সংক্ষিপ্ত

সদ্য স্বামীকে হারিয়ে অকূল পাথারে পড়ে গিয়েছিলেন এক তরুণী মা। ছেলেমেয়েদের অন্ন সংস্থান করার পথ খুঁজতে খুঁজতেই তিনি হয়ে উঠলেন বাঙালির ‘বুড়িমা’।  

দীপাবলিতে জ্বলে উঠবে চারিদিকে আলোর রোশনাই। এর সঙ্গে থাকে হরেক রকমের বাজির সমাহার। বাজিতে আজ পর্যন্ত 'বুড়িমা'-র বাজির জুড়ি মেলা ভার। 'বুড়িমা'-র বাজি তৈরির পেছনে রয়েছে এক মহিলার অসামান্য সংগ্রামের কাহিনি। জেনে নিন সেই কাহিনি।

-

সালটা ১৯৪৮। দেশভাগ, দাঙ্গা, হানাহানিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশর ফরিদপুর। ঠিক সেই সময়ে সেখানকার কঠিন সংগ্রামের মধ্যে কোনও ভাবে বেঁচে থাকা এক সাধারণ গৃহবধূ অন্নপূর্ণা দাস। ডাক্তার রোগ শনাক্ত করতে না পারায় বাঁচানো যায়নি স্বামী-কে। সদ্য স্বামীহারা ছিন্নমূল অবস্হায় আসলেন এপার বাংলায়, সঙ্গে দুই ছেলে-মেয়ে। ভরা সংসার সেই থেকে একেবারে এসে উঠলেন দিনাজপুরে-এর গঙ্গারামপুর-এর রিফিউজি ক্যাম্পে। দুই ছেলে-মেয়ে-কে নিয়ে তখন দিশেহারা হয়ে পড়লেন কিভাবে দুবেলা অন্ন সংস্হান করবেন। পেটের দায়ে বাজারে সবজি বিক্রি করতে শুরু করলেন, তারপর হাতা, খুন্তি এসবও বিক্রি করতে লাগলেন। গঙ্গারামপুর-এ পরিচয় হল সনাতন মন্ডল-এর সঙ্গে। সনাতন চালাতেন মুদির দোকান, তার পাশাপাশি চলত বিড়ির ব্যবসা। এরপর অন্নপূর্ণা দেবী তাঁর থেকে শিখলেন বিড়ি বাঁধার কাজ। এরপর আস্তে আস্তে অন্নপূর্ণা দেবী আবার কিছুটা ছন্দে ফিরলেন,তৈরি করলেন বাড়ি। এভাবে কয়েক বছরের মধ্যে তিনি বিড়ি কারখানা বানিয়ে নিলেন। অন্নপূর্ণা দেবীর মেয়ের বিয়ের ঠিক হওয়ার পর সেখান থেকে তাঁরা চলে আসেন হাওড়ার বেলুড় অঞ্চলে। সেখানেই তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর নতুন জামাই বেলুড়ের প্যারীমোহন মুখার্জি স্ট্রীটে একটি দোকান সহ বাড়ির সন্ধান দেন। সেখানেই বিড়ির পাশপাশি শুরু করলেন আরও ব্যবসা।

-

বেলুড়ে আসার পর হরকুসুম গাঙ্গুলি-র সঙ্গে আলাপ হল, শুরু করলেন সিঁদুর, আলতা থেকে আস্তে আস্তে পুজোর সামগ্রী, বিশ্বকর্মা পুজোর সময় ঘুড়ি, দোলের আগে রঙ, এমনকী প্রতিমাও। একদিন কয়েকটি বাচ্চা ছেলে-মেয়ে তাঁর দোকানে এসে বললেন বুড়িমা চকোলেট দাও। শুনে হঠাৎ তিনি চোখের সামনে আয়না ধরে দেখলেন, সত্যিই চুলে পাক ধরেছে। তারপরই শুরু হল পথচলা বুড়িমা নামেই। ধার করে দোকানে বাজি নিয়ে এলেন, তবে জড়িয়ে পড়লেন আইনি জালে কেননা অভাব ছিল লাইসেন্সের। এরপরও তিনি হাল ছাড়েননি লাইসেন্স জোগাড় করলেন। এরপর শুরু করলেন ব্যবসা, তবে এবার জেদ চাপল নিজেই বানাবেন বাজি। কিন্তু শিখবেন কার কাছে, ভাগ্যক্রমে পরিচয় হল বাজি বিশারদ আকবর আলির সঙ্গে। আস্তে আস্তে পরিচয় হল সোরা গন্ধক ও বারুদের সঙ্গে। এরপরেই তিনি ছোটদের সেই ডাকা নাম ধরে ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন সকলের 'বুড়িমা'। এরপরে তিনি ডানকুনি সহ নানা জায়গায় কারখানি তৈরি করলেন। 

-

১৯৯৫ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন বাঙালির প্রিয় ‘বুড়িমা’। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধরেরা এই ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যান। তিনি না থাকলেও বুড়িমা বলতেই চকোলেট বোম, আর চকোলেট বোম বলতেই ‘বুড়িমা’, তা আট থেকে আশি, সকল বাঙালির কাছেই এক অতি প্রচলিত বুলি।


আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।