'বাবার শেষকৃত্য করার জন্য হাতে ১০ টাকাও ছিল না', রাস্তায় চুড়ি বিক্রি করে ছোট্ট ‘রামু’ হয়ে উঠল IAS অফিসার

IAS অফিসার রমেশ ঘোলাপের জীবনী যেন এক চলচ্চিত্রের গল্প। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠতে উঠতেই তাঁর শরীরে আঘাত হেনেছিল দুরারোগ্য পোলিও। বাঁকা পা-ও তাঁকে সাফল্যের পথে থামাতে পারেনি। 

Sahely Sen | Published : Oct 2, 2023 2:51 PM IST

মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার একটি ছোট গ্রাম মহাগাঁও, সেখানকারই বাসিন্দা রমেশ ঘোলাপ। গ্রামের লোকজন তাঁকে রামু নামেই চিনতেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী, শুরু থেকেই জীবন প্রতিকূলতায় ভরা। বাঁ পায়ে আঘাত হেনেছিল পোলিও। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থেকে শুরু করে আর্থিক লড়াই পর্যন্ত, ভারতের আইএএস অফিসার রমেশ ঘোলাপ সারা ভারতের জন্য এক উজ্জ্বল উদাহরণ। কোনওরকম কোচিং ছাড়াই সর্বভারতীয় UPSC পরীক্ষায় তিনি ২৮৭ তম স্থান অর্জন করেছিলেন।

রমেশ ঘোলাপের বাবা ছিলেন গোরখ ঘোলাপ। তিনি একটি সাইকেল মেরামতির দোকান চালাতেন। এই দোকান থেকেই পরিবারের চার সদস্যের রোজগার চলত। কিন্তু, সেই ব্যবসা বেশিদিন চলল না। একটানা মদ্যপানের কারণে গোরখ ঘোলাপের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকল। রামুর মা সুবিমল ঘোলাপ পরিবারের আয় বাড়ানোর জন্য আশেপাশের গ্রামগুলোতে ঘুরে ঘুরে চুড়ি বিক্রি করা শুরু করলেন। ততদিনে রমেশের বাঁ পা পোলিওয়ে পুরোপুরি আক্রান্ত। তবুও তিনি নিজের ভাইয়ের সঙ্গে মায়ের চুড়ি বিক্রি করার কাজে সাহায্য করতেন। তিনজন একসঙ্গেই চুড়ি বিক্রি করতে যেতেন।

রমেশের সততা এবং নিষ্ঠা শিক্ষকদের নজর কেড়ে নিয়েছিল। ২০০৫ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াকালীন যখন কলেজের মডেল পরীক্ষা চলছিল, তখনই তিনি নিজের বাবার মৃত্যুর খবর পান। তখনকার দিনে বার্শি থেকে মহাগাঁও পর্যন্ত আসার বাসভাড়া ছিল ৭ টাকা। যেহেতু তিনি প্রতিবন্ধী ছিলেন, তাই তাঁর ভাড়া লেগেছিল ২ টাকা। কিশোর রামুর কাছে সেদিন ১০ টাকাও ছিল না। প্রতিবেশীদের সহায়তায় রমেশ বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বাবার মৃত্যুর মাত্র চার দিন পর রমেশ কলেজে রসায়ন বিভাগের মডেল পরীক্ষা দিয়েছিলেন। মায়ের জোরাজুরিতে তিনি পরীক্ষা দিতে যান। সেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পরবর্তীতে অন্যান্য মডেল পরীক্ষা তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন। এমনকি নিজের জার্নালটাও জমা দেননি। দ্বাদশ শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা তখনও এক মাস বাকি ছিল, যখন শিক্ষকের কাছ থেকে একটা চিঠি এসেছিল। শিক্ষকরা জানিয়েছিলেন যে, রমেশ রসায়নে ৪০ নম্বরের মধ্যে ৩৫ নম্বর পেয়েছেন। শিক্ষকরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান। শেষমেশ শিক্ষকদের সাহায্য এবং উৎসাহে রমেশ তাঁর ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৮৮.৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন।

২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রমেশ ঘোলাপ গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে পাওয়া মায়ের ঋণের টাকা ব্যবহার করে নিজের চাকরি থেকে ছয় মাসের ছুটি নিয়ে UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পুনে চলে যান। ২০১০ সালে তিনি UPSC তে প্রথমবার চেষ্টা করেছিলেন। সেই পরীক্ষায় তিনি ব্যর্থ হন। এরপর রমেশ নিজেই ইউপিএসসি-র পড়াশুনা শুরু করেন। নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের পর তিনি ২০১২ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রমেশ ঘোলাপ প্রতিবন্ধী কোটায় ২৮৭তম স্থান অধিকার করেন। নিজের প্রতিকূলতার কথা স্মরণে রেখে দীনদরিদ্র মানুষকে সর্বদা সাহায্য করেন IAS রমেশ। তাঁর সাফল্যের আগে পথ চলার দুর্গম ওঠানামাও বাস্তব জীবনের লড়াইয়ের এক জ্বলন্ত নিদর্শন।

Share this article
click me!