৪০০ বছর ধরে ‘অর্গানিক’ পদ্ধতির শিল্প, অন্ধ্রপ্রদেশের কোন্ডাপল্লী এখনও এক পুতুলের সাম্রাজ্য

কোন্ডাপল্লী পুতুল, এই নামটি এসেছে অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা জেলার বিজয়ওয়াড়া শহরের কোন্ডাপল্লী এলাকার নাম থেকে। ৪০০ বছর পর হঠাৎ সংকটের মুখে এই শিল্প, কেন? 

‘আমার এই ছোট্ট ঝুড়ি, এতে রাম রাবণ আছে’, শ্যামল মিত্রের গানের কলির সঙ্গে অবশ্যই মিশে যাবেন অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা জেলার বিজয়ওয়াড়া শহরের পাহাড় ঘেরা কোন্ডাপল্লী অঞ্চলের শিল্পীরা। এখানকার জীবন এক আনন্দময় জাঁকজমকে পরিপূর্ণ, সেই রঙিন জাঁকজমকের উৎস হল এখানকার উজ্জ্বল আভাযুক্ত কাঠের পুতুল। 

কোন্ডাপল্লীর জীবন এবং আড়ম্বরে ভরা এই খেলনা পুতুলগুলি আমাদের দেশের গৌরব এবং অবশ্যই উজ্জ্বল শিল্পকর্মগুলির মধ্যে একটি। এই পুতুলগুলি কিন্তু প্রাচীন কাল থেকে শুধুমাত্র শিশুদের খেলার জিনিস হিসেবেই ব্যবহার বা কেনাবেচা হয়ে আসছে না। ৪০০ বছরের এই ঐতিহাসিক সৃষ্টিগুলি রীতিমতো উপহার দেওয়ানেওয়া এবং মালিকানার অধিকার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতপক্ষে, এগুলো বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদেরই মালিকানাধীন থাকত, কারণ তাঁরা এটিকে একদিকে নিজেদের স্টাইল স্টেটমেন্ট এবং অন্যদিকে নিজেদের বড় জীবনের একটা ছোট মডেল বা রূপক হিসাবে রাখতেন।

Latest Videos

এই পুতুলগুলিকে বলা হয়, কোন্ডাপল্লী পুতুল। এই নামটি এসেছে অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা জেলার বিজয়ওয়াড়া শহরের কোন্ডাপল্লী এলাকার নাম থেকে। কোন্ডাপল্লী একটি পাহাড়ি টাউন, এই টাউনের ভিতর রয়েছে বোম্মালা কলোনি। তেলেগুতে বোম্মালা শব্দের অর্থ হল খেলনা। এই কলোনিতেই পুতুলের কারুকাজের আসল কাজটি করা হয়। ৪০০ বছরের পুরনো এই শিল্প ইতিহাসের সঙ্গে চলতে চলতে অনেক লড়াইয়েরও মুখোমুখি হয়েছে। সবচেয়ে বড় লড়াই ছিল অন্যান্য নতুন খেলনার আবিষ্কার, মানুষের আকর্ষণের প্রবর্তন এবং ভবিষ্যতে পথ চলার কোনও সম্বল না থাকা। তবে, ২০০৭ সাল থেকে পুতুল শিল্প ফের জীবনের পথে ঘুরে দাঁড়ায়। কারণ, প্রথম হস্তনির্মিত খেলনা হিসেবে কোন্ডাপল্লী পুতুল GI ট্যাগ পায়, এই গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক পরিচিতি চমকদার শিল্পটিকে নতুন করে মানুষের আকর্ষণ ফিরিয়ে দিয়েছিল। 

পুতুলগুলি বাইরে থেকে  দেখতে আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ। আশেপাশের পাহাড়গুলিতে পাওয়া স্থানীয়ভাবে সৃষ্ট নরম কাঠ (টেলা পোনিকি) দিয়ে এগুলি তৈরি হয়, যেগুলি পরে অধ্যবসায়ী কারিগরদের শ্রমসাধ্য প্রচেষ্টায় সুন্দর মনোহরা রূপ নেয়, এই কারিগররাই শিল্পটিকে সংরক্ষণের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এই শিল্পীরা আর্যক্ষত্রিয় নামে একটি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত, যাঁরা মূলত পেশায় খেলনা নির্মাতা এবং কাঠ-ভাস্কর। কথিত রয়েছে যে, এই সম্প্রদায়টি মহাজ্ঞানী মুক্ত ঋষির বংশধর, যে ঋষি শিল্প এবং খেলনা তৈরিতে অন্তর্নিহিত দক্ষতা অর্জনের জন্য স্বয়ং ভগবান শিব দ্বারা আশীর্বাদধন্য হয়েছিলেন। অধিকন্তু, অনেক শ্রমিক জয়পুর এবং কোরাপুট (যথাক্রমে রাজস্থান এবং ওড়িশা) থেকেও এসেছিলেন, যাঁরা নিজেদের মুক্ত ঋষির বংশধর বলে দাবি করেছেন এবং তৎকালীন কোন্ডাপল্লী দুর্গের রাজার অধীনে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন।

