একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে প্রামাণ লোপাটের জন্য একটি মাঠে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। পাঁচটি মৃতদেহ থেকে যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় আর সেগুলি যাতে তাড়াতাড়ি পচে যায় সেই জন্য প্রতিটা মৃতদেহে আলাদা আলাদা করে ইউরিয়া মাখিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। মাটিতে পুঁতে দেওয়ার আগে দেহগুলিকে নগ্ন করা হয়। আর তাদের কাপড়চোপড় খুলে প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। কিন্তু পুলিসের চোখে ধুলো দিতে ব্যর্থ হয়। নিখোঁজ হওয়ার মাসখানেরও বেশি সময় পরে স্থানীয় মাঠে গর্ত খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের দেহ। আর তাতেই সামনে আসে মধ্য প্রদেশের দেওয়াসের ভয়ঙ্কর এক হত্যাকাণ্ড।
স্ত্রীকে খুন করে বাড়িতে বলল ডেল্টা প্লাসে মৃত্যু, কোলে সন্তান নিয়ে দেহ লোপাটের চেষ্টা স্বামীর
গত ১৩ মে থেকে নিখোঁজ ছিল দেওয়াসের বাসিন্দা মমতা বাই কাস্তে, তাঁর মেয়ে রুপালি, দিব্যা , তাঁদের আত্মীয় পূজা ওসওয়াল, পবন অসওয়াল। একটি বাড়িতে তাঁরা ভাড়া থাকতেন। নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও পুলিশ তদন্ত শুরু করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, তাঁরা জানতে পারেন স্থানীয় একটি কৃষিক্ষেতের মাটিতে কিছু পোঁতা হয়েছে। তারপরই তাঁরা সেখানে যান। খুঁড়তে থাকেন মাটি। মাটি খোঁড়ার জন্য তাঁরা আর্থমুভার ব্যবহার করা হয়েছিল। ৮-১০ ফুট মাটি খোঁড়ার পর স্থানীয় পুলিশ পাঁচটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। সেখানেই পাঁচজনের দেব কবর দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনার তদন্তে নেমেই পুলিশ প্রথমে দুজনকে আটক করেছিল। তাঁদের টানা জেরার আর অসঙ্গতি থাকায় সন্দেহ আরও জোরাল হয়।
সীমান্ত সুরক্ষায় জোর, রাজনাথের লাদাখ সফরের পরেই বিপিন রাওয়াত গেলেন হিমাচলের সেনা ঘাঁটিতে
পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করাতেই সামনে আসে বাড়িওয়ালার নাম। সুরেন্দ্রে রাজপুতের বাড়িতেই দুই মেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকতেন মমতা। বড় মেয়ে রুপালির সঙ্গে সুরেন্দ্র প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সুরেন্দ্র অন্যত্র বিয়ের প্রস্তুতি নেয়। তাতেই রুপালি তাঁর আর সুরেন্দ্র ছবি ফেসবুকে আপলোড করে। তারপরে প্রতিশোধ নিতেই সুরেন্দ্র তার বেশ কয়েকজন সাগরেদকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। আর সেই মত একে একে পাঁচ জনকে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে দেয়। গোটা ঘটনার ছক কষা থেকে প্রেমিকা আর তার পরিবারকে হত্যা হত্যার নেতৃত্ব দিয়েছিল।
কেন এই অভিনব প্রতিবাদ, টানা ৭দিন ধরে দিল্লিতে কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে চলছে বিক্ষোভ
কিন্তু অপরাধ বিজ্ঞানের কথায় অপরাধী সর্বদাই প্রমাণ ছেড়ে যায়। এখানেও ঠিক তেমনই ঘটনা ঘটেছিল। সুরেন্দ্র রুপালির মোবাইল ফোন নিজের কাছেই রেখেছিল। সেখান থেকেই বড় মেয়ের আইডি ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক বার্তা পোস্ট করে গেছে। আর সেখানে রুপালির নাম করে সুরেন্দ্র লিখিছিল সে বিয়ে করে অন্যত্র রয়েছে। তাঁর সঙ্গেই তাঁর মা আর বোন রয়েছে। সকলেই ভালো আছে। যা রুপালির পরিবার আর পুলিশকে বিভ্রান্ত করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল।
তারপরেই পুলিশের সন্দেহ হত। তখনই রুপালির ফোনের কলসিস্ট ট্র্যাক করা হয়। সেখান থেকেই পুলিশের হাতে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা যায় রুপালির সঙ্গে বাড়ির মালিক সুরেন্দ্রের রীতিমত যোগাযোগ ছিল। একাধিকবার কথাও হয়েছে। সুরেন্দ্র ফোন নম্বরও হাতে আসে পুলিশের। সেখানে দেখা যায় একটি নির্দিষ্ট দিনের পর সুরেন্দ্র আর তাঁর চার-পাঁচজন সহযোগী একাধিকবার কথা বলেছে। তাতেই পুলিশের অনুমান দৃঢ়় হয়। তারপরেই গ্রেফতার করা হয় সুরেন্দ্রকে। টানা জেরায় ভেঙে পড়ে সুরেন্দ্র। অপরাধারে কথা স্বীকার করে। মাটি খুঁড়তেও পুলিশকে সাহায্য করে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করেছে মধ্য প্রদেশের পুলিশ।