উচিত?

দেবীর হাতের খড়গ আসলে কী? শাস্ত্রে দেবীর এই অস্ত্রটিকে শক্তির স্বরূপ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এমনকি শ্রীশ্রী চন্ডীতেও বলা হয়েছে, ‘খড়্গ আমাদের রক্ষা করুক।’ দেবী দুর্গার হাতেও এই অস্ত্রটি দেখা যায়। অধিকাংশ শক্তি মূর্তির হাতেই প্রধান অস্ত্র হিসেবে থাকে খড়গ।

-
 শাস্ত্রমতে সাধারণ কোনও অস্ত্র দিয়ে বলি দেওয়ার নিয়ম নেই। যে কোনও বলিতেই মূলত ব্যবহার করা হয় খড়গ। দেবী মূর্তিতে যে খড়গ দেখা যায়, বলির খড়গ তার থেকে আকারে অনেকটাই বড় হয়। পুজোর আগে সেই খড়গ ভালোভাবে পরিষ্কার করে দেবীর পায়ের কাছে রাখা হয়। তারপর পুজো চলাকালীন সেখানে থাকে খড়গ। বলির সময়, সিঁদুর দিয়ে বিশেষ কিছু চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয় খড়গের গায়ে। তারপর সেই খড়গ দিয়েই বলি সম্পন্ন হয়। অনেক জায়াগতেই আজকাল পশুবলি নিষিদ্ধ। কিন্তু, তা হলেও খড়গ পুজোর নিয়ম বদলায়নি এতটুকু। চালকুমড়ো বা আঁখ বলির আগেও একইভাবে পুজো করা হয় খড়গকে। সুতরাং এই অস্ত্রের সঙ্গে শক্তির যোগ যে নিবিড়, একথা বলাই বাহুল্য। এবার আসা যাক এই অস্ত্র বাড়িতে রাখা উচিত কি না, সেই প্রসঙ্গে।

-

বিজ্ঞানসম্মত অর্থে, খোলা অবস্থায় খড়গ রেখে দিলে তার ধার নষ্ট হয়ে যায়। যাতে বলির সময় বাধা সৃষ্টি হতে পারে। সেইজন্য বলির খড়গ যে কোনও অবস্থাতেই বাড়িতে রেখে দেওয়া একেবারেই উচিত নয়।  শাস্ত্রমতেও এমনটা হওয়া অত্যন্ত অশুভ। যদিও মণ্ডপে যে কালীমূর্তি থাকে, তার হাতে প্রতীকী খড়গ দেখা যায়। মূর্তি বিসর্জনের পর সেই খড়গ বাড়িতে এনে রাখা যেতেই পারে। মনে করা হয়, এমনটা করলে সারাবছর সব ধরনের বিপদের হাত থেকে ওই খড়গ রক্ষা করবে। 



যদিও শাস্ত্রমতে দেবীর বিসর্জনের সময় পুজোয় ব্যবহৃত যাবতীয় জিনিস জলে নিক্ষেপ করাই নিয়ম। সেইমতো খাঁড়াও জলে ফেলে দেওয়া উচিত। তবুও অনেকেই বাড়িতে খাঁড়া নিয়ে আসেন। মনের ভক্তি নিয়ে তাঁরা যদি এমনটা করেন, তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কিন্তু শাস্ত্র এই বিষয়টিতে মোটেই মান্যতা দেয় না। খড়গ বাড়িতে রাখার ইচ্ছে হলে রুপো বা পিতলের একটি প্রতীকী খড়গ তৈরি করিয়ে নিতে পারেন। কালীপুজোর দিনে সেটাই মায়ের হাতে রাখুন। সঙ্গে রাখুন সাধারণ মূর্তির সঙ্গে দেওয়া লোহার খড়গও। তবে, বিসর্জনের সময় স্রেফ লোহার খড়গটাই মূর্তির সঙ্গে জলে ফেলে দিন। পিতল বা রূপোর খড়গটি বাড়িতে রেখে দিন। এতে শাস্ত্রের বিরোধিতাও হয় না, আবার পরিবারকে সবরকম বিপদের হাত থেকেও রক্ষা করা যায়।


আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।