বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় রঙিন প্রতিযোগিতা, ফিরে দেখা আইপিএলের ইতিহাস

  • আইপিএল মানেই ক্রিকেটের এক নয়া উন্মাদনা
  • এর গ্ল্যামার এবং অর্থ সকলের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়
  • বলতে গেলে যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে আইপিএল স্বপ্নের জগৎ
  • আইপিএলের জন্ম থেকে এখনকার ইতিহাস রইল আপনাদের জন্য
     

Sudip Paul | Published : Aug 22, 2020 5:51 AM IST / Updated: Aug 22 2020, 11:22 AM IST

শুরুর কথা ছিল ২৯ মার্চ থেকে। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারী গোটা বিশ্বের মতই থাবা বসায় আইপিএলেও। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত হয়ে যায় আইপিএল। তারপর থেকেই তৈরি হয় ২০২০ সালে আইপিএলের ১৩ তম মরসুমের ভবিষ্যৎ নিয়ে। যতদিন এগিয়েছে ততই অনিশ্চিত হচ্ছিল আইপিএলের ভাগ্য। একটা সময় এই বছ আইপিএল হবে না, তা একপ্রকার ধরেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যেই করোনার কারণে আইপিএল থমকে গিয়েছিল, সেই করোনা ভাইরাসের কারণেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে টি২০ বিশ্বকাপের ভাগ্য। অবশেষে বাতিল হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হতে চলা টি২০ বিশ্বকাপ। তারপরই পরিষ্কার হয় আইপিএলের রাস্তা। ঠিক হয়ে দেশের মাটিতে নয়, আইপিএল হবে বিদেশের মাটিতে। আরব আমিরশাহিতে। ফলে সব বাধা পেরিয়ে সবুজ সংকেত পায় আইপিএলের ১৩ তম মরসুম। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া আইপিএলের জয় যাত্রা অব্যাহত থাকতে চলেছে বিশ্ব মহামারীর মধ্যেও। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে আইপিএল ২০২০। শেষ ১০ নভেম্বর। নয়া মরসুমে ঘিরে চড়তে শুরু করেছে উত্তেজনা ও উন্মাদনার পারদ। তার আগে  দেখে নেওয়া আইপিএলের ইতিহাস এক ঝলকে।

আরও পড়ুনঃধোনিকে দুপাতার আবেগ ভরা চিঠি মোদীর, সমস্ত কাজ ফেলে কি উত্তর দিলেন এমএসডি

আরও পড়ুনঃধোনির পর রায়নাকেও চিঠি প্রধানমন্ত্রীর, গম্ভীরের পর কি বিজেপির নিশানায় এই দুই তারকা ক্রিকেটার

আইপিএল-এর জন্মকথা
২০০৮ সালে বিশ্ব ক্রিকেটের এক নয়া অধ্যায় শুরু হয় ভারতের মাটিতে। শুরু হয় আইপিএল। ক্রিকেটকে আরও আধুনিক, আরও ফাস্ট, আরও আকর্ষণীয় ও আরও  'নেল বাইটিং' করতে ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আইপিএল অর্থাৎ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ঘোষণা করে বিসিসিআই। ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্ভর এই ক্রিকেট লিগের শুরু হয় ২০০৮ সালে এপ্রিল মাসে।  আইপিএলের প্রতিষ্ঠাতা ধরা হয় বিসিসিআইয়ের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ললিত মোদীকে। সেই সময় আইপিএলের দায়িত্বভারও সামলেছিলেন তিনি। আইপিএলই প্রথম ক্রিকেট বিশ্বে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক লিগের সূচনা করে। দেখতে দেখতে ১২ বছর পার করেছে আইপিএল। ২০০৮ সালের ছোট্ট চারা গাছ হিসেবে জন্ম নেওয়া আইপিএল বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বে এক মহীরুহে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বকাপের থেকেও জনপ্রিয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ।

আইপিএল নিলাাম
আইপিএলই প্রথম ক্রিকেট টুর্নামেন্ট যেখানে নিলামের মাধ্যমে দল গঠনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়। নিলামের জন্য প্রত্যেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলকে একটি নির্দিষ্ট  প্রত্যেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলকে একটি নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করে দেওয়া হয় আইপিএল গভর্নিং বডির তরফ থেকে। সেই অর্থ থেকেই হিসেব করে ও দলের প্রয়োজন মত দেশি-বিদেশী প্লেয়ার কেনেন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তারা।  বোর্ডের তরফ থেকে একটি জমকালো নিলামের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত থাকেন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির কর্তারা। অনেক হিসেব নিকেশ করেই দিনভর চলে প্লেয়ার কেনা। 

