সংক্ষিপ্ত
- খোলা বাজারে দেদার বিক্রি হয় অ্যাসিড
- সচেতনা অভাব স্পষ্ট বাংলায়
- অ্যাসিড হামলার শীর্ষে রয়েছে বাংলা
- সংখ্যাটা রীতিমত আতঙ্ক বাড়ায়
শমিকা মাইতি, প্রতিনিধি, অ্যাসিড হামলা নিয়ে না আছে আমাদের রাজ্যে কোনও সচেতনতা, না আছে আক্রান্তের প্রতি সহমর্মিতা। প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে খোলাবাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড। ঘৃণ্য এই অপরাধের ঘটনায় ভারতের শীর্ষ স্থানে তাই ‘জ্বলজ্বল করছে’ পশ্চিমবঙ্গের নাম। এক বার নয়, গত পাঁচ বছর ধরে প্রথম স্থান দখলে রেখেছে বাংলা।
দুর্ভাগ্যের কথা হল, অ্যাসিড হামলার ঘটনায় বিশ্বে আবার প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ভারতে মোট ২২৮টি অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ২২৩, ২০১৭ সালে ২৪৪। ২০১৮-তে ৫০টি অ্যাসিড হামলার ঘটনা নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। উত্তরপ্রদেশ এবং ওড়িশায় ওই সংখ্যা যথাক্রমে ৪০ ও ১৩। অ্যাসিড হামলার চেষ্টাতেও শীর্ষে আমাদের রাজ্য। ২০১৮-তে ১২টি অ্যাসিড হামলার চেষ্টা হয়েছে বাংলায়। তবে মেট্রো শহরগুলির মধ্যে কলকাতার অবস্থা তুলনায় ভাল। মাত্র একটি অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে ২০১৮ সালে। যেখানে গুজরাতে মোট ৯টা অ্যাসিড হামলার মধ্যে ৬টাই আহমেদাবাদ শহরের।
মাওবাদীদের ডোরায় বন্দি সিআরপিএফ জওয়ান, মুক্তির আর্জি পরিবারের .
করোনা টিকা নিয়ে সতর্কতা, জেনে নিন কাদের কাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে না ...
অ্যাসিড হামলা বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত ভাবে অ্যাসিড বিক্রয়। ২০১৩ সালে একটি মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রত্যেক রাজ্যকে অ্যাসিড বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে নিজস্ব আইন তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিল। অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। যেমন, স্থানীয় থানাকে না-জানিয়ে কোনও বিক্রেতা দোকানে অ্যাসিড রাখতে পারবে না। কোন ধরনের অ্যাসিড, কত পরিমাণে মজুত ও বিক্রি করা হচ্ছে তার হিসাব দিতে হবে থানায়। এমনকী পরিচয়পত্র না থাকলে অ্যাসিড বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। এই সমস্ত নিয়ম না মানলে শুধু ক্রেতা নয়, বিক্রেতারও শাস্তি হওয়ার কথা। কিন্তু মুশকিল হল, এই সমস্ত নির্দেশ খাতায়-কলমেই রয়েছে। খোলা বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড। পাড়ার ছোট দোকান তো বটেই, শহরের বড় বড় মলেও শৌচাগার পরিষ্কার করার উপাদান হিসাবে বিক্রি হচ্ছে অ্যাসিড। এমনকী অনলাইনেও অ্যাসিড কেনা যাচ্ছে।
প্রতিবেশী বাংলাদেশ কিন্তু শুধুমাত্র কঠোর আইন ও রাসায়নিক বিক্রয়ের উপর কড়া নজরদারি চালিয়ে অ্যাসিড হামলার সংখ্যা লক্ষ্যণীয় ভাবে কমিয়ে ফেলতে পারছে।
আমরা পারছি না কেন?
আসল সমস্যাটা হল, এ দেশে অ্যাসিড আক্রমণকে এখনও গুরুতর অপরাধ বলে মনে করে না পুলিশ-প্রশাসন। এটা যেন, মহিলাদের উপরে অত্যাচারের একটা অস্ত্র মাত্র। ফলে অ্যাসিড তৈরি, মজুত থেকে শুরু করে তা বিক্রি করা পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট নীতি নেই প্রশাসনিক স্তরে। অ্যাসিড আক্রমণে দোষীদের ন্যূনতম ১০ বছর এবং প্রয়োজনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা রয়েছে আইনে। বাস্তবে, আইনের চোরাফাঁকে দোষীরা ছাড়া পেয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। অ্যাসিড আক্রান্তদের অবস্থা আরও খারাপ। চেহারায় বিকৃতির কারণে আক্রান্তেরা কুঁকড়ে থাকেন, পরিবার পরিজনকে পাশে পান না বেশিরভাগ সময়। সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে গড়িমসি করে প্রশাসন। চিকিৎসা ও মামলা চালানোর জন্য বিপুল খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। আক্রান্তদের অভিযোগ, অ্যাসিড হামলার ঘটনা ক্রমবর্ধমান হলেও রাজ্য সরকার মুখ বুজে বসে আছে। সরকারের উদাসীনতার জন্যই তাঁদের এমন ভাবে জীবন্মৃত হয়ে থাকতে হচ্ছে।
বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, ‘এই রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। আমরা নিশ্চিত অ্যাসিড হামলার সংখ্যা পঞ্চাশের চেয়েও অনেক বেশি। রাজ্য পুলিশ অভিযোগই নিতে চায় না বেশিরভাগ সময়।’ যার প্রত্যুত্তরে তৃণমূলের তরফে তাপস রায় বলেন, ‘বিজেপি মনগড়া অভিযোগ করছে। এই রাজ্যে অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক কম। নারীদের উপরে অপরাধের ঘটনাতেও অনেক পিছিয়ে আমাদের রাজ্য।’
রাজনৈতিক তরজায় চাপা পড়ে যায় অ্যাসিড আক্রান্তের দীর্ঘশ্বাস।