রাজ্যে বন্যা প্রতিরোধে তৎপর পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ক্ষতি থেকে বাঁচতে কাজ করবে L&T-র সঙ্গে

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ ও জলপথ বিভাগের বহুদিনের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বন্যা প্রতিরোধে নির্ধারিত এলাকায় শক্তপোক্ত পাঁচিল তৈরি, বেশ কিছু জায়গায় নদীর বাঁধ নির্মাণ, মুন্ডেশ্বরী নদী এবং সংলগ্ন ৪১টি অন্যান্য খাল নিষ্কাশন করার মতো ব্যাপারগুলি। যদিও প্রকল্পটির বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক (এআইআইবি) আর্থিকভাবে সাহায্য করবে। 

L&T (লারসেন অ্যান্ড টুব্রো ) পশ্চিমবঙ্গের নিম্ন দামোদর উপ অববাহিকা অঞ্চলে বিশেষত হুগলি এবং হাওড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কাজ করবে। ওই সব এলাকায় স্থানীয় মানুষের বাসস্থান এবং চাষের জমিতে বন্যার জল ঢুকে পড়া আটকাতে কাজ করবে সংস্থাটি। বন্যা প্রতিরোধে এই প্রকল্প কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। নিম্ন দামোদর উপ অববাহিকা অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় ওই সমস্ত এলাকায় বন্যার জল প্রবেশের সমস্যা দীর্ঘদিনের।
এমন একটি প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ছিল দীর্ঘদিনের। কারণ নিম্ন দামোদরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ফি বছর বন্যার সমস্যা অনেকদিন ধরেই রয়েছে। বিশেষত দামোদর নদ ও এটির  দুটি শাখা - মুন্ডেশ্বরী নদী এবং নিম্ন দামোদর উপ অববাহিকা (আমতা) চ্যানেল ১.৮৮৭ লক্ষ হেক্টর (১৮৮৭ বর্গ কিমি) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত অঞ্চল বন্যাপ্রবণ বলে চিহ্নিত। সেইসব এলাকার ৩৩৫ বর্গ কিমি (০.৩৩৫ লক্ষ হেক্টর) ফসলি এলাকা প্রতি বছর নিয়ম করে বন্যায় প্লাবিত হয়। প্রতি বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হন প্রায় ৪.৬১ লক্ষ মানুষ। ওই সব বন্যাপ্রবণ এলাকায় দুটি পৌরসভা এবং ২০টি প্রশাসনিক উন্নয়নমূলক ব্লক রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ ও জলপথ বিভাগের বহুদিনের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বন্যা প্রতিরোধে নির্ধারিত এলাকায় শক্তপোক্ত পাঁচিল তৈরি, বেশ কিছু জায়গায় নদীর বাঁধ নির্মাণ, মুন্ডেশ্বরী নদী এবং সংলগ্ন ৪১টি অন্যান্য খাল নিষ্কাশন করার মতো ব্যাপারগুলি। যদিও প্রকল্পটির বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক (এআইআইবি) আর্থিকভাবে সাহায্য করবে। তবে এই প্রকল্পের জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ বহন করবে। প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুলাই মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লারসেন অ্যান্ড টুব্রো এর উদ্দেশ্য হল, পশ্চিমবঙ্গের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সহযোগিতা করা। নিম্ন দামোদরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামোর উন্নয়ন এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। যাতে প্রতি বছর প্লাবনের সময় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যতটা সম্ভব কম করা যায়! 
প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের তিনটি মূল দিক হল, L&Tজিওস্ট্রাকচার চারটি চুক্তি প্যাকেজের অধীনে বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় কাজ করবে। মোট ১২২.৫৫ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে এই কাজ হবে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য, ওই সমস্ত বন্যাপ্রবণ এলাকায় ফি বছর প্লাবনের সমস্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। বেড়িবাঁধ শক্তিশালী করার মাধ্যমে মাটির ক্ষয় রোধ হবে। এছাড়া ভূমি ধসের প্রতিরোধ হবে। বন্যা রোধে শক্তিশালী দেওয়াল তৈরি করা হবে। যাতে বন্যার সময় নদীর অতিরিক্ত জল বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে।
