লকডাউন ছাড়াই করোনা-মুক্তির পথে, দক্ষিণ কোরিয়া পারলে ভারত কি পারে না

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে অধিকাংশ দেশই লকডাউনে

এরমধ্যে ব্যতিক্রম দক্ষিণ কোরিয়া

ইতিমধ্যেই তারা করোনাভাইরাস-কে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়েছে

কিন্তু, তাদের একদিনের জন্যও লকডাউনের প্রয়োজন হয়নি

 

amartya lahiri | Published : Apr 2, 2020 10:49 AM IST / Updated: Apr 02 2020, 04:22 PM IST

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থআ জানিয়েছে, সার্স-কোভ-২ অর্থাৎ কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটার মতো সংক্রামক ভাইরাস এর আগে মানব সভ্যতা দেখেনি। বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে গিয়েছে এই নতুন করোনাভাইরাসটি। এই অবস্থায় একের পর এক রাষ্ট্র এই সংক্রমণ মোকাবিলার একমাত্র পথ হিসাবে লকডাউন-কে বেছে নিয়েছে। বলা হচ্ছে এটাই একমাত্র রাস্তা করোনাভাইরাস প্রতিরোধের। কিন্তু, তাই কি? আর কি কোনও পথই নেই?

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব প্রথম দেখা গিয়েছিল চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। গোটা হুবৈই প্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি প্রদেশ ও ঘনবসতিপূর্ণ শহর সম্পূর্ণ তালাবন্ধ করে দিয়েছিল চিন। তারপর একে একে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ব্রিটেন, আমেরিকার মতো বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলি-সহ ভারত-পাকিস্তানের মতো বেশ কিছু উন্নয়নসীল দেশও লকডাউনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।

এই ভিড়ে ব্যতিক্রম অবশ্য একটিমাত্র দেশ, দক্ষিণ কোরিয়া। বস্তুত, চিনের পর প্রথম যে দেশগুলিতে মারাত্ক আকার ধারণ করেছিল করোনা, তাতে ইতালি ও ইরানের পাশাপাশি নাম ছিল দক্ষিণ কোরিয়ারও। ফেব্রুয়ারি মাসে সেই দেশে হু হু করে বাড়ছিল কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু, আরও একমাস পর এখন কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব একেবারে নিয়ন্ত্রণে বলা যেতে পারে।

নিষিদ্ধ 'করোনাভাইরাস' শব্দটিই, মাস্ক পরলে হাজতবাস, ঘুরছে সাদা পোশাকের পুলিশ

করোনার হাত ধরেই আসছে আরও বড় বিপদ, একসঙ্গে সতর্ক করল তিন বিশ্ব-সংস্থা\

'করোনা করে না বৈষম্য, ইমরান সরকার করে', অমানবিকতার শিকার পাক হিন্দুরা

সেই দেশ একেবারে করোনা-মুক্ত হয়ে গিয়েছে এমনটা বলা যাবে না। বুধবারও নতুন ৮৯ জন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, আর মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। সব মিলিয়ে এই দেশে মোট কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও এই রোগে মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ৯৯৭৬ ও ১৬৯। তবে এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ৫৮২৮ জন। এরসঙ্গে আরেকটি বিষয় বলা ভালো, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই এই দেশে প্রায় ৮ হাজার কোভিজ-১৯ আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। আর তারপরের একমাসে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে, মাত্র ৮৭৬-এ।

সবচেয়ে বড় কথা, একদিনের জন্যও কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াকে লকডাউন প্রোটোকল জারি করতে হয়নি। তাহলে কীভাবে এই সাফল্য এল? দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের দাবি চিনের পরে যখন তাদের দেশে এই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। এই এত বেশি মাত্রায় পরীক্ষার কারণেই রোগটিকে এত সহজে লকডাউন চাড়াই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।  

মুন জে ইন প্রসাসন জানিয়েছে দেশে সংক্রমণ যখন প্রাথমিক স্তরে ছিল, তখন থেকেই তাঁরা করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা শুরু করে দিয়েছিলেন। সংক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকাকালীনই সংক্রামিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করাটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। রোগীদের সেভাবে চিহ্নিত করে শুরুতেই তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এতেই সংক্রমণের বিস্তার ও মৃত্যুমিছিল ঠেকাতে পেরেছে তারা। এই মাসের শেষের মধ্যেই দেশকে পুরোপুরি করোনামুক্ত ঘোষণা করা যাবে বলে আশা করছে দক্ষিণ কোরিয়া।

ভারতের ক্ষেত্রে লকডাউন ছাড়া অবশ্য গতি নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এখানকার বিপুল জনসংখ্যার চাপ এবং শিক্ষার অভাব। দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা যেখানে ৫১ কোটি, সেখানে ভারতের বর্তমান আনুমানিক জনসংখ্যা ১৩৮ কোটি। তার উপর ভারতে কেউ বলছেন গোমূত্র খেয়ে করোনা ঠেকাতে, কেউ বলছেন আল্লার কাছে প্রার্থনা করলেই হবে। আছে আর্থিক সমস্য়া, সম্পদের অভাব-ও। হাতে টেস্টিং কিটও বেশি নেই যে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অত বিপুল হারে পরীক্ষা করা যাবে। তাই ভারতের ক্ষেত্রে লকডাউন ছাড়া সম্ভবত গতি নেই। তবে বুধবারই রাষ্ট্রসংঘ-সহ তিনটি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কাজেই ভারত সরকারকে খুব দ্রুত লকডাউনের বিকল্প ভাবতে হবে। ২১ দিনের বেশি এই অবস্থা ভারতের মতো গরীব দেশের বহন করা সম্ভব নয়।  

 

Share this article
click me!