ভারত ও সারা বিশ্বের জন্য তাবলিগী জামাত (Tablighi Jamaat) সংগঠন হুমকি তৈরি করছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এই সংগঠন ধীরে ধীরে আদর্শ জিহাদি সংগঠন হয়ে উঠছে।
দেশ নির্বিশেষে সুন্নিবাদী ইসলামী মিশনারী আন্দোলন, তাবলিগী জামাত (Tablighi Jamaat) ভারত এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকির। সংগঠনটি জিহাদি মতাদর্শী আবু মুসাব আল-সুরির (Abu Musab al-Suri) অনুসরণকারী এবং এর লক্ষ্য একটি বিশ্বজুড়ে একটি আদর্শ জিহাদি নেটওয়ার্ক (Ideal Global Jihadi Network) হিসাবে আত্মপ্রকাশ করা। বুধবার, ভারতের এক শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা সূত্রকে (Intelligence Sources) উদ্ধৃত করে এমনটাই দাবি করা হয়েছে সিএনএন-নিউজ১৮'এর এক প্রতিবেদনে। কেন এমন মনে করছেন গোয়েন্দারা? আসুন জেনে নেওয়া যাক -
তাবলিগী জামাত কী?
তাবলিগী জামাত হল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা একটি নেতৃত্বহীন, স্বায়ত্তশাসিত আন্দোলন, যাদের এক ও একমাত্র লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ফলে, এখন গোটা বিশ্বেই আল-কায়েদা (al-Qaeda) এবং আইএসআইএস-এর (ISIS) মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির প্রভাব এবং শক্তি কমে গিয়েছে। কিন্তু, তাবলিগী জামাতের এতে করে বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়নি। গোয়েন্দাদের দাবি, এই সংস্থাটি এখনও আইএসআইএস-এর মতো জিহাদি গোষ্ঠীগুলির জন্য গোটা বিশ্বের সদস্য সংগ্রহের কাজ করে চলেছে। ফিলিপাইন্স (Philippines), মারাউই-এর (Marawi) মতো রাষ্ট্রে, সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালাতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে সাহায্য করছে। অন্যান্য সালাফিস্ট সংগঠনের (Salafist Organisations) সঙ্গে যোগসাজশে, ২০০ টিরও বেশি দেশে অবাধে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তবে, রাশিয়া, সৌদি আরব-সহ বেশ কয়েকটি দেশ, এই গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
তাবলিগী জামাতের গঠন
তাবলিগী জামাতের সবথেকে বড় সুবিধা হল, এই সংগঠন ইসলামী বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকলেও, এটি মূলত ছোটমাপের স্বায়ত্তশাসিত শাখা নিয়ে গঠিত। এই শাখাগুলির একে অপরের সাথে সামান্যই যোগাযোগ থাকে এবং তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতি একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ, যে কাঠামোহীন আদর্শ জিহাদি গোষ্ঠীর কথা বলেছিলেন আল-সুরি, তার সঙ্গে তাবলিগী জামাতের খুবই মিল রয়েছে। মাদ্রাসাগুলির সঙ্গে সম্পর্ক, আত্মীয়তা এবং লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে তাবলিগী জামাতের একটি অনানুষ্ঠানিক কাঠামো রয়েছে। কোনও মসজিদ এবং মাদ্রাসা বা মার্কাজকে কেন্দ্র করে একেকটি শাখা গড়ে ওঠে। সেগুলির নেতৃত্বে থাকেন একজন করে আমির বা নেতা। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সেই নেতা নির্বাচিত হন। এই শাখাগুলি একটি নির্দিষ্ট এলাকা, শহর বা গ্রামের অন্যান্য মসজিদ এবং মাদ্রাসার কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধান করে। শাখার নেতারা প্রতি বৃহস্পতিবার করে মিলিত হতে হন। সেখানে প্রবীণদের নিয়ে গঠিত শুরায় শাখার কর্মসূচি এবং কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। সেখান থেকে তথ্য পৌঁছে দেওয়া হয় তাবলিগীর সদর দফতরে।
এই কাঠামোর সুবিধা
গোয়েন্দা কর্তাদের দাবি, এই ধরনের সাংগঠনিক কাঠামোর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এতে করে কোনো সদস্যকে খুঁজে বের করা কঠিন। সংগঠনের গোপনীয়তা বজায় রাখা সহজ হয়। বিভিন্ন তাবলিগী কেন্দ্রের প্রতিটি জামাতে দর্শকদের মধ্যে জঙ্গিরা লুকিয়ে থাকলেও, তার খবর পাওয়া যায় না। আর এই কাটামোগত সুবিধা নিয়েই গোটা বিশ্বে তাবলিহী জামাত, বিভিন্ন জঙ্গি ও চরমপন্থী গোষ্ঠীকে গোপনে সহায়তা করে যেতে পারে। এর জোরেই, অতীতে এই সংগঠন বহু দেশে তাদের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ যেভাবে হিংসা, দারিদ্র্য এবং বাস্তুচ্যুত হওয়ার ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন, তাতে এই ধরনের কাঠামো আগামী দিনেও তাবলিগীর বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে, আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতের জন্য কতটা ভয়ের
ভারতেও, তাবলিগী জামাতের জোরালো উপস্থিতি রয়েছে। সব মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা কয়েক লক্ষ। ভোপালে (Bhopal) প্রতি বছর যে সমায়েত হয়, তাতে কমপক্ষে ১০ লক্ষ মানুষ অংশ নেন। দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজ (Nizamuddin Markaz, Delhi) থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বহু সংখ্যক কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে সবথেকে আশঙ্কার হল, তাবলিগীর নেতৃত্ব ভাগ হয়ে যাওয়ার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র এখন নিয়ন্ত্রণ করে পাকিস্তান (Pakistan) প্রভাবিত রাইওয়াইন্দ মার্কাজ (Raiwind markaz)। এর আগেও ভারতে মৌলবাদ, জিহাদি নিয়োগ এবং হিংসার বিভিন্ন ঘটনায় তাবলিগী যোগ পাওয়া গিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি গোটা বিশ্বেই জিহাদের পরবর্তী তরঙ্গ আসতে পারে তাবলিগী জামাতের হাত ধরেই। অদূর ভবিষ্যতে কিন্তু এই সংগঠন তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ঝাঁপাবে। তবে, তারা সরাসরি জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়াবে, নাকি ছদ্ম সংগঠন হিসাবেই কাজ করে যাবে, এই প্রশ্নের উত্তর এখনও জানা নেই গোয়েন্দাদের।