এছাড়াও, বন্যার প্রাচীরগুলি প্রবাহমান নদীর জল নির্ধারিত দিকে প্রবাহিত করবে। মানুষের বসতি এবং চাষের জমিতে এই জলের প্রবেশ রুখে দেওয়া যাবে। অন্যদিকে, বোল্ডার পিচিং-এর মাধ্যমে তৈরি পায়ের পাতা সমান পাঁচিলগুলি নির্দিষ্ট জায়গায় নদীর গতিপথের কন্ট্রোল পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াবে। এই ধরণের কন্ট্রোল পয়েন্ট নদীর বেশ কিছু এলাকার পাড়গুলিকে অনমনীয় করে তুলতে সাহায্য করবে। এই কাঠামো সমতলভূমি, চাষের জমি এবং মানুষের আবাসস্থল প্লাবিত হওয়া প্রতিরোধ করবে।
সামগ্রিক অন-গ্রাউন্ড কাজকে চারটি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়েছে, যা গ্রেডেড পদ্ধতিতে সম্পাদিত হবে। প্রথমটিতে পূর্ব বর্ধমান এবং হুগলি জেলায় দামোদরের বাঁ-দিকের বাঁধে বন্যা রোধে দেওয়াল এবং নদীর পাড়ের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া বন্যা সুরক্ষা ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত করা হবে ওই সব এলাকায়। দ্বিতীয় প্যাকেজের লক্ষ্য হল, আপার রামপুর খালের বাঁ-দিকের বাঁধে বন্যা সুরক্ষার জন্য একইরকম পদক্ষেপ। এর মধ্যে হাওড়া এবং হুগলি জেলায় নদীর ধারে বাঁধ ও পাড় মজবুত করা হবে। হাওড়া জেলার বাঁধ বরাবর বন্যা সুরক্ষা ব্যবস্থা সহ হুরহুরা খালের বাঁ-দিকের বাঁধ শক্তপোক্ত করা তৃতীয় প্যাকেজের লক্ষ্য থাকবে। চতুর্থ প্যাকেজে হাওড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় দামোদরের পাড় বরাবর একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যথাযথ বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য লারসেন অ্যান্ড টুব্রো-র (Larsen & Toubro) কাজে যা যা থাকবে:
ক) বন্যার জল নিয়ন্ত্রিতভাবে নির্ধারিত দিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দামোদরের ডান দিকের কম উচ্চতাসম্পন্ন বাঁধটিকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলা হবে। এই বাঁধটিকে আরও বিস্তৃত করে তোলা হবে।
খ) দামোদরের বাঁ-দিকে সংরক্ষিত বাঁধের উন্নয়ন করা হবে। বেশ কয়েকটি চিহ্নিত স্থানে শক্তিশালী দেওয়াল নির্মাণ করে বন্যা প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত ফ্রিবোর্ড রাখা হবে।
গ) দামোদরের বাঁ-দিকের বাঁধে বন্যার প্রাচীরের জন্য পর্যাপ্ত ফ্রিবোর্ড রেখে আপার রামপুর এবং হুরহুরা চ্যানেলগুলির উন্নয়ন করা হবে।
ঘ) গ্রামাঞ্চলে থাকা মাটির বাঁধগুলিকে আরও বেশি করে শক্তপোক্ত করা হবে। দামোদরের বাঁদিকে, হুরহুরার বাঁ-দিকে এবং লোয়ার রামপুর বাঁ-দিকের বাঁধের বিভিন্ন অংশের উন্নয়ন ও শক্তিশালী করা হবে।
ঙ) দামোদর/মুন্ডেশ্বরী, হুরহুরা খাল, আপার রামপুর এবং লোয়ার রামপুরের খালগুলিতে নদীর প্রবাহমানতা এবং সংলগ্ন চ্যানেলগুলির বাঁধের অংশ পুনর্নির্মাণ ও পুনর্গঠন সহ নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। 

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari: 'কয়লার ৭৫ ভাগ তৃণমূলের পকেটে যায়' বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর
‘সরকারকে প্রশ্ন করলেই সরকার উলঙ্গ হয়ে যাবে!’ বক্তব্য রাখতে না দেওয়ায় বিস্ফোরক Sajal Ghosh
Mamata Banerjee Live: নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা, দেখুন সরাসরি
Suvendu Adhikari Live: বিধানসভার বাইরে মুখোমুখি শুভেন্দু অধিকারী, দেখুন সরাসরি
‘অনেকদিন পর কেষ্টদা ফিরেছে তাই একটু বিশৃঙ্খলা হচ্ছে’ অদ্ভুত ব্যাখ্যা Satabdi-র! | Satabdi Roy News