চলতি মাসের শুরুতেই বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে (Bengaluru Airport) মাঝ আকাশে বড় সংঘর্ষ এড়িয়েছে ইন্ডিগো (IndiGo) সংস্থার দুটি বিমান। জানিয়েছে ডিজিসিএ (DGCA)।
হতে পারত ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রের সবথেকে বড় দুর্ঘটনা। চলতি মাসের শুরুতেই বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর (Bengaluru Airport) থেকে ছাড়ার কিছু পরই মাঝ-আকাশে একেবারে মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ইন্ডিগো (IndiGo) সংস্থার দুটি বিমানের। বুধবার এমনটাই জানিয়েছে অসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বা ডিজিসিএ (DGCA)।
সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনাটি কোনও লগবুকে নথিভুক্ত করা হয়নি এবং এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা এএআই-ও (AAI) এই ঘটনার কোনও রিপোর্ট করেনি। তবে, ডিজিসিএ প্রধান অরুণ কুমার (Arun Kumar), সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, ঘটনাটি ডিজিসিএ-র নজরে আসার পর, এখন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে সংস্থা। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইন্ডিগো সংস্থা বা এএআই-এর পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন - Omicron Threat: ওমিক্রনের জন্য আরও বাড়ল নিষেধাজ্ঞা, আপাতত বন্ধ আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল
ঘটনাটি কী ঘটেছিল? ডিজিসিএ-র আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দিনটি ছিল গত ৭ জানুয়ারি। সংঘর্ষ হতে পারত যে দুটি ইন্ডিগোর বিমানে, তাদের একটি বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতা (Bengaluru to Kolkata) যাচ্ছিল, নম্বর ৬ই৪৫৫ (6E455) এবং অপরটি বেঙ্গালুরু থেকে ভুবনেশ্বর (Bengaluru to Bhubneshwar) যাচ্ছিল, নম্বর ৬ই২৪৬ (6E246)। দুটিই ছিল এয়ারবাস এ৩২০ (Airbus A320), ওইদিন ৫ মিনিট আগে-পড়ে বিমানদুটি বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দর থেকে উড়েছিল। আর মিনিট কয়েক পরই দুটি বিমানই মাঝ আকাশে বিপজ্জনকভাবে একে অপরের কাছাকাছি এসে পড়েছিল, যাকে উড়ানের পরিভাষায় বলা হয় 'ব্রিচ অব সেপারেশন' (Breach of Separation)।
কলকাতাগামী উড়ানটিতে ছিলেন ১৭৬ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু। আর ভুবনেশ্বরগামী বিমানে ছিলেন ২৩৮ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু। সব মিলিয়ে এই ৪২৬ জনের জীবন রক্ষা করেন, কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ রাডার কন্ট্রোলার, ৪২ বছরের লোকেন্দ্র সিং। বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশসীমা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে একটি সতর্কতা পদ্ধতি চালানোর দায়িত্বে আছেন তিনি। তিনিই প্রথম লক্ষ্য করেন, বিমানদুটি একই উচ্চতায় পুরোপুরি একে অপরের দিকে এগোচ্ছে। অ্যাপ্রোচ রাডার কন্ট্রোলার লোকেন্দ্র সিং তখন তড়িঘড়ি দুটি বিমানেরই মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন বিমানদুটির ক্রুদের। আর তাতেই মাঝ-আকাশে সংঘর্ষ এড়ানো গিয়েছে। ঘটনাটি ঘটার সময় দুটি জেটলাইনারই সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩,০০০ ফুট উচ্চতায় ছিল বলে জানা গিয়েছে।
কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হল? মাঝ আকাশে কীভাবে মুখোমুখি সংঘর্ষের জায়গায় চলে এল দুটি বিমান? জানা গিয়েছে ভুলটি করেছেন বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের শিফ্ট ইনচার্জ। কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দরে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি রানওয়ে রয়েছে। সাধারণত উত্তর দিকের রানওয়ে প্রস্থানের জন্য এবং দক্ষিণ দিকের রানওয়েটি আগমনের জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, ৭ জানুয়ারী সকালে, যিনি শিফ্ট ইনচার্জ ছিলেন, তিনি বিমানবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শুধুমাত্র উত্তর দিকের রানওয়েটিই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু, দক্ষিণের রানওয়ে যে বন্ধ রাখা হয়েছে, তা দক্ষিণ টাওয়ার কন্ট্রোলারকে জানানো হয়নি। এর মধ্যে, দক্ষিণ রানওয়ের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার কলকাতাগামী বিমানটিতে প্রস্থানের অনুমতি দেয়। প্রায়, একই সময়ে উত্তর টাওয়ার কন্ট্রোলার ভুবনেশ্বরগামী বিমানটিকেও প্রস্থানের অনুমতি দিয়েছিল। এতেই সমস্যা তৈরি হয়েছিল।