সংক্ষিপ্ত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশ জুড়ে টিকা দান উৎসব শুরু হয়েছিল। দেশবাসীকে করোনা মোকাবিলার নয়া অস্ত্র সেদিন হাতে তুলে দিয়েছিল কেন্দ্র।  

করোনার বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই এক নতুন দিশা পেয়েছিল সেদিন। ২০২১ সালের ১৬ই জানুয়ারি (16th January, 2021)। দেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল গণ টিকাকরণ (Mass Vaccination)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (PM Narendra Modi) নেতৃত্বে দেশ জুড়ে টিকা দান (Pan India Vaccination) উৎসব শুরু হয়েছিল। দেশবাসীকে করোনা মোকাবিলার নয়া অস্ত্র সেদিন হাতে তুলে দিয়েছিল কেন্দ্র। লকডাউনের কাঁটাতার, মাস্ক-শারীরিক দূরত্বের একাধিক নিয়ম পেরিয়ে সেদিন করোনা মোকাবিলায় ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আমআদমি। 

১৬ই জানুয়ারি, ২০২১

কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় সকাল ১০ টায় শুরু হবে এই কোভিড ভ্যাকসিনেশন ড্রাইভ। যারা টিকা নেবেন, তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ে সেন্টারে আসতে হবে। তারপর সবার প্রথমে স্যানিটাইজেশন পর্ব। এরপর একে একে তালিকা অনুযায়ী তাঁরা প্রথমে যাবেন ভ্যাকসিনেশন অফিসার ওয়ানের কাছে। সেখানে পেপার ওয়ার্ক শেষ করে তাঁরা যাবেন ভ্যাকসিনেশন অফিসার টুয়ের কাছে। সেখানে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। কো-উইন অ্যাপে তথ্য দেওয়া সম্পূর্ণ করা হবে। এরপর তাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এরপর অবসার্ভেশন রুমে ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তিকে ৩০ মিনিটে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কোনওরকম শারীরিক সমস্যা না দেখা দিলে, তাঁদের বাড়ি ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে।

ভারতের কোভিড-১৯ টিকাকরণ অভিযানের প্রথমদিনই ভ্যাকসিন পান ১,৯১,১৮১ জন। প্রথমে জানানো হয়, টিকা নিয়েছেন ১,৬৫,৭৫৫ জন। পরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে তা সংশোধন করা হয়। তবে এদিন সরকারের লক্ষ্য ছিল ৩ লক্ষেরও বেশি লোককে টিকা দেওয়া। এদিন দেশের ৩৩৫১ টি কেন্দ্রে টিকাদান করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, অসম, বিহার, হরিয়ানা, কর্ণাটক, ওড়িশা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরপ্রদেশ - এই ১১ টি রাজ্যে সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের কোভাক্সিন দুই টিকাই ব্যবহার করা হয়।

১লা মার্চ, ২০২১

শুরু হয় করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকাকরণ। সেই ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক নাগরিকরা। একই সঙ্গে সেই সময় টিকা দেওয়া হয় দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ থাকা ৪৫ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকদের। তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানান, সরকারি হাসপাতাল ও টিকা করণ কেন্দ্রে টিকা দানের পাশাপাশি এবার থেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও কেন্দ্রেও টাকা দিয়ে টিকা কিনতে পারবেন সাধারণ মানুষ। জানানো হয়, গোটা দেশে ১০ হাজারেরও বেশি সরকারি এবং ২০ হাজারেরও বেশি বেসরকারি কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান সরকার পরিচালিত কেন্দ্রগুলিতে বিনামূল্য টিকা প্রদান করা হবে। তবে বেসরকারি ক্ষেত্রে কত টাকার বিনিয়ন টিকা দেওয়া হবে তা নিয়ে কিছুই জানাননি প্রকাশ জাভড়েকর। সূত্রের খবর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আগেই কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল  টিকাকরণের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রেও সেই নিয়ম অপরিবর্তিত থাকবে। 

৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ 

কেন্দ্র সরকার জানায়, অগাষ্ট মাসে যত পরিমাণ টিকাকরণ হয়েছে, তা জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিতে দেওয়া মোট টিকার তুলনায় বেশি। যা দেশের করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিঃসন্দেহে এক মাইলস্টোন। কেন্দ্র জানিয়েছে গত মাসে অর্থাৎ অগাষ্টে দেশে ১৮০ মিলিয়নেরও বেশি ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়া হয়েছে। সেখানে জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশে মোট ১০১ মিলিয়ন ডোজ দেওয়া হয়েছে। এই তথ্য শেয়ার করে কেন্দ্রের বার্তা করোনা ভাইরাসের টিকাকরণে আরেকটি সাফল্য। ১৮০ মিলিয়ন ডোজ দিয়ে বিশ্ব টিকাকরণ মানচিত্রে উজ্জ্বল ছবি তুলে ধরেছে ভারত। 

