ত্রিপুরাতে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সমুখ সরমে লড়াই করে তৃণমূল। পুরসভা নির্বাচনে বামেদের বড়রকমের ধাক্কায় দিয়েছে তৃণমূল। পাশাপাশি বিজেপিরও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের উত্থান। অন্যদিকে মেঘালয়তে রাতারাতি তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান বিরোধীদলের তকমা কেড়ে নিয়েছে কংগ্রেসের কাছ থেকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) ২০২১ সালের বাংলা বিধানসভা জয় ছিল ল্যান্ডস্লাইড ভিক্ট্রি। তাঁর সামনে রয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ২০০০৯ সালে বামেদের বাংলা জয়ের রেকর্ড। কারণ সেই সময় বামেরা ২৯৪ আনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ২৩৪টি আসন জয় করেছিল। যাইহোক তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। ২০১১ সালের পালাবদল। ২০১৬ সালে বাম-কংগ্রেস জোটকে ধরাসায়ী করে দ্বিতীয়বার বাংলা দখল করেছিলেন মমতা। তবে এবার বাম-কংগ্রেস নয়, বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল বিজেপি। মোদী অমিত শার নেতৃত্বে গেরুয়া শিবিরকেও ধরায়াসী করে তৃতীয়বারের জন্য বাংলা জয় করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে এই জয় খুব একটা সহজ ছিল না। কারণ তাঁর আগেই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসকে রীতিমত টক্কর দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। উত্তরবঙ্গে রীতিমত ধস নেমেছিল তৃণমূলের। বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আর তৃণমূলের দখলে ২২টি। লোকসভা নির্বাচনের এই ধাক্কা সামলাতে দ্রুত ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নিয়োগ করেছিলেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে।
তারপরই মোড়ঘুরতে থাকে রাজ্য রাজনীতির। সেই সময় কাটমানিসহ একাধিক দুর্ণীতির অভিযোগ সামনে আসে। সেই সময়ই সামনে থেকে মোকাবিলা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই প্রশান্ত কিশোরের হাত ধরে শুরু হয়ে একগুচ্ছ নতুন কর্মসূচি ও প্রচার অভিযান। দার্জিলিং থেকে দিঘা চষে ফেলে দলের নেতা কর্মীদের বুস্টআপ করেন মমতা। একের পর এক জনসভায় বাম কংগ্রেসের পাশাপাশি বিদ্ধ করেন বিজেপিকেও। সেই সময় থেকেই তিনি নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকেও নিশানা করতে থাকেন। অন্যদিকে বিজেপিও বাংলা জয়ের লক্ষ্যে বিশেষ নজর দিতে থাকে এই রাজ্যে। জাতীয় স্তরের নেতা মন্ত্রীদের এই রাজ্য সফরও ছিল চোখে পড়ার মত। তুলনায় কিছুটা হলেও মৃয়মান হয়ে যায় বাম ও কংগ্রেস। ভোটের আগে থেকেই বিজেপি নজরে এই রাজ্যের বিরোধী দল হিসেবে দাবি করতে থাকে। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোনও দিনই বিজেপির সেই দাবিকে তেমন মান্যতা দেওয়া হয়নি।
যাইহোক, ২০২১ এর নির্বাচনের আগেই বিজেপি উত্থান ছিল চোখে পড়ার মত। অন্যদিরে ঘর ভাঙতে শুরু করে তৃণমূলের। একের এপর এক তৃণমূল নেতা ঘাসফুল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে গিয়ে নাম লেখাতে শুরু করেন। তাঁরাই পাল্টা নিশানা করতে থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়য়ে। কিন্তু জয়ের বিষয়ে আশাবাদী মমতা দলীয় এক্য বজায় রাখার বিষয়ে তারপরেও যত্মশীল ছিলেন। কিন্তু তিনি সবথেকে বড় ধাক্কা খান নন্দীগ্রামে তাঁর দলীয় সহকর্মী শুভেন্দু অধীকারির কাছ থেকে।
ভোটের আগেই শুভেন্দু দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। সেই সময়ই তিনি ঘোষণা করেন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাবেন। মমতা নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার পর শুভেন্দুও সেখানে প্রার্থী হন। ভবানীপুরের মত নিরাপদ আসন ছেড়ে মমতা কেন নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছিলেন তা অবশ্য এখনও রহস্যে মোড়া। তাঁর ঘনিষ্টরা বলেন দলের প্রার্থীদের মনবল বাড়াতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই কারণে একই সঙ্গে দুটি আসনে তিনি লড়াইও করেননি। যাইহোক নন্দীগ্রামের ভোটের রায় শুভেন্দুর পক্ষে যায়। তাই নিয়ে মামলা মকোদ্দমাও হয়। নন্দীগ্রামে ভোটে হারার জন্য মমতাকে তাঁরই মন্ত্রিসভার প্রাক্তনের কাথ থেকে 'নন এমএলএ মুখ্যমন্ত্রী'র মত তীর্যক মন্তব্যও শুনতে হয়েছে।