আইপিএলের আইকন প্লেয়ার ভাবনা
আইপিএলই প্রথম আইকন প্লেয়ারের ভাবনাটিও যে কোনও ক্রিকেট লিগে নিয়ে আসে। আইপিএলের প্রথম মরসুমে আইকন প্লেয়ার ছিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের পাঁচ খেলোয়াড়কে দেওয়া একটি স্ট্যাটাস। ২০০৮ সালে প্রথম আইপিএলে আইকন প্লেয়ারদের তালিকায় ছিলেন সচিন তেণ্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়, যুবরাজ সিং ও বীরেন্দ্র সেওয়াগ। আইকন প্লেয়াদের নিলামের বাইরে রাখা হয় ও আগে থেকেই তাদের নির্দিষ্ট দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দায়িত্ব পান কেকেআরেরে, সচিন তেন্ডুলকর দায়িত্ব পান মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের, রাহুল দ্রাবিড় দায়িত্ব পান ব্যাঙ্গালোর রয়্যাল চ্য়ালেঞ্জার্সের, যুরবাজ কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ও পরবর্তিতে বীরেন্দ্র সেওয়াগের নাম যোগ করা হয় এবং তিনি দায়িত্ব পান দিল্লি ডেয়ার ডেভিলসের। নিয়ম অনুযায়ী নিলামে  কেনা  ওই ফ্র্যাঞ্চাইজির সব থেকে দামি প্লেয়ারের থেকে ১৫ শতাংশ বেশি অর্থ পেয়েছিলে  আইকন প্লেয়াররা।

আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি
আইপিএলকে অনেক বেশি পেশাদারি করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভাবনা নিয়ে আসা হয়। যা এর এগে বিশ্বে কোনও ক্রিকেট টুর্নামেন্টে করা হয়নি। একটি প্রাইভেট সংস্থা শহর ভিত্তিক দলের দায়িত্ব নেয়। সম্পূর্ণ বেসরকারি কোম্পানির আদব কায়দায় চলে দল গঠন থেকে শুরু করে সব ধরনের অফিসিয়াল কাজ। নিজের কেনা দলের পেছনে লগ্নি, প্লেয়ার প্রতি খরচ থেকে শুরু করে সব দায়িত্ব নিতে হয় ফ্যাঞ্চাইজিদের। সেখান থেকে লাভ তুলে আনার দায়িত্বও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। ফ্র্যাঞ্চাইজি সঠিকভাবে পরিচালনা করা ও লাভের মুখ দখানোরও এক নয়া চ্যালেঞ্জ উঠে আসে। উদাহরণ স্বরূপ আইপিএলের প্রথম কেকেআর খুব একটা ভাল না খেললেও, ব্যবসার নিরিখে এক নম্বর স্থানে ছিল।

আইপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি
প্রতিযোগিতার প্রথম সেঞ্চুরির জন্য বেশি সময় অপক্ষা করতে হয়নি দর্শক থেকে শুরু করে প্লেয়ার, ফ্র্যাঞ্চাইজি ও আইপএলের গভর্নিং কাউন্সিলের। কেকেআর বনাম বেঙ্গালুরুর প্রথম ম্যাচেই কলকাতার হয়ে বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন ব্র্যান্ডন ম্যাকালাম। ১৫৮ রানের সেই ইনিং আজও চোখে ভাসে সকলের। প্রথম ম্যাচেই ম্যাকালাম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিকেটের নবপ্রজন্মের সূচনা হতে চলেছে আইপিএলের হাত ধরে। এরপরে অগুনতি স্মরণীয় ইনিংস আইপিএল উপহার দিলেও, আইপিএলের প্রথম ম্যাচের প্রথম সেঞ্চুরি চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে আইপিএল তথা ক্রিকেট বিশ্বের ইতিহাসে।

আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজির সংখ্যা বৃদ্ধি
আইপিএলের প্রথম মরসুমে ৮টি দল অর্থাৎ ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে শুরু হয়ে প্রতিযোগিতা।  যদিও টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে দল বাড়ানোর চিন্তাভাবনাও শুরু করে আইপিএলের গভর্নিং বডি। ২০১১ সালে সালে সর্বাধিক ১০টি দল খেলে প্রতিযোগিতায়। ২০১২ ও ২০১৩ সালে খেলে ৯টি করে দল। যদিও  তারপর আটটির বেশি দল না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সময় ও আইসিসির সূচির জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয় বিসিসিআই।

চিয়ার লিডার
ক্রিকেটকে অনেক বেশি উপভোগ্য করতে ও বিনোদনের মশলা বাড়াতে আইপিএলেই প্রথম চিয়ার লিডার রাখার ভাবনা গ্রহণ করা হয়। দুটি দলের আলাদা আলাদা চিয়ার লিডার রাখা হয়। ব্যাটিংয়ে চার-ছয় হোক আর বোলিংয়ের সময় উইকেট, নিজের দলের সাফল্য অনুযায়ী দলকে ও সমর্থকদের উৎসাহ দেন এই সকল চিয়ার লিডাররা। ডিজের তালে নেচে গোটা মাঠকে মাতিয়ে রাখেন তারা। আধুনিক ক্রিকেটে নতুন মাত্রা যোগ করে এই চিয়ার লিডার ভাবনা। বর্তমানে চিয়ার লিডার ছাড়া টি২০ ক্রিকেট ভাবাই যাই না। আইপিএলের দৌলতে চিয়ার লিডাররাও আধুনিক ক্রিকেট এ নব প্রজন্মের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

আইপিএল চ্যাম্পিয়ন
এখনও পর্যন্ত আইপিএলের ১২টি মরসুম খেলা হয়েছে। প্রথম মরসুমে চ্যাম্পিয়ন হয় রাজস্থান রয়্যালস। এছাড়া সব থেকে বেশিবার আইপিএল শিরোপা ঘরে তুলেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ৪ বার। ২০১৯ সালের শেষ আইপিএলের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নও মুম্বই। সর্বাধিক চ্যাম্পিয়ন হবার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। তিন-তিনবার ট্রফি জিতেছে চেন্নাই। কলকাতা নাইট রাইডার্স ও হায়দরাবাদ দু'বার করে আইপিএল সেরা হয়েছে। ২০২০ মরসুমে নতুন চ্যাম্পিয়নের অপেক্ষায় রয়েছে ভারতের কোটিপতি লিগ।

ফিক্সিং কাণ্ড
ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া থেকে বাদ যায়নি আইপিএল। ২০১৩ সালে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে নাম জড়ায় রাজস্থান ব়য়্যালস-এর ৩ ক্রিকেটার শ্রীসন্থ, অজিত চান্ডিলা ও অঙ্কিত চৌহানের। তিন ক্রিকেটারকে গ্রেফতারও করে পুলিস। নির্বাসিত করা হয় তাদের। রাজস্থানের মালিক রাজ কুন্দ্রার নামও বেটিং বিতর্কে জড়িয়ে যায়। বুকিদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অপরাধে পরবর্তীতে বিন্দু দারা সিং এবং চেন্নাই দলের মালিক শ্রীনিবাসনের জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পনকে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশ। পাকিস্তানি আম্পায়ার আসাদ রউফের নামও বেটিং বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার জেরে রাজস্থান রয়্যালস এবং চেন্নাই সুপার কিংস এই দুই দলকেই দু’বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়। দু বছর নির্বাসন কাটিয়ে আইপিএল ফিরে আসে দুটি দল। নির্বাসন মুক্ত হয়েছেন ক্রিকেটার শ্রীসন্থও।

আইপিএলের দান
প্রাথমিকভাবে প্রাইভেট ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ হিসেবে শুরু হলেও, বর্তমানে আইপিএলই হয়ে উঠেছে নতুন প্লেয়ার উঠে আসার ও প্রতিভার বিচার করার আসল মাপকাঠি। শুধু ভারতই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশও আইপিএল থেকে পেয়েছে তাদের আগামী প্রজন্মের একাধির তারকা ব্যাটসম্যান ও বোলার। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক  টি২০ দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবকটি দেশের কাছেই আইপিএল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা হয়ে উঠেছে।  

আরও পড়ুনঃচাহলের পর বাগদান সারলেন বিজয় শঙ্কর, আইপিএলের আগেই শুরু করলেন জীবনের নতুন ইনিংস

Share this article
click me!