"ছত্রপতি" শিবাজী মহারাজকে বলা হয় ভারতীয় নৌবাহিনীর জনক।তিনিই প্রথম ভারতীয় রাজা যিনি ৭০০ জাহাজ সম্বলিত একটি আধুনিক নৌবহর গড়ে তোলেন। কারণ তিনি বুঝেছিলেন, শত্রুদের পরাজিত করতে আধুনিক নৌবহর কতটা জরুরি। দাক্ষিণাত্যের একাধিক সম্রাটের ছিল বিশাল বিশাল নৌবহর। আজও ভারত সেই ধারাকে সসম্মানে টিকিয়ে রেখেছে। ভারতীয় নৌসেনা দিবসে নৌবাহিনীর কিছু অজানা কথা শোনাচ্ছেন অনিরুদ্ধ সরকার ।
সারা বিশ্বের সামনে অন্যতম সেরা নৌবাহিনী হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী (Indian Navy)। আরব সাগর, ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জলভাগে যুদ্ধের মহড়া দিয়ে নানা সময়ে শক্তি প্রদর্শন করে ভারতীয় নৌবাহিনী (Indian Navy)। নিজ কৃতিত্বে ভারতীয় নৌবাহিনী আদায় করে নিয়েছে সারা বিশ্বেব্যাপী সম্মান। বর্তমান বিশ্বে কোন দেশ কত বেশি শক্তিশালী তা নির্ভর করে সেই দেশের পরমানু শক্তি প্রদর্শনের ওপর। আজ কোনো দেশ যদি ভারতের ওপর পরমাণু হামলা করে তো তার বিরুদ্ধে আরও ভয়ঙ্কর পাল্টা আঘাতের জন্য প্রস্তুত ভারত। সামরিক পরিভাষায় এই ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘সেকেন্ড নিউক্লিয়ার অ্যাটাক ক্যাপাবিলিটি’ (Neuclear Attack Capability)। এবিষয়ে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতি, "ভারতের ওপর যদি কোনো দেশ পরমাণু হামলা চালায় তো, সেই দেশের ওপর ভারত এত ভয়ঙ্কর আঘাত হানবে যে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সেই দেশ মুছে যাবে।"
ভারত প্রস্তুত। ভারতীয় নৌবাহিনীর (Indian Navy) হাতে রয়েছে দেশে তৈরি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আইএনএস "অরিহন্ত" এবং আইএনএস "অরিদমন"। এই সাবমেরিনগুলি থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে পরমাণু হামলা চালানো যায়। আধুনিক মানের নিউক্লিয়ার সাবমেরিন "অরিহন্ত" ভারতীয় নৌসেনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ভারতের সাবমেরিন হানার ক্ষমতা বেড়েছে অনেকগুন। ক্ষিপ্রতা, নীরবে হানা দেওয়ার দক্ষতা, বিধ্বংসী আক্রমণের ক্ষমতা— সব দিক থেকেই ভারতের "অরিহন্ত" রুশ সাবমেরিন "আকুলার" চেয়ে অনেক এগিয়ে। "অরিহন্তে"র সঙ্গে এঁটে ওঠা তো অনেক দূরের কথা, চিনের তৈরি নিউক্লিয়ার সাবমেরিনগুলি এখনও রাশিয়ার সাবমেরিন আকুলার সঙ্গেই পাল্লা দিতে সক্ষম নয়। "ইন্ডিয়ান নেভি" (Indian Navy) হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে। ১৬১২ সালে স্থাপিত ভারতীয় নৌবাহিনীর তখন নাম ছিল “রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি” (Royal Indian Navy) । তবে ১৬১২ সালে স্থাপিত হলেও “রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি” (Royal Indian Navy) নামকরণ হয়েছিল ১৯৩৪ সালে।এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫০ সালে এই “রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি” নামটি পরিবর্তন করে রাখা হয় "ইন্ডিয়ান নেভি'।তবে ১৯৫০ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর নাম "ইন্ডিয়ান নেভি" (Indian Navy) রাখা হলেও এর অনেক আগে অর্থাৎ ১৮৩০ সালে ব্রিটিশরা ভারতীয় নৌবাহিনীর নাম রেখে ছিল "ইন্ডিয়ান নেভি (Indian Navy)"। গোয়ার স্বাধীনতার সময় ১৯৬১ সালে পর্তুগিজ নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রথম স্বাধীন অভিযান চালায় ।
