সংক্ষিপ্ত
লবণাক্ত জমি আর জলের সমস্যা সেই ২০২০ সাল থেকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুন্দরবন সফরের সময়ই স্থানীয়রা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দ্রুত সমস্যার সমাধান চাইছেন এলাকার মানুষ।
হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বিভাস মণ্ডল। দুই বছর আগে পর্যন্ত তাঁর পেশা থিল কৃষিকাজ করা। ২০২০ সালের পর থেকে তিনি কৃষি কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বেকার। বিভাষ জানিয়েছেন আম্ফান ঝড় কেড়ে নিয়েছে তাঁর সবকিছু। কারণ সুন্দরবনের বাসোস্ফিয়ার রিজার্ভের অঞ্চলে লবণাক্ত জল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তাঁর চাষের জমিতে ঢুকে গিয়েছিল। তারপর থেকেই তাঁর জমি কৃষিকাজের জন্য অযোগ্য হয়ে যায়।
নোনা মাটির সঙ্গে নোনা জল- বর্তমান সুন্দরবনের বাসিন্দাদের কাছে একটি বড় সংস্থা। সংবাদ সংস্থা পিটিআর কথা বলেছিল খাপুকুর গ্রামের বাসিন্দা শিখা মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি স্থানীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে পাণীয়জল কিনে পান করেন। কারণ নলকূপগুলিতে শুধুমাত্র লবণাক্ত জলই ওঠে। আম্ফানের কারণে মাটি যেখন লবণাক্ত হয়ে গেছে। তেমনই জলও লবণাক্ত হয়ে গেছে। অনেকের কাছে যা পাণের অযোগ্য।
নলকূপ থেকে তারা যে ভূগর্ভস্ত জল পান তার লবণাক্তরা হল 5 PSU (প্র্যাকটিক্যাল স্যালিনিটি ইউনিট)। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে সামুদ্রিক বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপত অভিজিৎ মিত্র জানিয়েছে, আদর্শ PSUএর মান হওয়া উচিত শূন্য। বিভাস মণ্ডল বা শিখা মণ্ডলের মত অনেক মানুষ রয়েছে যারা এজাতীয় সমস্যার মুখোমুখী হচ্ছেন নিত্য দিন। গত সপ্তাহেই উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকায় সফর করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে এজাতীয় সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন।
সুন্দরববনকে একটি নতুন জেলা তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ সেই জেলার বাসিন্দা হবে। শিখা মণ্ডল পিটিআইকে জানিয়েছেন,'আমাদের পাণীয় জলের সংস্থান নেই। আমাজের জমি চাষাবাদ করার জন্য সঠিক নয়। ২০২০ সালে আম্ফানের কারণে জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সমস্যার সমাধান করুক। আমরা আর অন্য কিছুই চাই না।'
২০২০ সালে ২১ মে আম্ফান ঘূর্ণিঝড় রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছিল। হাজার হাজার গাছ উপড়ে গিয়েছিল। নিচু এলাকা জল জমে গিয়েছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। সেই প্রাকৃতিক তাণ্ডব ছিল মানুষের কাছে ভয়াবহ স্মৃতি।
গ্রামবাসীদের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে ২০ লিটার জল ১০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একেকটি পরিবারের মাসিক জলের জন্যই ১৫০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। যা সুন্দরবনে দরিদ্র পরিবারগুলির কাছে রীতিমত কষ্টসাধ্য। শিখা মণ্ডল জানিয়েছেন , জলের জন্য যে পরিমাণ টাকা দিতে হয় তা দেওয়া তাদের কাছে কাছে রীতিমত কষ্টসাধ্য। তিনি জানিয়েছেন প্রশাসন পাণীয় জলের সমস্যার সমাধান করুক এটা গ্রামের সকলেই চায়। তিনি জানিয়েছেন গ্রামের কিছু মানুষ বাধ্য হয়েই লবণাক্ত জল পান করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এদাতীয় লবণাক্ত জল খাওয়ায় শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে বলেও অনেকে মনে করছে।
বসিরহাট মহকুমার অধীন হাসনাবাদ, ভবানীপুর, বরুণহাট ব্লকের জমি কৃষিকাজের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক মানুষই রুজিরুটির তাগিদে চাষাবাদ বন্ধ রেখেছে। পাল্টা রুজির সন্ধানে চিংড়ি চাষের চেষ্টা করছে। বিভাস মণ্ডল বলেন গ্রামে এখন আর তেমন কাজ নেই। লবণাক্ত জমি- এই জমি নষ্ট হয়ে হয়ে গেছে। চিংড়ি চাষ করে সংসার চালাতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ
মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রবল শক্তি বাড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় মনদৌস, আজ মধ্যরাতেই স্থলভাবে আছড়ে পড়বে
গ্রামের স্কুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পড়ুয়াদের চকলেট খাওয়ালেন-দিলেন খেলনা