কানপুরের পুলিশ খুনি বিকাশ দুবে গুলি করে হত্যা করেছিল মন্ত্রীকেও, গ্যাংস্টারের নামে রয়েছে ৬০টি মামলা

  • ছাদ থেকে গুলি চালিয়ে ৮ পুলিশকর্মীকে খুন গ্যাংস্টারের
  • এই ঘটনা ঘিরে এখন উত্তাল গোটা উত্তরপ্রদেশ
  • গত ২০ বছর ধরে একের পর এক অপরাধ করে গেছে বিকাশ দুবে
  • এক সময় রাজনীতিতেও নাম লিখিয়েছিল এই কুখ্যাত দুষ্কৃতি

Asianet News Bangla | Published : Jul 3, 2020 11:10 AM IST / Updated: Jul 03 2020, 04:57 PM IST

শুক্রবার সকালে কানপুরের চৌবেপুর থানা এলাকার ডিক্রু গ্রামের ঘটনা চমকে দিয়েছে সকলকে। একেবারে সিনেমার কায়দায় পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতী দল। যাতে বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে খোদ ডিএসপি সহ ৮ পুলিশকর্মীর। এই ঘটনা নিয়েই এখন সরগরম উত্তরপ্রদেশ। আর গায়ের লোক খারা করে দেওয়া এই হত্যাকাণ্ডে উঠে এসেছে উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিকাশ দুবের নাম। যার নামে রয়েছে ৬০টিরও বেশি মামলা। এমনকি থানায় ঢুকে মন্ত্রীকে গুলি করে খুন করার অভিযোগও রয়েছে কানপুরের ডন বিকাশের বিরুদ্ধে।

উত্তরপ্রদেশের মাফিয়ারাজে বিকাশ দুবে অন্যতম নাম। জানা যায়, ১৯৯০ থেকে অপরাধে হাতেখড়ি বিকাশের। গত ২০ বছর ধরে একের পর এক অপরাধের সিঁড়ি চড়েই যোগীরাজ্যে বিকাশ হয়ে উঠেছে গ্যাংস্টার। এই মুহূর্তে ৬০ টির বেশি মামলা তার মাথার ওপর রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে একাধিক খুনের মামলাও। রয়েছে অপহরণ, ডাকাতির মতো অভিযোগও। এমনকি খুনের দায়ে জেল খাটতেও হয়েছে বিকাশকে। শোনা যায়, অপরাধ থেকে সরে একসময় রাজনীতিতেও নাম লেখানোর চেষ্টা করেছিল এই ডন। তাই এলাকার পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিল বিকাশ দুবে।

ঠান্ডা মাথার খুনি বিকাশ। ২০০০ সালে তারাচাঁদ ইন্টার কলেজের প্রিন্সিপাল সিদ্ধেশ্বর পাণ্ডেকে খুন করে সে। ২০০১-এ তার বিরুদ্ধে সন্তোষ শুক্ল নামে এক বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রীকে খুনের অভিযোগ ওঠে। সে খুনের ঘটনাও ছিল রোমহর্ষক। সন্তোষকে তাড়া করেছিল বিকাশ। প্রাণভয়ে সন্তোষ আশ্রয় নেন শিবলি থানায়। কিন্তু তাতেও রেহাই মেলেনি। থানায় ঢুকে সন্তোষকে গুলি করে খুন করে বিকাশ। ওই হামলায় দুই পুলিশ কর্মীরও মৃত্যু হয়। এই হাই প্রোফাইল খুনের পর থেকেই অপরাধ জগতে বিকাশের রমরমা বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন হয় যে বিকাশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে সাহস পাননি কেউই।  বিকাশ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। প্রকাশ্যে থানার মধ্যে খুন করেও প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় সে। জানা গিয়েছে, সেই সময় জনতা দলের বিধায়ক হরিকিষণ শ্রীবাস্তবের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল বিকাশ। হরিকিষণের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপি নেতা সন্তোষ শুক্ল।

আরও পড়ুন: যোগীরাজ্যে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ, প্রাণ গেল ডিএসপি সহ ৮ পুলিশকর্মীর

 ২০১৮ সালে মাটি জেল থেকে নিজের তুতো ভাই অনুরাগকে খুনের পরিকল্পনা করে বিকাশ। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি সাধারণ ব্যবসায়ীও। ২০০৪ সালে দীনেশ দুবে নামে এক কেবল টিভি-র ব্যবসায়ীকে খুন করে সে।

আরও পড়ুন: কানপুরের এনকাউন্টার হার মানাবে বলিউডি সিনেমাকেও, ডনের নির্ভুল নিশানায় ছত্রভঙ্গ খাকি উর্দি

এহেন বিকাশ ২০০২ সালে মায়াবতী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বহুজন সমাজ পার্টিতে যোগ দেয়। তার নেতৃত্বেই কানপুরের বিলহারম, শিবরাজপুরী, রানিয়ার মতো এলাকা হয়ে উঠেছিল অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল। তৎকালীন শাসকদলেরও প্রয়োজন ছিল এমনই এক বাহুবলির। জেলে বসেই শিবরাজপুরী এলাকা থেকে পঞ্চায়েত ভোটে জেতে বিকাশ।

সম্প্রতি একটি খুনের মামলায় পুলিশ বিকাশ দুবেকে খুঁজছিল।  রাহুল তিওয়ারি নামে একজনকে খুন করার চেষ্টা করছে বিকাশ, এমন অভিযোগই জাম পড়েছিল পুলিশের কাছে। আর সেই অভিযোগের জেরেই বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অভিযানে নেমেছিল কানপুর পুলিশ। যাত প্রাণ হারাতে হল ডিএসপি সহ  ৮ জন পুলিশকে।

কানপুরে দেহাত এলাকার যেখানে বিকাশ দুবে থাকে, সেই গ্রামের যুব সম্প্রদায় কার্যত এই ডনের অঙ্গুলি হেলানোতেই কাজ করে। ফলে বিকাশের ডেরায় গিয়ে তাকে ধরে আনা পুলিশের পক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরেও বিকাশ দুবেকে ধরতে পুলিশের তরফে ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। তবে তাতেও খুব একটা সুবিধে করতে উঠতে পারেনি পুলিশ। উল্টে প্রাণ গেল পুলিশেরই। আর  শুক্রবার ভোরের এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড যোগীর রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিল।

Share this article
click me!