রাজ্য বিধানসভার ভোট নিয়ে বিজেপির অভিযোগ থাকলেও শেষ হাসি কিন্ত হেসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় স্তরে দলের শক্তিবৃদ্ধি করতে মরিয়া প্রচেষ্টা শুরু করেন। তিনি ত্রিপুরা, মেঘালয়, গোয়ার মত রাজ্যগুলিতে এখনও পর্যন্ত পা রাখতে শুরু করেছেন। দিল্লি সফরে গিয়ে তিনি দাবি করেছেন বিজেপি হারানোর জন্য বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে সবরকম সহযোগিতা করতে তিনি রাজি। রাজ্য বিধানসভা ভোটে জেতার পরই তিনি দাবি করেন বিজেপিকেও হারানো যায়। বিজেপি অজেয় নয়। সেই বার্তা নিয়েই তাঁর দূত হয়ে প্রশান্ত কিশোর প্রথম সাক্ষাৎ করেন শরদ পাওয়ারের সঙ্গে। বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনতে শরদ পাওয়ারের মত বর্ষিয়ান নেতাকেই মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাজ্য জয়ের পর মমতা দুবার দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন। প্রথমবার তিনি দেখা করেছিলেন মমতা ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে। কিন্তু দ্বিতীয় বার মমতা গান্ধী পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে দেখা করেননি। দ্বিতীয় সফরের সময় থেকেই মমতা মুখে কিছু না বললেও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তাঁর কংগ্রেসের থেকে দূরত্বের কথা।
কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হয় তৃণমূলের ছন্দপতন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূল বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসকেও নিশানা করতে শুরু করেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে জাতীয় ক্ষেত্রে মমতা মোদী বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে ওঠার। যদিও সে সম্পর্কে মমতা বা তাঁর দল কিছুই জানায়নি। তবে তিনি সম্প্রতী মুম্বই সফরে দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-র কোনও অস্তিত্ব। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কেন তিনি গোয়া, ত্রিপুরা ও মেঘালয়তে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তিনি বলেছেন কংগ্রেস যদি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে তাহলে তিনি কেন তা পারবেন না । যাইহোক গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়- তিনটি রাজ্যেই কংগ্রেসকে ভেঙেই মূল শক্তি অর্জন করেছেন মমতা। পাশাপাশি হরিয়ানাতেও কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতাই অক্সিজেন দিচ্ছে তৃণমূলকে।
ত্রিপুরাতে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সমুখ সরমে লড়াই করে তৃণমূল। পুরসভা নির্বাচনে বামেদের বড়রকমের ধাক্কায় দিয়েছে তৃণমূল। পাশাপাশি বিজেপিরও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের উত্থান। অন্যদিকে মেঘালয়তে রাতারাতি তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান বিরোধীদলের তকমা কেড়ে নিয়েছে কংগ্রেসের কাছ থেকে। সেখানে মুকুল সাংমার নেতৃত্বে কংগ্রেসের একাধিক বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেন। বর্তমানে মেঘালয় বিধানসভায় কংগ্রেসের মাত্র ২ সদস্য রয়েছে। অন্যদিকে গোয়াতেও কংগ্রেস ছেড়ে আসা নেতা কর্মী ও বিধায়করাই শক্তি যোগাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। যা নিয়ে বর্তমানে কংগ্রেসও খোঁচা দিতে শুরু করেছে তৃণমূলকে।
যাইহোক রাজ্যে বা রাজ্যের বাইরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তিনি স্পষ্ট বলেছেন তিনি একাই মোদীর বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কংগ্রেস তেমনভাবে মোদী বিরোধিতা করছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিকবার সরব হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশানা করেছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদরাও একাধিকবার সরব হয়েছেন সংসদে। রাজ্যসভা থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরেও তৃণমূল সাংসদরা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর নরম করেনি।
Roundup 2021: বড় চমক টমেটোর দামে, পেট্রোলের দামকে হার মানিয়েছিল এই সবজি
Roundup 2021: বছরভর কৃষি আন্দোলনের উত্থান-পতন, কীভাবে জয় পেলেন কৃষকরা
Roundup 2021: করোনার বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে মাইলস্টোন, শুরু হয়েছিল গণ টিকাকরণ
CBIC Raid: বাড়ি ঠাসা রয়েছে কোটি কোটি টাকা, আলমারি খুলে চোখ কপালে উঠল তদন্তকারীদের