২১শে অক্টোবর, ২০২১

করোনা টিকাকরণে (Covid-19 Vaccination) ইতিহাস গড়ল ভারত। বৃহস্পতিবার করোনা টিকাকরণে ১০০ কোটির (100 Crore vaccination) মাইলফলক ছুঁল দেশ। করোনা মোকাবিলায় দ্রুত টিকাকরণ ছিল এক এবং অন্যতম উপায়। বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসাবে দেশের ১০০ কোটি মানুষ টিকা দেওয়ার ক্ষমতা রেখে বিশ্ব রেকর্ড গড়ল ভারত। এর আগে জুন মাসে এই মাইলফলক (Milestone) পেরিয়ে ছিল চিন। 

গর্বের এই মুহূর্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) টুইট করে লেখেন "ভারত একটি ইতিহাস রচনা করল। দেশের বিজ্ঞানের জয় দেখলাম আমরা। ১৩০ কোটি দেশবাসীর একতার সাক্ষী থাকলাম আমরা। ১০০ কোটি টিকাকরণ সম্পূর্ণ হল দেশে। এই জয়ে পৌঁছানোর নেপথ্যে থাকা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ এই কর্মযজ্ঞে সামিল সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন।" উল্লেখ্য শুধু ভারতে নয় দুঃসময়ে এবং প্রয়োজনে বাইরের দেশেও টিকা পাঠিয়েছে ভারত।

৫ই ডিসেম্বর, ২০২১

কোভিড টিকাকরণের (COVID-19 Vaccination) ক্ষেত্রে আরও এক বড় মাইলফলক অতিক্রম করল ভারত। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে টিকার সম্পূর্ণ ডোজ পেয়ে গেলেন, দেশের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ। এদিন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্য (Mansukh Mandaviya) জানান, ভারতে দৈনিক টিকাকরণের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এদিন সকালের মধ্যে ১২৭.৬১ কোটিরও বেশি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হয়েছে আমাদের দেশে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, ভারতে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মোট ৮৪.৮ শতাংশেরও বেশি মানুষকে করোনাভাইরাস টিকার (Coronvirus Vaccine) প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ১,০৪,১৮,৭০৭ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে মোট ১২৭.৬১ কোটিরও বেশি (১,২৭,৬১,৮৩,০৬৫) ডোজ টিকা দেওয়া হয়। 

বিনামূল্যে COVID-19 টিকা :

দ্বিতীয় কোভিড-১৯ ওয়েভে কার্যত বিধ্বস্ত হয় ভারত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকলের জন্য টিকাকরণ অভিযান শুরু করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (UTs) ভ্যাকসিনের ঘাটতির কারণে টিকাদান অভিযান বন্ধ করে দেয়। ফলে বিতর্ক শুরু হয়।

রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি এরপর ভ্যাকসিন ঘাটতির জন্য কেন্দ্র সরকারকে দায়ি করতে থাকে। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে কেন্দ্রের মোদী সরকার। এরপরেই আসে সেই সিদ্ধান্ত। ৭ই জুন প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেন যে কেন্দ্র ২১শে জুন থেকে সকলকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন যে কেন্দ্র ৭৫ শতাংশ ভ্যাকসিন নির্মাতাদের কাছ থেকে কিনবে এবং রাজ্য সরকারগুলিকে বিনামূল্যে দেবে। 

এখনও পর্যন্ত ভারতে ছটি ভ্যাকসিন ডিসিজিআই-এর অনুমোদন পেয়েছে, যেগুলি জরুরি অবস্থার প্রেক্ষিতে টিকার অনুমোদন বলে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে Covaxin এবং ZyCoV-D উভয়ই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি টিকা ও বাকি চারটি (Covishield, Sputnik V, Moderna এবং Johnson & Johnson) বিদেশী টিকা। Covaxin এবং Covishield, DCGI কর্তৃক অনুমোদিত প্রথম দুটি টিকা, সর্বশেষ অনুমোদন পেয়েছে ZyCoV-D। দেশের করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিঃসন্দেহে এক মাইলস্টোন।