প্রায় জনমানব শূন্য গ্রাম, মানুষের বদলে সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে সব পুতুল

জাপানের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ও কম বসতিপূর্ণ একটি দ্বীপ হল শিকোকু। এই গ্রামের জনসংখ্যা বছরের পর বছর হ্রাস পাচ্ছে। এই শিকোকু দ্বীপটি প্রায় ১৮,৮০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত। এই দ্বীপের একটি পাশ দিয়ে বইছে য়োশিনো নদী।  অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা শিকোকু দ্বীপের একটি ছোট্ট উপত্যকা লিয়া। সেখানেই রয়েছে দুর্গম পাহাড়ী গ্রাম নাগোরো। আগে এই গ্রামে প্রায় ৩০০ জন মানুষের বাস ছিল। ক্রমে সেই জনসংখ্যা কমতে কমতে প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে। বর্তমানে সারা বিশ্বের কাছে জাপানের এই প্রায় জন শূণ্য গ্রাম আকর্ষণীয়। এর কারণ জানলে অবাক হবেন-
 

deblina dey | Published : Aug 24, 2020 10:48 AM IST / Updated: Aug 26 2020, 05:34 PM IST

17
প্রায় জনমানব শূন্য গ্রাম, মানুষের বদলে সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে সব পুতুল

আজ থেক বেশ কয়েক বছর আগে এই নাগোরো-তে শেষ শিশুটির জন্মগ্রহণ হয়েছিল। তারপর থেকে আজও সেখানে কোনও মানুষের জন্ম হয়নি। বর্তমানে নাগোরো-তে মাত্র ২৭ জন মানুষের বাস। ২০১২ সালে শিক্ষার্থীর অভাবে বন্ধ হয়ে যায় গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়।

27

নাগোরোর এমন পরিস্থিতির ফলে বেশিরভাগ গ্রামবাসী চাকরীর সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছে। গ্রামের যে শেষ শিশুটি জন্মেছিল, সেও জন্মানোর পর পরেই বাবা-মায়ের সঙ্গে এই গ্রাম পরিত্যাগ করে। তাঁর নাম সুকিমি আয়ানো। মাত্র সাত বছর বয়সে সুকিমি-এর বাবার মৃত্যু হয়। এরপর ২০০২ সালে নাগোরোতে ফিরে আসে সে। গ্রামের সমস্ত খালি ঘর এবং ফাঁকা রাস্তাগুলি তাঁর মনে গভীরভাবে ছাপ ফেলে।

37

এত সুন্দর এই গ্রামটিকে নিঃসঙ্গতার হাত থেকে বাঁচানোর পণ করে সুকিমি। (বর্তমানে সুকিমি-এর বয়স ৫৭ বছর)। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের আকারের পুতুল তৈরি করে সাজাতে শুরু করে সে। সুকিমির এই কাজে সাহায্যের হাত বাড়ায় গ্রামে থাকা বাকি সদস্যরাও। ধীরে ধীরে জাপানের এই জনমানবহীণ গ্রাম বিশ্বের কাছে পরিচিতি পায় 'দ্যি ভ্যালি অফ ডল' অর্থাৎ পুতুল গ্রাম নামে। 

47

সুকিমির শৈশবকালে এই গ্রামে ছোট শিশু সহ ৩০০ জনেরও বেশি লোক বাস করত। নতুন প্রজন্ম কাজ ও শিক্ষার উপযুক্ত সন্ধানে শহরে পাড়ি জমান। গ্রামে মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এরপর থেকেই সুকিমি মৃত গ্রামবাসীদের স্মরণে তাঁদের আদলের পুতুল তৈরি করতে শুরু করে। আর গ্রামের প্রতিটি ফাঁকা বাড়িতে সেই পড়শির আদলে দেখতে পুতুল রেখে আসতেন। এই ভাবে শেষ পর্যন্ত এই গ্রামের মানুষের চেয়ে বেশি পুতুলের সংখ্যা বেশি হয়ে উঠে।

57

এই গ্রামে এখন প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে কোথাও মাছ ধরতে ব্যস্ত এক পুতুল, কোথাও বা মাঠে চাষ করছে এমন পুতুল। এমনকী বন্ধ হয়ে যাওয়া ফাঁকা স্কুলের ক্লাসরুমগুলিও ভরে উঠেছে পুতুলে। একজন পুতুল শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের পড়াচ্ছেন। এমনভাবেই কাটছিল সুকিমি-র পুতুল তৈরির দিন। এর পর এক ঘটনা এই জনশূণ্য গ্রামকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

67

শিকোকু দ্বীপে ঘুরতে এসে এক পর্যটক এই গ্রামের বিষয়ে শোনেন। আর এই গ্রাম ঘুরে দেখার পর তিনি একটি ছবি পরিচালনা করার কথা ভাবেন। তিনি ছিলেন জার্মান চিত্রনির্মাতা ফ্রিৎজ শুম্যান। ২০১৪ সালে সুকিমির এই কাজ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন ফ্রিৎজ। সেই তথ্যচিত্রে এই গ্রামকে তিনি ‘ভ্যালি অফ ডলস’ নামে আখ্যা দেন। এর পরেই পুতুল দিয়ে সাজানো এই গ্রাম পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

77

এর পর থেকে ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে গ্রামের চিত্র। গ্রামবাসীদের বাড়তে থাকে আয়। পর্যটকদের সবথেকে বেশি ভিড় থাকে সুকিমির বাড়িতে। কারণ সেখানেই রয়েছে তার হাতের তৈরি এই নিঁখুত শিল্পের অফুরন্ত ভান্ডার। শেষ কয়েক বছর ধরে গ্রামে বার্ষিক পুতুল উৎসবও পালন করা হচ্ছিল। এই উৎসবে পুতুল তৈরি করতে আগ্রহীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন ওয়ার্কসপে। 

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos