Gandhi Jayanti- গান্ধী থেকে মহাত্মা, গান্ধীজীর ২০ টি অজানা তথ্য যা চমকে দেবে আপনাকে

' যেদিন ভালবাসা, ক্ষমতার লোভকে হরিয়ে দেবে, সেদিন এই পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসবে।" আর তিনি মনে করতেন, "চোখের বদলে চোখ, সারা বিশ্বকে অন্ধ করে দেবে।' দোসরা অক্টোবর তাঁর ১৫২ তম জন্মদিবস। 

Asianet News Bangla | Published : Oct 2, 2021 2:05 AM IST / Updated: Apr 25 2022, 07:38 PM IST

গান্ধী একদিনে মহাত্মা হননি। অনেকটা পথ হেঁটে পোরবন্দরের মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী মহাত্মা হয়েছিলেন। যিনি বলেছিলেন, "পৃথিবীতে তুমি যে পরিবর্তন দেখতে চাও তা নিজেকে দিয়ে শুরু করো।" ভারতে শান্তি বজায় রাখতে তিনি বলেছিলেন, " যেদিন ভালবাসা, ক্ষমতার লোভকে হরিয়ে দেবে, সেদিন এই পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসবে।" আর তিনি মনে করতেন, "চোখের বদলে চোখ, সারা বিশ্বকে অন্ধ করে দেবে।" ২ অক্টোবর তাঁর ১৫২ তম জন্মদিবস।  লিখছেন - অনিরুদ্ধ  সরকার 

(১)গান্ধীজী সারা ভারতজুড়ে অজস্র পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। গান্ধীজীর এই পদযাত্রা নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে। গান্ধী গবেষকরা বলেন, গান্ধীজী জীবনে যতটা পথ হেঁটেছেন তাতে আপনার নাকি পুরো পৃথিবী দুবার ঘোরা হয়ে যাবে। দিনে প্রায় ১৮ কিলোমিটার হাঁটতেন তিনি।


(২)গান্ধীজীর সাথে একাধিক বিখ্যাত ব্যক্তির চিঠিপত্র আদান প্রদান চলত। যার মধ্যে রাশিয়ান সাহিত্যিক লিও তলস্তয় অন্যতম। গান্ধীজী তলস্তয়কে প্রচুর চিঠি লিখতেন। হিটলারকেও গান্ধীজী চিঠি লিখেছিলেন যুদ্ধ বন্ধের অনুরোধ করে। কিন্তু তা হিটলারের কাছ অবধি পৌছয়নি। কারণ ব্রিটিশ সরকার তা আগেই বাজেয়াপ্ত করেছিল।

(৩) গান্ধীজী ছোটবেলায় খুবই অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলেন। লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করে এসেও ব্যারিস্টার মোহনদাস গান্ধী মুখচোরাই ছিলেন। আদালতে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গেলে তার হাত পা কাঁপত। বিপক্ষের উকিল কিছু বললে তিনি আমতা আমতা করে কোনও উত্তরই দিতে পারতেন না। ফলে আইন ব্যবসায় পসার হল না। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দেন গান্ধী।

আরও পড়ুন- ভারতীয় টাকায় মহাত্মা গান্ধীর ছবি, কবে কোথায় তোলা হয়েছিল জানেন
(৪)'হাফ নেকেড ফকির' প্রথমজীবনে লন্ডনে পড়াশুনাকালীন সময় পুরোদস্তর সাহেবের মতই সুটেড-বুটেড থাকতেন। আর নিয়মিত নাচগান করতেন এবং বেহালা শিখতেন।

(৫)মহাত্মা গান্ধীর ইংরেজি উচ্চারণের মধ্যে আইরিশ প্রভাব ছিল। কারণ তাঁর প্রথম শিক্ষক ছিলেন একজন আইরিশ।

(৬)দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানকালে গান্ধী যুদ্ধে আহতদের সেবা দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় ব্রিটিশ আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। যুদ্ধে একজন স্ট্রেচার বাহক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।


(৭)ডারবানে থাকাকালে গান্ধী মিলের আটার রুটি খেতেন না। খেতেন হাতে ঘোরানো যাঁতায় ভাঙা আটার রুটি। আর তারজন্য তিনি খুঁজেখুঁজে সেখানে একটি যাঁতাও কেনেন এবং নিজে আটার রুটি বানাতে শুরু করেন। 

আরও পড়ুন- শুধু তাঁর মূর্তি পুজো, ইচ্ছের কোনও মুল্য দেয়নি তাঁর স্বদেশ
(৮) গান্ধী তাঁর জীবদ্দশায় দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে সব মিলিয়ে প্রায় ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ১৯২২ সালে 'ইয়ং ইণ্ডয়া' পত্রিকায় ব্রিটিশ বিরোধী  আর্টিকেল লেখার জন্য ৬ বছরের কারাদন্ড হয়, সেটিই ছিল গান্ধীর সবচেয়ে বড় সাজা কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে তাঁকে দুবছরের মাথায় ছেড়ে দেওয়া হয়।


(৯) গান্ধী অনেক বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতেন।যেমন গান্ধী একবার বড় ভাইয়ের সাথে বসে ধূমপান করেছিলেন কিন্তু তাঁর খুব একটা ভালো না লাগেনি।ফলে আর কোনও দিনও ধূমপান করেন নি। অন্যদিকে গান্ধীজীর এক মুসলিম বন্ধু শেখ মেহতাবের অনুরোধে গান্ধী গোমাংস খেয়েছিলেন। এই খাওয়া প্রসঙ্গে গান্ধীকে তাঁর বন্ধু মেহতাব বুঝিয়েছিল যে, ইংরেজরা মাংস খায় বলেই এত বুদ্ধি তাদের। আর তাই তারা এত দেশ শাসন করতে পারে। আর ভারতীয়রা নিরামিষাশী বলেই এখনো তাদের প্রজা হয়ে আছে। গান্ধী সেই বন্ধুর কথায় প্রভাবিত হয়ে গরুর মাংস খেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- বিলেতের মাটিতে আড়াই কোটিরও বেশি দাম উঠল গান্ধীর চশমার, পিছনে রয়েছে আকর্ষণীয় কাহিনি
(১০) গান্ধী বিশেষজ্ঞদের কথায়, ৩৭ বছর বয়সে গান্ধী নারী সংসর্গ পরিত্যাগ করেন। বৈবাহিক জীবনে কস্তুরবা এবং গান্ধী চারটি সন্তানের জন্ম দেন।

(১১) গান্ধীজীর একাধিক গুণমুগ্ধ নারীর মধ্যে অন্যতম ছিলেন পাঞ্জাবের কাপুরথালার রাজা স্যার হরণাম সিং-য়ের কন্যা রাজকুমারী অমৃত কৌর। তাঁকে গান্ধীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সত্যাগ্রহীদের মধ্যে একজন বলে মনে করা হয়। লবণ সত্যাগ্রহ বা ৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় জেলও যান রাজকুমারী অমৃত কৌর। স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বাস্থ্য মন্ত্রী হয়েছিলেন অমৃত কৌর।


(১২) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইঝি সরলাদেবীকে নিজের 'আধ্যাত্মিক পত্নী' বলে মনে করতেন গান্ধীজী।খাদির প্রচারের সময় সরলাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়ান গান্ধীজী। দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠলে গান্ধীজী নিজেকে সরলাদেবীর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেন। পরে সরলাদেবী হিমালয় চলে যান। সেখানে একান্তে বসবাসের সময়ে সরলা দেবীর মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন- স্বাধীনতা দিবসের আগে ব্রিটেনে মিলল গান্ধীজির চশমা, নিলামে দাম ১৪ লক্ষ ছাড়াল
(১৩) ১৯৪৭ সালের জানুয়ারি মাসের এক বাদলা দিনে পানিয়ালা গ্রামের প্রার্থনাসভায় ‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম’ গানটি গাইছিলেন মনু গান্ধী। গাইতে গাইতে শৈশবে সুদামা মন্দিরের কথকের কাছে শোনা একটা ধুন হঠাৎ করে তার মনে পড়ে। ধুনটি স্তবগীতির মধ্যে নিজের খেয়ালেই জুড়ে দেয় সে— ‘ঈশ্বর আল্লা তেরে নাম/ সবকো সন্মতি দে ভগবান।’ গান্ধীজীর সেটি শুনে বেশ ভালো লাগে আর তিনি তখন উৎসাহিত হয়ে প্রার্থনাসভায় গাওয়া রামনামগীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এটিকে জুড়ে দেন।

(১৪) গান্ধীজীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়। স্বাধীনতার পর গান্ধীজীর অনুরোধে ১৯৪৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেন বিধান রায়।

(১৫) স্বাধীনতা পাওয়ার পরে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর লালকেল্লায় প্রথম বক্তৃতার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না গান্ধী। ধর্মীয় সংহতি বজায় রাখার জন্য তিনি তখন কলকাতায় ছিলেন ।

(১৬) গান্ধীজী যে দুই নারীর কাঁধে ভর দিয়ে চলতেন, তাঁরা হলেন আভা গান্ধী আর মনু গান্ধী। জন্মসূত্রে বাঙালি ছিলেন আভা গান্ধী। তাঁর বিয়ে হয়েছিল  গান্ধীজীর সম্পর্কে নাতি কানু গান্ধীর সঙ্গে।গান্ধীজীর সব প্রার্থনা সভায় ভজন গাইতেন আভা আর ছবি তুলতেন তাঁর স্বামী কানু। আর মনু গান্ধী ছিলেন গান্ধীজীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। গান্ধীজী মনুকে নিজের 'নাতনি' বলেই পরিচয় দিতেন। যখন নাথুরাম গডসে গান্ধীজীকে গুলি করে হত্যা করে, তখন গান্ধীজীর একপাশে ছিলেন আভা ও অন্যপাশে ছিলেন মনু গান্ধী।

(১৭) গান্ধী বিশেষজ্ঞদের মতে নোবেল কমিটি ৫ বার নোবেল মনোনয়ন দিয়েছিল গান্ধীজীকে। ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯ এবং ১৯৪৭ সালে গান্ধীজীকে নোবেলের জন্য মনোনয়ন দিলেও শেষ অবধি তা বাতিল হয়। ১৯৪৮ সালে শান্তিতে নোবেল গান্ধীজীর পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আততায়ীর গুলিতে গান্ধীজীর মৃত্যু হয়।

(১৮) নাথুরাম গডসের আগে আরও পাঁচবার গান্ধীজীর প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই ক’বার অবশ্য বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।

(১৯)গান্ধীর শেষকৃত্যে ১০ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল। শোকমিছিল প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছিল। 

(২০) সারা বিশ্বজুড়ে মহাত্মা গান্ধীর অনেক ভক্ত রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অ্যাপলের স্রষ্টা স্টিভ জবস অন্যতম। গান্ধীজীর দেখাদেখি জবসও গোলাকার ফ্রেমের চশমা পরতেন। 

Courtesy :
1| Mahatma Gandhi - Last Phase: Vol. 10- Pyarelal
2| Mahatma Gandhi - Final Fight for Freedom, Vol. 8- Sushila Nayar
3| Gandhi - A Biography for Children & Beginners- Ravindra Verma
4| Gandhi, A Life- Krishna Kripalani
5| Gandhi, The Man- Eknath Easwaran
6| Gandhi on Women- Pushpa Joshi
7|  My Life is My Message vol: 1 to 4 -Narayanbhai Desai
8| Gandhi For the New Generation- Gunawant Shah
9| The Story of My Experiment with Truth- M.K.Gandhi
10| Bapu, My mother- 
Manubehn Gandhi
 

Read more Articles on
Share this article
click me!