মেশিনে তৈরি লেগোস এবং পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকারক প্লাস্টিকের খেলনার যুগে গ্রামীণ জীবন এবং মহাকাব্যের গল্প বলা এই খেলনাগুলি সত্যিই অনন্য। এগুলি তৈরির প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণেও কোন্ডাপল্লী পুতুল মানুষের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। প্রথমে খেলনার বিভিন্ন অংশগুলিকে নির্ভুলতার সাথে যত্ন সহকারে ফুটিয়ে তোলা হয় এবং তারপরে সেগুলিকে সুন্দরভাবে একত্রিত করা হয়। এর ওপর উজ্জ্বল রং (উদ্ভিজ্জ রঞ্জক, জল এবং তেল রং দিয়ে তৈরি) ব্যবহার করা হয়। পেইন্টিংয়ের জন্য যে ব্রাশ ব্যবহার করা হয়, সেগুলি ছাগলের চুল দিয়ে তৈরি নরম এবং পাতলা পেইন্ট ব্রাশ। আজকের যুগে যা আমরা ‘অর্গানিক’ বলি, তা ৪০০ বছর ধরে একটা গোটা কলোনি নিজেদের শখ এবং আয়ের পথ হিসেবে শিল্পের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রেখেছে। অবাক হচ্ছেন, তাই না?

দুর্ভাগ্যবশত, আজকের প্রজন্ম খেলনা তৈরির এই শিল্পের প্রতি খুব কম আগ্রহ দেখাচ্ছে, তবে, আশা করা যায়, অনুরাগীরা যদি চাহিদা ফিরিয়ে আনেন, তাহলে এই শিল্পের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হতে শুরু করবে। অন্যান্য পুরানো শিল্পের মতো, কোন্ডাপল্লী খেলনাগুলিও অভিনব ডিজাইন তৈরি করে নতুন স্বাদের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, তবে ক্লাসিক হল দশাবতারম এবং নাচের পুতুল, এগুলো কিন্তু যে কোনও বয়সী মানুষের হৃদয় চুরি করে নেবে।



বাজারের প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধি এবং বিক্রয় বৃদ্ধির প্রচেষ্টায়, নৈপুণ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রাকৃতিক রংগুলির পরিবর্তে অনেকক্ষেত্রে আকর্ষণীয়তা বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম রং ব্যবহার করতে হচ্ছে। কারণ কৃত্রিম রং বেশি উজ্জ্বল এবং সহজেই বিক্রয়যোগ্য। যুগের সাথে অভিযোজন করে নেওয়া কাঠের পুতুলের এই বিশেষ শিল্প অবশ্যই ইতিহাসে সমৃদ্ধ, চরিত্রে পূর্ণ এবং প্রকৃতিতে কালজয়ী।


আরও পড়ুন-
নখের সৌন্দর্য বাড়াতে কলকাতার বিখ্যাত ১০টি নেইল আর্ট স্পা ঘুরে দেখেছেন কি?
বিখ্যাত শিল্পী সুদর্শন পট্টনায়েক বালি দিয়ে সৃষ্টি করলেন যোগ দিবসের শিল্পকলা

আজব পেশা! সারাদিন শুধু চিৎকার করেই লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেন এই মহিলা
 

Share this article
click me!

Latest Videos

'সরকারি কর্মচারীদের বেতন বন্ধের দিকে এগোচ্ছে মমতা' বিস্ফোরক মন্তব্য শুভেন্দুর | Suvendu on Mamata
Cinderella-র অবতারে নজর কাড়লেন Uorfi Javed! দেখুন #shorts #shortsvideo #shortsfeed #shortsviral
'BSF রেডি! মোল্লা ইউনূস BGB-কে উস্কানি দিচ্ছে' চরম বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari | Bangladesh
PM Modi Live : প্রবাসী ভারতীয় দিবস সম্মেলন উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী মোদী | Asianet News Bangla
ছিঃ বাঙালি হিসাবে লজ্জা ইউনুস! Bangladesh-এর প্রধানকে ধুয়ে যা বললেন Adhir Ranjan Chowdhury