৪ ডিসেম্বর ভারতীয় "নৌসেনা দিবস" (Navy day) হিসাবে পালন করা হয়।কিন্তু এই দিনটি ভারতীয় নৌসেনা প্রতিষ্ঠা দিবস নয়।এই ৪ ডিসেম্বর পালন করার পেছনে রয়েছে অন্য একটি কারন।১৯৭১ সালে ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারতীয় নৌবাহিনী (Indian Navy) আক্রমণ করেছিল পাকিস্তানের করাচি বন্দরের ওপর।আর এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছিল "অপারেশন ট্রাইডেন্ট" । ৫০০ পাকিস্তানি নৌ আধিকারিক মারা যায় । এই অভিযানে ভারতীয় নৌ-সেনার তিনটি মিসাইল নৌকা "আইএনএস নিপাত", "আইএনএস নির্ঘাত" এবং "আইএনএস বীর" গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এই অপারেশনে ভারতীয় নৌবাহিনীরা সাফল্য দেখেছিল সারা বিশ্ব। আর তাদের এই অসীম বীরত্ব ও সাফল্যের স্মৃতি স্বরূপ ৪ ডিসেম্বর দিনটিকে "নৌসেনা দিবস" (Navy Day) হিসাবে পালন করা হয়।এই দিনটির জন্য ভারতীয় নৌ আধিকারিকরা ১ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে মহড়া চলাকালীন নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শন করেন । মুম্বইয়ের আরব সাগরে এই মহড়া হয় ।
ভারতের কাছে থাকা "ব্রাহমোস মিসাইল" বিশ্বের সবথেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন মিসাইল। ভারতই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও এয়ারফোর্স তিনটি বাহিনীর কাছেই সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল রয়েছে। ভারতের মেরিন কমান্ডো (Marine Commando) বাহিনীর নাম "মার্কোস"৷ যার প্রত্যেক সদস্যকে বলা হয় "সমুদ্রের সিংহ"৷ অনেকে আবার মার্কোস কমান্ডোদের "কুমির" বলেও ডাকেন৷ কারণ, জলের তলায় বা বাইরে, এই কমান্ডোদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শত্রুদের পক্ষে বেঁচে ফেরা সম্ভব নয়৷ সারা বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের নৌবাহিনীর (Indian Navy) "ন্যাভাল এয়েরোব্যাটিক টিম" রয়েছে৷ ভারতীয় নৌবাহিনীর "সাগর পবন" তাদের মধ্যে একটি৷
২০০৮-এর ৯ এপ্রিল ভারতীয় নৌবাহিনীর (Indian Navy) দশ সদস্যের একটি দল উত্তর মেরু অভিযান করে এবং সফল হয়ে এক নয়া ইতিহাস তৈরি করে ৷ বিশ্বের গুটিকয়েক দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরাই উত্তরমেরু, দক্ষিণ মেরু ও মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে ‘থ্রি পোলস অ্যাডভেঞ্চার চ্যালেঞ্জ’-এ উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন৷ ভারতীয় নৌসেনার মুকুটে রয়েছে সেই পালক। ভারতীয় নৌসেনার হাতে রয়েছে আই এন এস বিক্রমাদিত্য। সংস্কৃতে, বিক্রমাদিত্যের অর্থ সূর্য।বিক্রমাদিত্য হল কিয়েভ শ্রেণির এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার। ২০১৩ সালে যা ভারতীয় নৌসেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। উজ্জয়িনীর সম্রাট বিক্রমাদিত্যের নামে এর নামকরণ করা হয়। বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রমাদিত্য। ২০০৪ সালের সুনামিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৯ টি জাহাজ ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপে ৷ ভারতীয় নৌসেনা বাহিনী (Indian Navy) ও উপকূলরক্ষী বাহিনী দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ চিন সাগর এলাকায় HARD. বা হিউম্যানেটেরিয়ান অ্যাসিটেন্টস ডিজ়াস্টার রিলিফ অভিযানে নিয়মিত অংশ নেয়৷ উদ্ধারকাজ ও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে সবসময় থেকেছে ভারতীয় নৌবাহিনী (Indian Navy)৷